কি মনে হয় তোমার, গরুর পাল ফিরিয়ে দেবে জাপাটা? চিন্তিত স্বরে জানতে চাইল টিম অটম্যান।
যদি না দেয়, তাহলে পাকড়াও করব ওকে। ওর জায়গা চিনিয়ে দিয়েছি ওকে, সুতরাং কোন ভাবেই প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ করতে পারব না আমি।
ও যদি ক্যানিয়ানে লুকিয়ে পড়ে?
ওকে অনুসরণ করে ঢুকে পড়ব ক্যানিয়নে।
ম্যাগোফিন্সভিল থেকে কিছুটা দূরে ক্যাম্প করলাম আমরা। জায়গাটা সুন্দর, ঝর্নার লাগোয়া। সিডার আর অ্যাসপেনের ছায়া প্রশান্তি বিলাচ্ছে ক্যাম্পে। রিও গ্রান্ড খুব বেশি দূরে নয়। দারুণ সুন্দর এক উপত্যকা। উত্তর-পশ্চিমে ঢেউ খেলানো পাহাড়ের সারি, ঢালু জমিতে আঙুরের চাষ করা হয়েছে। এই প্রথম আঙুরের চাষ দেখতে পেলাম।
অনেক রাত পর্যন্ত আগুনের পাশে বসে থাকলাম আমরা, গল্প করলাম, পুরানো দিনের গান গাইলাম। বুকে আগামী দিনের উজ্জ্বল স্বপ্ন। আমার পাশে বসেছে জুয়ানিতা, ঘনিষ্ঠ হয়ে, জীবনে এমন ভাল লাগার অনুভূতি কখনও হয়নি। সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা অনুভূতি, কারণ এই প্রথম কোন মেয়েকে চাইছি মনে মনে…আজীবনের জন্যে, ভালবাসার জন্যে। নিজের ভাবনা প্রকাশ করার মত যুৎসই শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না আমি। সত্যি করুণ অবস্থা!
শিগগিরই আবার ট্রেইলে উঠব আমরা-উত্তর-পশ্চিমের অনাবাদী জমির উদ্দেশে যাত্রা করব। সম্ভবত ওদিকেই আছে ট্যাপ এডলে, ওর সঙ্গে দেখা হবে আবার…বাবা মারা যাওয়ার পর, এখন কি সম্পর্ক দাঁড়াবে আমাদের মধ্যে?
বাবাকে সবসময়ই সমীহ করত ট্যাপ…অথচ আমার প্রতি ছিটেফোঁটাও নেই। আমাকে এখনও তরুণ মনে করে সে, কিন্তু যে পরিকল্পনাই থাকুক আমাদের, তাতে যোগ দিতে পারে সে, যদি নিজের দায়িত্বটুকু ঠিকমত পালন করে।
উঠে দাঁড়িয়ে সিডার সারির দিকে এগোলাম আমি, ঘোড়াগুলো রয়েছে ওখানে। ওগুলো ঠিকঠাক আছে, দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমাতে চাই। আলোর বাইরে এসে কান পেতে রাতের নৈঃশব্দ্য উপভোগ করলাম। আকাশে হাজার তারার মেলায় চোখ রেখে আনমনা হয়ে পড়লাম।
জেমস ম্যাগোফিন সাপ্লাই দেবে আমাদের, কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেনা শোধ করতে হবে। পুরোটাই আমার দায়িত্ব। নগণ্য একটা গরুর পাল রয়েছে আমাদের, এ থেকে কারও জীবিকা নির্বাহ হওয়া রীতিমত অসম্ভব। যাই ঘটুক, পালের সব গরু কোমাঞ্চেরোদের কাছ থেকে উদ্ধার করতে হবে, কিংবা যেভাবেই হোক অন্য কোন উপায়ে হাজার কয়েক গরু যোগাড় করতে হবে।
ফেলিপ জাপাটা যদি গরু ফেরত না দেয়, তাহলে ওদের ধাওয়া করতে হবে, এমনকি পেলো ডিউরো ক্যানিয়ন পর্যন্ত যেতে হতে পারে।
পাশে এসে দাঁড়াল জুয়ানিতা, টের পেলাম আমার একটা হাত চেপে ধরেছে। দুশ্চিন্তা করছ, ড্যান?
