বুনো আক্রোশে উন্মত্ত হয়ে উঠেছি আমি। কে থামাবে আমাকে? স্যাম গার্টের হাতেও একটা সিক্সশূটার বেরিয়ে এসেছে, তিন কোমাঞ্চেররাকে নাচার বানিয়ে রেখেছে।
নিচু হয়ে মার এড়ানোর চেষ্টা করছে জাপাটা, প্রতিরোধ করার বা পাল্টা মার দেয়ার স্পৃহা হারিয়েছে। সুযোগটা তাকে দিতে নারাজ আমি। টেনে মুখ তুললাম ওর, একের পর এক ঘুসি বসিয়ে দিলাম মুখে। কিছুক্ষণের মধ্যে থকথকে মাংসের দলা হয়ে উঠল ওর, মুখ। ভূগোল পাল্টে গেছে। ধড়াস করে আছড়ে পড়ল সে, মাটি খামচে ধরল যেন তাতে উঠে দাঁড়াতে পারবে।
বেদম মার খেয়েছে সে, বিধ্বস্ত দেহটা পড়ে থাকল মাটিতে। সামান্যও নড়ছে না।
এগোতে গিয়ে পাশে জেমস ম্যাগোফিনকে দেখতে পেলাম। আমার কাধ চেপে ধরে থামাল সে। যথেষ্ট হয়েছে, ট্রেভেন! ওকে খুন করবে নাকি?
হাতের পাঞ্জা ফুলে গেছে আমার, রক্তাক্ত। টলমল পায়ে পিছিয়ে এলাম, কাঁধ ঝাঁকিয়ে ছাড়িয়ে নিলাম নিজেকে বুনো আক্রোশ নিয়ে ফেলিপ জাপাটার ভূপতিত দেহের দিকে তাকালাম, একটুও নড়ছে না। ঝট করে তিন কোমাঞ্চেরোর দিকে ফিরলাম, চোখে শঙ্কা ফুটে উঠল ওদের। ওকে বোলো ফের যদি কখনও দেখি–যেখানেই হোক, খুন করে ফেলব ওকে!
নড়ে উঠল লোকগুলো, জাপাটার পাশে এসে দাঁড়াল একজন।
আরেকটা কথা, যোগ করলাম। ওকে ওটাও বোলো পালের সব গরু ফেরত চাই আমি পুরো তিন হাজার গরু, বেশিরভাগই ব্রীডিং স্টক। আজ থেকে ত্রিশ দিনের মধ্যে রেডোন্ডোয় আমাকে সব গরু ফেরত দিতে হবে! আর হ্যাঁ, ষাটটা ঘোড়াও ছিল পালের সঙ্গে, ওগুলোও ফেরত চাই আমি। এক মাস পর, সব ফেরত না পেলে যেখানেই থাকুক, খুঁজে বের করে ওকে পিটিয়ে মারব আমি!
ঘুরে দাঁড়িয়ে সেলুনের দিকে এগোলাম। দারুণ দুর্বল বোধ করছি। দরজার পোস্টের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম সেকেন্ড কয়েক, তারপর স্টোরে ঢুকে পড়লাম। ফেলিপ জাপাটার দিকে একবার তাকিয়ে আমাকে অনুসরণ করল জেমস ম্যাগোফিন। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকল স্যাম আর কার্ল, তিন কোমাঞ্চেররাকে জাপাটার দেহ টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যেতে দেখল।
ওই লোক ফেলিপ জাপাটা? কৌতূহলী স্বরে জানতে চাইল স্টোর মালিক। ওর কথা অনেক শুনেছি।
মাথা ঝাঁকালাম। এখনও শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়নি আমার। বুক ধড়ফড় করছে। হয়তো ওকে খুন করা উচিত ছিল!
কিন্তু তারচেয়েও বেশি করেছ। শেষ করে দিয়েছ জাপাটাকে, সামান্য দ্বিধা করল সে। এবার বলো তো, কি কি যেন লাগবে তোমার?
