অবিশ্বাস্য হলেও, সত্যি সত্যি এগোল ওটা, বাধ্য বিশাল একটা কুকুরের মত। আমরা যা করছি নির্দ্বিধায় তাই করছে-থামলে ওটাও থামছে, আবার চলা শুরু করলে ওটাও এগোচ্ছে।
মালপত্র চাপানো যাবে ওর পিঠে, আশান্বিত স্বরে বললাম। সেটাও বিরাট স্বস্তি। মালপত্র আমাদের নিজেদের বইতে হবে না।
চেষ্টা করতে তো দোষ নেই।
তারপরই চমৎকার ঘটনাটা ঘটল।
মেস্কিটের ওপাশে রয়েছে অন্য পশুটা-ঘোড়া বা বলদ। কয়েক পা এগিয়ে মোড় ঘুরতে ওটাকে দেখতে পেলাম। নিচু একটা, খাদে ঘাস নিয়ে ব্যস্ত আমার ডান ঘোড়াটা। ওটার সঙ্গে আরও দুটো ঘোড়া রয়েছে। একটা বে পনি, অন্যটা পেইন্ট।
ডানটাকে ডাক দিলাম, কিন্তু ভ্রুক্ষেপ করল না ওটা। ফাস তৈরি করে ছুঁড়ে মারলাম। এড়ানোর জন্যে মাথা নিচু করল ওটা, সরে গেল কয়েক পা; তবে গলায় ফাঁস পড়া মাত্র স্থির হয়ে দাঁড়াল; মনে হলো ধরা পড়ায় যেন কৃতজ্ঞ বোধ করছে। ঘোড়া বা কুকুর, স্বভাবের কারণেই মানুষের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। সামাজিক পশু বলা যায় ওদের। মানুষের জন্যে সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু এবং নিঃসঙ্গ সময়ের স্বস্তিকর সঙ্গী। অন্য কোন প্রাণী এ যোগ্যতা রাখে না।
হ্যাকামোর লতা সগ্রহ করে লাগাম হিসেবে চালিয়ে নিলাম, তারপর ডানের স্যাডলে চড়লাম। মিনিট কয়েক চেষ্টা করার পর পেইন্টটাকে ধরে ফেললাম। বাড সাটক্লীফের মৃত ঘোড়া থেকে সংগ্রহ করা ব্রিডল ওটাকে পরাল স্যাম গার্ট-তারপর চড়ে বসল পেইন্টে।
তৃতীয় ঘোড়াটাকে ধরতে সময় লাগল বটে, কিন্তু দুই সঙ্গীকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছুক নয় ওটা। যতই এড়িয়ে যাক, দূরে সরে যায়নি ওটা। দুই ঘোড়ায় চড়ে ক্যাম্পের দিকে যাত্রা করলাম আমরা, দেখলাম পিছু পিছু আসছে ওটা। মিনিট কয়েকের মধ্যে ওটার গলায় ফাস পরিয়ে ফেলল স্যাম।
টিম বা মিলোর ভাগ্য আমাদের মত সুপ্রসন্ন হয়নি। খালি হাতে ফিরেছে ওরা। তবে তাজা ট্র্যাক দেখেছে, বৃষ্টির পরের-গরু এবং ঘোড়া, দুটোরই।
রাতটা গুহায় কাটালাম আমরা। লবণ মেশানো শুয়োরের মাংস আর মটরশুটি দিয়ে সাপার করলাম।
এই গুহাটা অনেক বড়, মন্তব্য করল টিম অটম্যান। মনে হচ্ছে মাটির নিচ দিয়ে অনেক দূর চলে গেছে। কেন্টাকির লাইমস্টোন এলাকায় ছিলাম আমি, বিশ্বাস করো, কয়েক মাইল দীর্ঘ এরকম গুহা প্রচুর আছে ওখানে। মাটির নিচে মাইলকে মাইল ছড়িয়ে পড়ে।
