ঢাল ধরে নিচে নেমে শহরে ঢুকলাম, এগোলাম পালের দিকে। কৌতূহলী লোকজন আমাদের পিছু নিয়েছে। রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে অনেকেই।
একটা ব্যাপার খোলসা করা উচিত, বন্ধুদের বললাম। এটা আমার লড়াই। অন্য কেউ যদি উৎসাহী হয়, আপত্তি নেই, যা ইচ্ছে করতে পারো তোমরা…কিন্তু কথাবার্তা আমিই বলব। জাপাটার সঙ্গে ফয়সালা করব আমি একা। সমানে-সমানে।
না বোঝার কিছু নেই। আমার কাজের ব্যাপারে যাতে কোন সন্দেহ থাকে, সেজন্যেই বলা।
ফেলিপ জাপাটা আছে ওখানে। সঙ্গের লোকটাকে দেখে ভেতরটা শীতল হয়ে গেল আমার। ট্যাপ এঙলে। সঙ্গে হোনাস গান্টও রয়েছে। বোঝা গেল সেদিনের কথাগুলো কোন কাজেই আসেনি।
আট বা নয়জন ওরা। চার-পাঁচজন সৈন্য গরুর পাল জরিপ করছে।
সৈন্যদের দিকে এগোনোর সময় হঠাৎ গান্টকে কথা বলতে দেখতে পেলাম। ঝট করে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়াল জাপাটা।
জাপাটা বা গান্টের ওপর থেকে চোখ সরালাম না। ক্যাপ্টেন, সামনের দীর্ঘদেহী সৈন্যের উদ্দেশ্যে বললাম। এগুলো চুরির মাল। আমার কাছ থেকে চুরি করেছে ওরা। পরে মার্কা পরিবর্তন করেছে, কিন্তু যে-কোন একটা গরুর চামড়া ছিললে ভেতরে টি-বার ব্র্যান্ড দেখতে পাবে।
গরু কিনছি আমি, মিস্টার, বিরক্ত স্বরে বলল ক্যাপ্টেন, প্রায় শীতল শোনাল কণ্ঠ। এ নিয়ে লড়াই করার খায়েশ নেই আমার, কিংবা গরুর মালিকানা নিষ্পত্তি করার দায়িত্বও দেয়া হয়নি আমাকে। ঘোড়া ঘুরিয়ে নিল সে। তোমরা নিজেরাই ঠিক করে নাও। লাস পাসিটাসে পাবে আমাকে।
ঘোড়া ঘুরিয়ে এগোল সে। কয়েকজন অফিসার আর সার্জেন্ট অনুসরণ করল।
প্রত্যেকটা লোককে খুঁটিয়ে দেখলাম-একজন একজন করে। প্রত্যেকের প্রতি মনোযোগ দিলাম, অন্তত মিনিট খানেকের জন্যে। আমি চাই প্রতিটা লোক ভাবুক তাকেই গুরুত্বপূর্ণ বা টার্গেট হিসেবে বিবেচনা করছি আমি।
তো, জাপাটা, গরুর পাল ডেলিভারি দাওনি তুমি। বাধ্য হয়ে আমার নিজেরই আসতে হলো।
ড্যান…!ট্যাপের কণ্ঠ। ড্যান, খোদার দোহাই!
ট্যাপ, গোলাগুলি শুরু হওয়ার আগেই বরং ঠিক করে নাও কোন পক্ষে থাকবে, নির্লিপ্ত স্বরে বললাম ওকে। বেড়া ডিঙাতে গেলে হুমড়ি খেয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে। বহুদিন ধরেই ওই কাজটা করছ তুমি। যথেষ্ট হয়েছে বোধহয়।
দেখো, আগে তো…
কিসের দেখাদেখি, এডলে!? হঠাৎ খেপে উঠল হোনাস গান্ট। হয় আমাদের সঙ্গে থাকবে, নয়তো বিপক্ষে! সরে দাঁড়াও, দেখো কিভাবে খুন করি ট্রেভেন হারামজাদাকে!