ওরা আমার সঙ্গে এসেছে, ক্যাম্পের দিকে ইঙ্গিত করে বললাম। বাবা এবং আমাকে বিশ্বাস করেছে ওরা, আস্থা রেখেছে। কোন ভাবেই ওদেরকে নিরাশ করতে পারব না আমি।
করা উচিতও হবে না।
কাজটা সত্যিই কঠিন হবে।
জানি, ড্যান, খুব কঠিন হবে, থামল জুয়ানিতা, তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে আমার সামনে চলে এল, হাতটা ছাড়েনি। কিন্তু তুমি যদি সুযোগ দাও, আমি তোমাকে সাহায্য করব।
ওর গভীর কালো চোখে তাকালাম-প্রতিশ্রুতি আর দৃঢ় প্রত্যয় দেখতে পেলাম। হাত বাড়িয়ে ওর কোমর চেপে ধরতে আমার বুকে চলে এল ও। মৃণাল দুই বাহু দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরল। আমি তোমার পাশে থাকতে চাই, ড্যান-আজীবন! নিচু, রুদ্ধ স্বরে প্রতিশ্রুতি দিল ও।
৬. আটান্ন সালের গ্রীষ্মে
আটান্ন সালের গ্রীষ্মে মিম্বার্স নদীর তীরের উপত্যকায় পৌঁছলাম আমরা-গুটিকয়েক গরু আর সাপ্লাই ভরা ওয়াগন নিয়ে কয়েকজন মানুষ।
কুক’স প্রিংকে পেছনে ফেলে, ব্ল্যাক রেঞ্জ পর্বতমালাকে হাতের বাম পাশে রেখে নদী পেরিয়ে আরও এগিয়ে গেলাম, মোগোলন পর্বতশ্রেণীর বুনো নির্জন এলাকায় প্রবেশ করলাম। স্ক্যাবার্ডে বা হাঁটুর ওপর রাইফেল প্রস্তুত আমাদের, যেহেতু অ্যাপাচী এলাকার ঠিক মাঝখানে আছি এখন, দিন দুই চলার পর আমাদের স্বপ্নের জমিতে পৌঁছলাম।
সেন্ট অগাস্টিন পর্বতমালার পাহাড়ী এলাকা এটা, নয়ন জুড়ানো বিস্তৃত তৃণভূমি ছড়িয়ে আছে মাইলকে মাইল। এরচেয়ে সুন্দর সমৃদ্ধ তৃণভূমি সারা জীবনেও দেখিনি। ইতস্তত ঘুরে বেড়ানো অ্যান্টিলোপ আর বুনো ঘোড়ার কিছু পাল চোখে পড়ল।
ঝর্নার ধারে ক্লিফের লাগোয়া উঁচু একটা জায়গায় ক্যাম্প করলাম আমরা। ক্লিফের গুহায় অসংখ্য বাদুড় বাসা বেঁধেছে। দীর্ঘ ঘাসে চরছে গরুগুলো। এদিকে আমরাও হাত গুটিয়ে বসে নেই-পোল-করাল তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছি।
পাহাড়ে ভালুক আর হরিণের ছাপ চোখে পড়েছে। কাঠ কাটার মাঝখানে বিশ্রামের জন্যে থামল স্যাম গার্ট। নিষ্কণ্টক জমি এটা; ড্যান, কিন্তু যদূর শুনেছি ইন্ডিয়ান একটা ট্রেইল আছে ধারে-কাছে, এ পথে যাওয়া-আসা করে ওরা। আমাদের বোধহয় সতর্ক থাকা উচিত।
করালের কাজ শেষ হলে দুর্গ তৈরি করব আমরা, কিন্তু সবার আগে ঘোড়ার জন্যে করাল আর শেড তৈরি করতে হবে। আশপাশে বুনো ঘোড়া যা দেখলাম, ঘোড়া নিয়ে ভাবতে হবে না।
দুৰ্গটা শুরুতে নেহাত সাদামাঠা গোছের মনে হলো। ইংরেজি ভি আকৃতির একটা শেড তৈরি করলাম প্রথমে, খোলা উপত্যকার দিকে ওটার মুখ। একপাশে করালের জন্যে খুঁটি গেড়েছি, অন্যপাশে মাটির দেয়াল দাঁড় করিয়েছি। পেছনে ক্লিফের খাড়া নিরেট দেয়াল। দেখতে দুর্গের মত না হলেও, নিরাপত্তার বিচারে চলনসই-মাঝারি ধরনের যে কোন আক্রমণ ঠেকিয়ে দেয়া যাবে।