ভেতরটা বেশ ঠাণ্ডা। শান্ত। টেবিলে হ্যাট রেখে দীর্ঘ বাদামী চুলে আঙুল চালাল কার্ল, মেয়েদের মতই লম্বা চুল ওর। আকর্ষণীয়। গোঁফে তা দেয়ার ফাঁকে, নীরবে ওকে দেখছে স্যাম গার্ট।
অপেক্ষা করার গভীরে এক ধরনের শান্ত স্থৈর্য রয়েছে আমাদের মধ্যে। প্রত্যেকেই জানি নিকট ভবিষ্যৎ কি রয়েছে, কিংবা সকোরো পেরিয়ে পশ্চিমে, যাওয়ার সময় কি ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। প্রথমে অ্যাপাচীদের এলাকা, তারপর কোমাঞ্চি অঞ্চল-রাইডার হিসেবে দুর্ধর্ষ ওরা, দুর্দান্ত লড়য়ে। অসংখ্য শত্রুকে পেছনে ফেলে যেতে হবে। মাত্র গুটিকয়েক লোক আমরা। কিন্তু এটা আমাদের কর্তব্য, পিছিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে কারও নেই।
ওয়াইনটা ভাল। কিছুক্ষণ পর ক্যান্টিনার মালিক ফ্রিগোল পরিবেশন করল। টরটিয়া আর মশলাদার ডিমও রয়েছে মেনুতে।
ক্যান্টিনায় ঢুকল জুয়ারেজ। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকল সে, ভেতরের অপেক্ষাকৃত স্নান আলোয় চোখ সয়ে আসার পর টেবিলে এসে বসল। ঝুঁকে এল সে, চোখ দারুণ উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। বন্ধুদের কাছ থেকে জবর একটা খবর পেয়েছি!
অপেক্ষায় থাকলাম আমরা। সিগারেটো বের করে দুই ঠোঁটের সঙ্গে, চেপে ধরল জুয়ারেজ।
পেলো টিউটে যেতে হবে না আমাদের…টুলারোসায় আছে জাপাটা।
এখান থেকে পুবে শহরটা, তাই না? জানতে চাইল স্যাম।
খুব ছোট জায়গা। অ্যাপাচীরা ঘনঘন আক্রমণ করে বলে বেড়ে ওঠেনি। লাস প্লাসিটাস নামে একটা জায়গা আছে কাছাকাছি। পাশে ফোর্ট স্টান্টন, সৈন্যরা আছে ওখানে। সিগারেটো ধরাল সে। শুনলাম সৈন্যদের কাছে বিক্রি করার জন্যে গরুর পাল, ওখানে নিয়ে গেছে জাপাটা।
জানতাম না ফোর্ট আছে ওখানে, বলল মিলো ডজ। স্টান্টন, তাই তো বুললে? কয়েক বছর আগে স্টান্টন নামে এক ক্যাপ্টেন মারা গিয়েছিল ওখানে।
সি, ওর নামেই জায়গাটার নামকরণ করা হয়েছে। ফোর্ট তৈরি হয়েছে পঞ্চান্ন সালে। লোকজন রিও বনিটোর আশপাশে বসতি করছে, কিন্তু আমার তো মনে হয় অ্যাপাচীদের তোপের মুখে দেশছাড়া হবে সবাই।
জাপাটা আছে ওখানে?
সি...সঙ্গে প্রায় সব কু আছে ওর। গরুর পাল ছাড়াও কিছু ঘোড়াও আছে সঙ্গে।
ওখানেই যাব আমরা, টেবিলের চারপাশে তাকালাম আমি। ঝটপট পেটপূজা সেরে ফেলল।
বেরিয়ে এসে বোড়ওঅকে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকলাম আমরা, রাস্তার দু’ধারে সতর্ক দৃষ্টি চালালাম। জানি যে-কোন সময় বিপদ আসতে পারে।
হঠাৎ ইলেনকে দেখতে পেলাম। আসলে বলা উচিত মিলো ডজই দেখতে পেল ওকে। ড্যান…দেখো!