আমি যা করলাম, ঘুণাক্ষরেও এমন কিছু আশা করেনি ওরা। বহু বছর ধরেই ছোটার মধ্যে গুলি করার অনুশীলন করেছি আমি আর ট্যাপ, তুমুল গতিতে ঘোড়া ছুটিয়ে অনায়াসে লক্ষ্যভেদ করেছি, পাহাড়ী মানুষদের মত ঈর্ষণীয় দক্ষতা অর্জন করেছি। স্পার দাবাতে লাফিয়ে এগোল ডানটা, ঠিক ওদের ওপর হামলে পড়ল।
সংখ্যায় বেশি ওরা, সুতরাং গুলিও শুরু করলাম।
দেখে মনে হবে হঠকারি এবং দারুণ বিপজ্জনক একটা কৌশল, কিন্তু আসলে তা নয়। আমরা যখন এসেছি, বেশিরভাগই বসে ছিল ওরা, নিঃসন্দেহে সবাই একজন করে টার্গেটও ঠিক করে নিয়েছিল। পরিস্থিতি ঠিকই বিচার করেছে ওরা, আমাদের মতই, জানে মুহূর্তের ব্যবধানে কয়েকটা লাশ পড়ে যাবে এখানে।
কিন্তু ভাবেনি নিজেদের লাশ পড়বে।
ঠাণ্ডা মাথায়, নিশানা করে লড়াই শুরু করলে হয়তো সঠিক নিশানায় গুলি করা যাবে, কিন্তু শেষপর্যন্ত হেরে যাব আমরা। সুতরাং সরাসরি ঘোড়া নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম ওদের ওপর। সব ক’জনকে নড়ে উঠতে বাধ্য করলাম, যার যার টার্গেটকে নিশানায় আনতে সরে যেতে হলো ওদের।
স্যাভলের ওপর আড়াআড়ি ভাবে পড়ে আছে প্যাটার্সনটা। লাফের সঙ্গে সঙ্গে গুলি করলাম। জাপাটাকে অল্পের জন্যে মিস্ করলাম। কিন্তু ওর পেছনের লোকটা হড়কে পড়ল স্যাডল থেকে। পরমুহূর্তে ওদের ঠিক মাঝখানে আবিষ্কার করলাম নিজেকে। আরেকটা গুলি করলাম প্যাটার্সন থেকে, তারপরই রাইফেল ছেড়ে দিলাম মুঠি থেকে। অল্প দূরত্বে ওটা দিয়ে সুবিধে করা যাবে না। ভোজবাজির মত বাম হাতে উঠে এসেছে বেল্টের পেছনে গুঁজে রাখা কোল্টটা, রাইফেল ছেড়ে দেয়ার সময় ড্র করেছি।
ঘুরে দাঁড়াল জাপাটা, প্রায় আমার মুখের সামনে গর্জে উঠল ওর পিস্তল। ডানের ধাক্কায় কেঁপে উঠল ওর ঘোড়া, স্যাডলে জাপান্টার শরীর টলে গেল। ইতোমধ্যে গুলি করেছি আমি। চাবুকের বাড়ি খেয়েছে যেন, এমন ভাবে স্যাডলে হেলে পড়ল ওর দেহ। ফের গুলি করল সে, কিন্তু ততক্ষণে ওকে পাশ কাটিয়ে চলে এসেছি।
ঘোড়া ঘোরাল সে, কিন্তু ওর ঘোড়াটা বিস্ময়ের কারণেই দ্রুততায় হেরে গেল ডানের সঙ্গে। সামান্য হেরফের হলো বটে, দুজনেই গুলি করলাম আমরা। ফেলিপ জাপাটার নাকের ঠিক নিচে বিঁধল আমার এবারের বুলেট।
ঘুরে গেল জাপাটার দেহ, স্যাডল থেকে খসে পড়ল। প্রায় শেষ মুহূর্তে স্টিরাপ থেকে পা মুক্ত করে নিয়েছে। উঠে দাঁড়ানোর প্রয়াস পেল সে, মুঠিতে পিস্তল ধরে রেখেছে, গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে বুলেটের ফুটো দিয়ে।
তুফান বেগে ছুটল ডানটা, খানিক নিচু করলাম পিস্তলটা, একেবারে কাছ থেকে গুলি করলাম। গুলির তুবড়িতে জাপাটার শার্ট থেকে ধুলো চটকে উঠতে দেখতে পেলাম-দু’বার; তারপরই পড়ে গেল সে। ডানটা মাড়িয়ে গেল ওকে।