স্যাডল-ব্যাগ খুলল জুয়ানিতা। কার্তুজ আর বাকস্কিনের তৈরি থলেয় স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গেল।
এগুলো কাজে লাগবে আমাদের, মুদ্রার থলে আমার হাতে ধরিয়ে দিল ও।
জুয়ারেজের প্রসঙ্গ আসেনি, কিন্তু জুয়ানিতার আড়ষ্ট মুখ বা চেপে বসা চোয়াল দেখেই বোঝা যাচ্ছে নিজেকে সামলে রাখতে রীতিমত কষ্ট হচ্ছে ওর। জুয়ারেজের দেহ খুঁজে পাইনি আমরা, ক্যাম্পে হামলার পর কেউ তাকে দেখেওনি।
দৃশ্যত, বিশাল ঘোড়টাকে দখল করেছিল কোমাঞ্চেরোরা। রাইডও করেছিল, কিন্তু কোন ভাবে রাইডারকে পিঠ থেকে ফেলে দিয়েছে ঘোড়াটা, তারপর ফিরে এসেছে আমাদের কাছে।
কোন লোকই সুবিধে করতে পারে না ওর সঙ্গে, ব্যাখ্যা করল জুয়ানিতা। আমাকে ছাড়া কাউকে সহ্য করে না ওটা, এমনকি কোন মহিলাকেও নয়। কেউ হয়তো সাময়িক ভাবে চড়তে পারে, কিন্তু ঘোড়াটা সুযোগ পাওয়া মাত্র পিঠ থেকে ছুঁড়ে ফেলবে তাকে।
পশ্চিমে এগোতে থাকলাম আমরা। মেঘ সরে গিয়ে রোদ উঠেছে আবার। খরতাপে তেতে উঠছে জমিন..ঘাসের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে, জ্বালানির ঘাটতিও পড়েছে। পুরুষরা হাঁটছি আমরা..ইন্ডিয়ানদের চিহ্ন চোখে পড়েনি এ পর্যন্ত।
তৃতীয় দিন মরুভূমিতে একটা ষাড় খুঁজে পেয়ে ওটাকে শিকার করলাম। সম্ভবত কোন ওয়াগন ট্রেন থেকে পিছিয়ে পড়েছিল ওটা কিংবা নিরুদ্দেশ হয়ে পড়েছিল বহু আগে। মেস্কিটের বীচি খেয়ে বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে উঠেছে ওটা। মাংস কেটে বেশিরভাগই সংগ্রহ করলাম ভবিষ্যতের জন্যে। সেদিনের সাপারটা দারুণ হলো। বহুদিন পর পেট পুরে খাওয়ার সুযোগ হলো।
দিগন্তে গুয়াডালুপে পর্বতশ্রেণীর চূড়াগুলো আবছা ভাবে চোখে পড়ছে। গরুর পাল বা ওয়্যাগন নেই। পায়ে হাঁটছি আমরা, তারপরও বেশ দ্রুত এগোচ্ছি। জুয়ানিতার ঘোড়াটা পাওয়ার পর প্রথমদিন ষোলো মাইল এগিয়েছি, সেদিন অবশ্য শুকনো খটখটে জায়গায় ক্যাম্প করতে হলো।
সূর্য ওঠার আগেই রওনা করলাম। সবার আগে পাশাপাশি এগোচ্ছি আমি আর স্যাম গার্ট। মাঝখানে বাচ্চা আর মহিলারা-ঘোড়ায় চড়েছে সবাই-শেষে মিলো ডজ এবং টিম অটম্যান।
মরুভূমিতে তাপতরঙ্গ নাচছে, বালিঝড় ছুটছে বালির সমুদ্র বরাবর, শয়তানের উন্মত্ততার সঙ্গে যার তুলনা করা যায়। একটা চ্যাপারাল মুরগীকে হঠাৎ দেখতে পেলাম, আমাদের পাশাপাশি এগোল কিছুক্ষণ। চারপাশে ছোটখাট পানির ডোবা চোখে পড়ছে-বৃষ্টির সময় তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন শুকিয়ে খটখটে হয়ে আছে, তলা ফেটে চৌচির। প্রায় সব ক্যান্টিনই তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, আর ষাঁড়ের শুকনো মাংস ছাড়া কোন খাবার নেই আমাদের সঙ্গে।