উজের উত্তেজিত স্বরে তাকালাম। আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে ইলেন। মনে হলো বয়স বেড়ে গেছে ওর, কিছুটা স্বাস্থ্যহানিও হয়েছে। বরাবরের মত পরিপাটি, পরিচ্ছন্ন পোশাক পরনে। আমাদের দেখে থমকে দাঁড়াল মুহূর্তের জন্যে, তারপর চিবুক উঁচু রেখেই এগিয়ে এল।
ইলেন…মিসেস এডলে, বললাম আমি। তোমাকে দেখে সত্যি খুশি হয়েছি।
কেমন আছ? যেন পরস্পরের অপরিচিত আমরা, এমন সুরে বলল ও। তারপর পাশ কাটিয়ে নিজের পথ ধরল।
তোমার পরিবারের সবাই আছে আমাদের সঙ্গে। ট্যাপ জানে কোথায় জায়গাটা। তোমাকে দেখলে খুশি হবে ওরা।
কয়েক পা এগিয়ে গেছে ও। থেমে, ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল। আমার তো মনে হয় আমার স্বামীকে পছন্দ করো না তুমি!
যখনই বাড়ি ফেরার ইচ্ছে হবে তোমাদের, স্মিত হেসে বললাম আমি। নির্দ্বিধায় চলে আসতে পারো। তোমাদের জন্যে যথেষ্ট জায়গা আছে আমাদের-হৃদয়ে এবং ওই উপত্যকায়। কি জানো, বাবা কোন উইল রেখে যায়নি এবং ট্যাপকে তাড়িয়ে দিলেও ওকে যথেষ্ট পছন্দ করতেন তিনি। যাকগে, ওসবে কিছু যায়-আসে না এখন। ট্যাপ ফিরে এলেই বরং খুশি হব আমি। সমান-সমান ভাগাভাগি করব আমরা।
ধন্যবাদ।
ফের এগোতে গিয়েও থামল ইলেন। হয়তো আমাদের আচরণে এমন কিছু ছিল, কিংবা আমাদের সাজসজ্জা দেখে-কারণ প্রত্যেকের কাছে রাইফেল ছাড়াও দুতিনটে করে পিস্তল রয়েছে।
কোথায় যাচ্ছ…কি করছ তোমরা?
গরুর পালের খোঁজে বেরিয়েছি আমরা, ইলেন। আমাদের সব গরু নিয়ে লাস প্লাসিটাসে গেছে ফেলিপ জাপাটা।
কিন্তু…ওই, ওরা তো অনেক লোক! সামান্য সুযোগও পাবে না তোমরা। অন্তত, বিশজন লোক আছে ওর সঙ্গে…দ্বিগুণও হতে পারে।
জানি, ম্যাম, কিন্তু গরুগুলো আমাদের। ওগুলো ফিরিয়ে আনতেই হবে।
এটাই আমাদের মূলমন্ত্র-গরু ফিরিয়ে আনতে হবে। গরু তো আনতে হবেই, উপরন্তু গরুচোরদেরও ছাড় দেব না-কৃতকর্মের শাস্তি ওদের পেতেই হবে। বুনো একটা জায়গায় বসতি করতে হবে আমাদের, শান্তি আনতে হবে। আগামী কয়েক বছর বন্দুকের জোরেই সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ঝামেলাবাজদের কাছে শুধু ঝামেলাই গুরুত্ব পায়-সুবিচার তখনই মানে ওরা; মেনেও নেয়-যখন শক্তি থেকে আসে। অর্থাৎ যেমন বুনো ওল, তেমনি বাঘা তেঁতুল।
পুবের পাহাড়ের পেছনে সূর্য হারিয়ে গেল, ততক্ষণে বেশ কয়েক মাইল চলে এসেছি আমরা। মরুভূমির মত একটা জায়গা পেরিয়ে এসেছি, লাভার চাঙড় ছাড়িয়ে ঘেসো এক উপত্যকা ধরে এগোলাম। জায়গাটা রিও বনিটোর ধারে। প্রচুর পাইন আর ওক রয়েছে আশপাশে। পাইনের সারিকে পাশে রেখে কিছুদূর এগোতে দূরে অ্যাডোবি দালান আর জীর্ণ কিছু শ্যাক চোখে পড়ল নদীর তীরে।
সব মিলিয়ে হয়তো আট-দশটা হবে। কয়েকটা তাবুও রয়েছে, আর কিছু টিপি। কাছাকাছি গিয়ে ছড়িয়ে পড়লাম আমরা। শহরের ওপাশে গরুর পালটা চোখে পড়েছে। পালের ধারে-কাছে কয়েকজন রাইডার রয়েছে, কারও কারও পরনে ইউনিফর্ম আর মাথায় হেলমেট। এরা নিশ্চই ক্যাভালরির সদস্য।