তোমার মনে রাখা উচিত, নগদ টাকা…মাত্র পঞ্চাশ ডলার আছে আমার কাছে। কবে টাকা শোধ করতে পারব, তার নিশ্চয়তা দিতে পারছি না।
রেখে দাও-তোমার সঙ্গে ব্যবসা করে ঠকব না আমি। টাকা ছাড়াও অন্য কিছু আছে তোমার-এমন জিনিস, বুনো এই দেশে শান্তি আনার জন্যে এটাই দরকার।
আমাকে দেখামাত্র ফ্যাকাসে হয়ে গেল জুয়ানিতার মুখ। হয়তো সেটাই স্বাভাবিক, লড়াইয়ের উত্তেজনায় খেয়ালই করিনি নিজের দিকে, কম মার খাইনি, যদিও কোনটাই গ্রাহ্য করিনি। এক চোখ ফুলে গিয়ে প্রায় বন্ধ হওয়ার যোগাড়, অন্য দিকের হনুর হাড়ের কাছে কেটে গেছে, ইঞ্চি দেড়েক তো হবেই! ঠোঁট আর একটা কানও ফুলে গেছে, দুই হাতের পাঞ্জা ফুলে-ফেঁপে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
ওহ, খোদা, তোমার মুখের কি অবস্থা হয়েছে! আঁতকে উঠল ও, মুহূর্তের মধ্যে দারুণ ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এদিকে এসো। মুখটার যত্ন নেব আমি…হাতেরও!
গরম পানির সঙ্গে বেসিনে লবণ মেশাল ও, তারপর আমার দুই হাত চুবিয়ে দিল গরম পানিতে। যতটা সম্ভব যত্ন আর সতর্কতার সঙ্গে আমার মুখ পরিষ্কার করল জুয়ানিত।
ব্যাপারটা অদ্ভুত, সম্পূর্ণ অচেনা আমার জন্যে। প্রিয়দর্শিনী কোন মেয়ে কাছে বসে ক্ষতের যত্ন নিচ্ছে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে, মৃদু স্বরে অনুযোগ করছে, সহানুভূতি আর মমতার কোমল স্পর্শ ছড়িয়ে দিচ্ছে…অদ্ভুত ভাল লাগার অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল আমার সারা শরীরে। বহু আগে, একবার বুনো একটা ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছিলাম, ট্যাপের মা এভাবেই শুশ্রূষা করেছিলেন। কিন্তু দুটো ঘটনায় বিস্তর তফাৎ!
ট্যাপের কথা মনে পড়ল। কোথায় আছে সে? ইলেনের কি হলো?
ইলেন চলে যাওয়ার পর কখনও এ নিয়ে আলাপ করেনি টিম, ভুলেও তোলেনি দু’জনের প্রসঙ্গ। কে জানে স্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করেছে কিনা। যত যাই হোক, আমার ধারণা দুঃসাহসই করেছে ইলেন, ট্যাপ এডলের মত বাঁধনহীন মানুষের পেছনে ছুটে যাওয়ার পরিণাম মেয়েদের জন্যে করুণার হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। শুধু ইলেনের কারণে ট্যাপ বদলে যাবে, এ সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ।
স্যাম আর কার্লের কাছ থেকে ম্যাগাফিন্সভিলের কথা শুনেছে সবাই। প্রায় প্রত্যেক সন্তুষ্ট, আশার আলো দেখছে এখন। তখনকার দিনে এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার, কারও মুখের কথাই তার কাজের নিশ্চয়তা, প্রতিজ্ঞাপত্ৰ; কথার বরখেলাপ হলে কাগুঁজে স্বাক্ষর বা নিশ্চয়তার কোন মূল্য নেই-বিবেচনাও করে না কেউ। সামান্য মুখের কথায় হাজার হাজার গরু কেনা-বেচা হয়, টাকা লেনদেনের সময় সাধারণত গরুগুলো গোনাও হয় না। সেজন্যেই একটা লোকের মুখের কথাই আগে বিবেচ্য। লোকটা গরু চোর, জুয়াড়ী বা খুনী হতে পারে এবং তারপরও পশ্চিমে নিশ্চিন্তে বাস করতে পারবে; কিন্তু তার মুখের কথার যদি দাম না থাকে, তাহলে কাপুরুষ হিসেবে তাকে দেখবে সবাই, পশ্চিমে থাকতে পারবে না সে, ব্যবসাও করতে পারবে না কারও সঙ্গে।