মাটি শক্ত, পাথুরে, মাঝে মধ্যে লাইমস্টোনের আস্তর চোখে পড়ছে। নিচু পাহাড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। পশ্চিমে গুয়াডালুপে পর্বতশ্রেণীর নীলাভ সবুজ শরীর আহবান করছে আমাদের। সন্ধের আগে ছোট একটা উপত্যকায় ক্যাম্প করলাম আমরা। বেশ ঘাস আছে এখানে। কিছু গাছ ছাড়াও তিনটা ঝর্না আছে, যার একটার পানিতে গন্ধকের তীব্র ঘ্রাণ; আরেকটার পানি প্রায় সোডার মত, কিন্তু তৃতীয়টায় স্বচ্ছ টলটলে বিশুদ্ধ পানি।
মিসেস অটম্যানকে স্যাডল ছেড়ে নামতে সাহায্য করল টিম, মুহূর্ত খানেক পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকল ওরা, প্রবল নির্ভরতায় টিমের বাহু চেপে ধরেছে মহিলা। রোদ আর বাতাসের অত্যাচারে কিছুটা রোদপোড়া বা লালচে রঙের আড়ালে ফ্যাকাসে এবং পাণ্ডুর দেখাচ্ছে মুখটা। একটা গাছের নিচে গেল ওরা, ক্লান্ত দেহে বসে পড়ল মিসেস অটম্যান।
বাচ্চারা ছড়িয়ে পড়েছে-কাঠ আর গরুর চিপস খুঁজছে আগুন জ্বালানোর জন্যে। গাছের ছায়ায় সবগুলো ঘোড়াকে নিয়ে গেল স্যাম গার্ট।
স্যামের সঙ্গে কথা বলছি, এসময় আমাদের সঙ্গে যোগ দিল টিম অটম্যান। আমার মিসেস খুব ভাল অবস্থায় আছে তা বলা যাবে না। কিছু খাবার আর পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পেলে ওকে হয়তো চিরতরে হারাতে হবে।
ঠিকই বলেছ, টিম, বললাম আমি। মনে হচ্ছে এখান থেকে যাত্রা করার আগে কিছু মাংস যেভাবেই হোক যোগাড় করতে হবে।
এটা অ্যাপাচী এলাকা, জানাল মিলো ডজ। সুতরাং চোখ-কান খোলা রেখো।
শেষপর্যন্ত ঠিক হলো আমি একাই যাব, অন্য তিনজন আশপাশে থাকবে-সতর্ক নজর রাখবে। টিম অটম্যানের বড় ছেলেকে একটা রাইফেল দেয়া হয়েছে, উঠতি বয়সের তরুণ সে, গায়ে-গতরেও বেশ তাগড়া হয়ে উঠেছে। ঘোড়া আর মেয়েদের চারপাশে অবস্থান নিয়ে পাহারায় থাকল ওরা।
দুটো পিস্তলই সঙ্গে নিয়েছি, প্যাটার্সটা পুরো লোডেড। ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে এলাম আমি। দু’বার র্যাটলার চোখে পড়ল, ওগুলোকে এড়িয়ে গেলাম।
বিকেল একেবারে শান্ত, স্থির হয়ে আছে যেন। মরুভূমির নিচু এলাকায় ছায়া ঘনাচ্ছে, দূরের পর্বতমালায় কোমল ফিকে লাল রঙের সঙ্গে বিকেলের বেগুনী রঙের ছোপ লেগেছে। আশপাশে কোথাও ডেকে উঠল একটা কোয়েল…মিনিট খানেক পর, উত্তর দিল আরও একটা। এগুলো নীল কোয়েল, বলতে গেলে উড়েই না। কিন্তু ছুটতে পারে দারুণ গতিতে। আকারে বড়জোর পায়রার চেয়ে বড় হবে।
দু’বার থামলাম। হতে র-হাইডের তৈরি স্ট্রিং। বাছুরের পা বাঁধার জন্যে এগুলো ব্যবহার করে কাউবয়রা। খরগোশের ট্র্যাক চোখে পড়ার পর কয়েকটা ফাঁদ তৈরি করলাম।
কিন্তু ফাঁদে কিছু আটকায়নি। সন্ধের দিকে একটা কোয়েল শিকার করলাম। ফিরতি পথে ক্যাম্পের দিকে এগোলাম, শুধু কোয়েলটাই একমাত্র শিকার। ভোরে ফাদগুলো পরখ করতে গিয়ে দেখলাম বিশাল একটা জ্যাকাস খরগোস ধরা পড়েছে। ওটার মাংস পুরোটাই বাচ্চা আর মহিলাদের জন্যে বরাদ্দ করা হলো।