ওই ব্লড লোকটা পিস্তল বের করার চেষ্টা করলে কি করতাম জানি না, নিশ্চিত নই আমি, কিংবা পরোয়াও করি না। বাবার মৃত্যুর সময় ধারে-কাছে ছিল: লোকটা, সে নিজে গুলি করুক বা না-করুক, সমান দায়ী বাবার মৃত্যুর জন্যে-আবার সে নিজেও কাজটা করে থাকতে পারে।
একটা জিনিস শিখেছি আমি। এতে তর্ক আর ঝামেলা থেকে বাঁচা যায়। সম্ভবত ভুল থেকেই সংঘাতের পথ তৈরি হয়; যদি কারও সঠিক অবস্থান অন্যরা জানতে না পারে। বুনো এবং নির্জন অঞ্চলে এসেছি আমরা, আইন বিবর্জিত একটা অঞ্চল, সামাজিক রীতি বা নিয়মের থোড়াই পরোয়া করে এমন লোকের অভাব নেই এখানে-আবার ঠিক বিপরীত চরিত্রের লোকও আছে যারা স্কুল, চার্চ তৈরি করতে চায়; চায় একটা দিন ঘুরে বেড়ানোর জন্যে বা বাজার করার জন্যে উন্মুক্ত থাকবে, যারা হৃদ্যতা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সমাজ গড়তে চায়।
এখন, নিজের অবস্থান পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছি আমি, ভুল বোঝাবুঝির কোন অবকাশ নেই…
ট্যাপরা চলে যাওয়ার পর, এ নিয়ে কেউই কোন মন্তব্য করল না। যার যার কাজে ফিরে গেলাম আমরা, এটাই ধ্রুব সত্য-জন্ম-মৃত্যুর মতই চিরন্তন। দৈনন্দিন কাজ কখনও পুড়ে থাকে না। জীরন ধারণের জন্যেই করতে হয়। খাবার তৈরি, গরুর যত্ন, মাংস যোগাড়, বেড়া তৈরি বা মেরামত, কাঠ সংগ্রহ-সবই চলছে পুরোদমে। শুধু রুটি খেয়ে বাঁচতে পারে না মানুষ, অন্য কিছু পাওয়ার আগে রুটির রুজি করতে হয়। অবকাশ থেকে সভ্যতার ঠিকানা তৈরি হয় বটে, কিন্তু জমিতে ফসল ফলানোর পরই কেবল অবকাশ মেলে।
অন্তস্তল থেকে এসব উপলব্ধি করি আমরা, কারণ নিঃসঙ্গ মানুষ মাত্রই চিন্তাশীল এবং সুবিবেচক, জীবনের অসঙ্গতিগুলো পুরণ করার উপায় বাতলে অবসরটুকু কাটায় এরা।
পুবে যাওয়ার সময় হয়েছে এখন, পালের গরু ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে আমাদের। মনে হয় না গরু বিক্রি করে ফেলেছে ওরা, অন্তত আমি যথেষ্ট সন্দিহান; আমার নির্দেশ শুনে ফেলিপ জাপাটা খেপে গিয়ে গরু বিক্রি করার ব্যাপারে তাড়া অনুভব করবে, এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু মনে হয় না গরু বিক্রি করেছে সে। সে চাইলেও-আমার সন্দেহ-অন্য কেউ জড়িত আছে এসবে।
টিম, পালের খোঁজে যাচ্ছি তামি, টিম অটমানকে ডেকে বললাম। তোমাকে দায়িত্বে রেখে যাচ্ছি। জিম মুর আর টম জেপসন থাকবে তোমার সঙ্গে-সুয়ারেজও থাকছে।
আমি তোমার সঙ্গে যাব, ড্যান, একটা রিয়াটা তৈরি করছিল মেক্সিকান, মুখ তুলে তাকাল আমার দিকে। আমি সঙ্গে থাকলেই মঙ্গল হবে। জাপার্টার অনেক লোকজন। ওঁকে ধরতে হলে মেক্সিকানদের সঙ্গে দেখা করতে হবে। ওদের কাছে তুমি একজন আগন্ত্রক, জাপাটা মেক্সিকান বলে কেউ তোমাকে সাহায্য করতে চাইবে না। তোমার বিরুদ্ধে না গেলেও কেউই সাহায্য করবে না।
কিন্তু আমি সঙ্গে থাকলে, জাপাটার কুকর্মের কথা আমার কাছ থেকে জানতে পারলে বিশ্বাস করবে ওরা। তাহলে শুধু কোমাঞ্চেরোদেরই শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করতে পারবে তুমি। সামান্য হাসল সে। দলটা অনেক বড়, সেনর, আমি সঙ্গে থাকলে উপকারই হবে তোমার। তাছাড়া ওদের সঙ্গে কিছু দেনা-পাওনা বাকি রয়ে গেছে আমার।
ঠিকই বলেছে সে, যুক্তির সঙ্গে তর্ক করা চলে না। টেক্সাস বা নিউ মেক্সিকোর এসব স্প্যানিশ-আমেরিকানরা গোষ্ঠিপ্রিয়। বাইরের লোকদের পছন্দ করে না, তাতে অস্বাভাবিক কিছু নেই। এমন মানসিকতার জন্যে দোষ দেওয়া যায় না ওর। একজন আগন্তুক গ্রিংগো হিসেবে আমাকে দেখবে ওরা। আমাদের এই সমস্যার ব্যাপারে মোটেই ভাববে না-সত্যি কি মিথ্যে বলছি আমি; এক্ষেত্রে দুটো ব্যাপার ঘটতে পারে-হয় স্রেফ আমাকে উপেক্ষা করবে, নয়তো বিরুদ্ধে চলে যাবে।
কার্ল, গার্ট, মিলো, জুয়ারেজ আর আমি-পাঁচজনে রওনা দিলাম। ছোট্ট একটা দল, অন্তত কাজের তুলনায় দুলটা নেহাতই ছোট।
রিও গ্রান্ডের তীরে ছোটখাট শান্ত শহর সকোরো। পুয়েবলোর এক পাশে গড়ে উঠেছে। বহু আগে, ১৬২৮ সালে মিশন তৈরি হয়েছিল এখানে, কিন্তু পুয়েবলো বিদ্রোহের সময় লোকজন দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ে, রিও গ্রান্ডের তীরে একই নামে একটা বসতি তৈরি করে। ১৮১৭ সালে ফিরে গিয়ে এরাই পুনরায় তৈরি করে গ্রামটা। এর সবই জুয়ানিতার কাছ থেকে শোনা, ম্যাগোফিন্সভিল থেকে পশ্চিমে যাওয়ার সময় বলেছে ও।
সংখ্যায় অল্প হলেও, এ ধরনের কাজে অভিজ্ঞ আমরা-ঝামেলা সামাল দিতে দক্ষ। টেক্সাসের বুনো অঞ্চলে এমনিতে বড় হয় না কেউ। তেরো বছর বয়সে এক কিওয়াকে প্রথম খুন করে কার্ল ক্ৰকেট, তারও আগে, পুরো এক সপ্তাহ কোঞ্চিদের একটা দলকে নাকানি-চুবানি খাইয়ে ছেড়েছে ও, নিজের চোখে পরিবারকে খুন হতে দেখেছে।
স্যাম গার্টের আদি নিবাস কেন্টাকি এবং টেনেসি। নাচেল ট্রেসের ধারে-কাছে কেটেছে ওর, পাহাড়ী মানুষ। জীবনের বেশিরভাগ সময় শিকারী ছিল। মিলো ডজ টেক্সাস রেঞ্জার ছিল একসমসয়, মেক্সিকান যুদ্ধের সময় বালক বয়সেই যুদ্ধে শামিল হয়েছিল।
সকোরোয় ঢুকলাম আমরা। ছোটখাট কিন্তু টাফ একটা দল। সাপ্লাই কিনে পশ্চিমে যাত্রা করব, কোমাঞ্চেরোদের এলাকায় যেতে কয়েকদিন লেগে যাবে।
একটা ক্যান্টিনায় ঢুকলাম আমরা। ড্রিঙ্ক গেলার চেয়ে খবর সগ্রহ করার আগ্রহই বেশি। তবে চারজন ঢুকেছি ভেতরে। আঙুর থেকে ওয়াইন তৈরি করে এরা, তারই ফরমাশ দিলাম। অবশ্য বহু পুরোনো কিছু আপেল গাছও আছে এদিকে, শোনা যায় রোমানরা লাগিয়েছিল এগুলো।