সকালে সামান্য জিনিসপত্র যা ছিল, সব নিয়ে বেরিয়ে এলাম গুহা থেকে। বাচ্চা আর মহিলারা পর্যায়ক্রমে ঘোড়ায় চড়ছে। বিস্ময়কর ব্যাপার, পিঠের বোঝাকে সহজ ভাবে নিয়েছে বলদটা। বুড়ো এই মসিহর্নটা সত্যিই বিস্মিত করেছে আমাদের। স্পষ্টত, মানুষের উপস্থিতি বা সঙ্গ উপভোগ করছে ওটা। জুয়ানিতা বা বাচ্চারা ওটাকে বিস্কুট এবং গুড় মেশানো কর্ন খেতে দিয়েছে, সেজন্যেই যে এত খাতির তা বলা যাবে না।
নিরুদ্যম অনিশ্চিত যাত্রা, তবে শুরু তো হয়েছে। বাবা আর অন্যদের কবর দিয়েছি আমরা। ফ্রিম্যান স্কয়ারের শরীরের অবশিষ্টাংশ যা খুঁজে পেয়েছি, তাই গোর দিয়েছি সসম্মানে। প্রত্যেকের জন্যে আলাদা মার্কার দেওয়া সম্ভব হয়নি, একটা মার্কারে কাজ চালিয়ে নিয়েছি।
কার্ল ক্ৰকেট, জিম মুর কিংবা জেপসনদের কোন খবর নেই। শেষ যখন কার্লকে দেখেছিলাম, এক ইন্ডিয়ানের স্যাডলে চেপে মরণপণ লড়াই করছিল, ছুটে ক্যাম্প পেরিয়ে গেছে ঘোড়াটা। হয়তো বন্দী হয়েছে ও, কিংবা অক্ষত অবস্থায় ইন্ডিয়ানকে কায়দা করে ফেলেছে। যাই হোক, আশপাশে অন্য কোন মৃতদেহ খুঁজে পাইনি আমরা, ঘোড়ায় চড়ে চারপাশে বেশ খানিকটা রেকি করেছি।
এগিয়ে চললাম আমরা। সন্ধেয় ডেলাওয়ার ক্রীকের বাকের কাছাকাছি এক জায়গায় ক্যাম্প করলাম। একসময় বোধহয় ক্যাম্প করেছিল কেউ এখানে, বামে প্রচুর কাঠ পড়ে আছে; পরিত্যক্ত একটা ওয়াগনও রয়েছে। দুটো চাকা নেই ওটার।
ক্রীকের পাড়ে বেশ ঘাস রয়েছে, খুব বেশি না হলেও, গত কয়েকদিনে তাও চোখে পড়েনি। প্রমাণ সাইজের কিছু মেস্কিটও রয়েছে।
সূর্য ডুবে যাওয়ার পরপরই একটা অ্যান্টিলোপ শিকার করল স্যাম গার্ট, সাপারে ওটার মাংস খেলাম আমরা। পেকোস ছাড়ার পর এই প্রথম ভাল এবং পর্যাপ্ত খাবার জুটল।
রাতে পাহারায় থাকছি আমরা, নিশ্চিত ভাবে বলা যায় কোমাঞ্চেরোদের সঙ্গে দেখা হবে আবার। এবার আর অসতর্ক অবস্থায় ওদের মোকাবিলা করতে চাই না। তৈরি থাকতে চাই। প্রায় মাঝরাতের দিকে দূরাগত খুরের শব্দ শুনতে পেলাম-ক্রমশ এগিয়ে আসছে। কিন্তু ক্যাম্পের কাছাকাছি এসে, অন্ধকারে থামল ঘোড়াটা।
ডানটা হেষাধ্বনি করল, উত্তরে ডেকে উঠল ঘোড়াটা, আরও এগিয়ে এল। জুয়ানিতার বিশাল কালো ঘোড়া ওটা।
জুয়ানিতাকে জাগালাম আমি, দ্রুত ব্যাখ্যা করলাম। বেডরোল ছেড়ে উঠে পড়ল ও, আগুনের কিনারে গিয়ে ঘোড়াটাকে ডাকল। দ্রুত এগিয়ে এল কালো রোয়ান, এসেই জুয়ানিতার হাত শুকতে শুরু করল যেন চিনি বা অন্য কিছু আছে ওর হাতে। স্প্যানিশ ধাঁচের স্যাডল-ব্রিডল চাপানো ওটার পিঠে, উঁচু ক্যান্টল; আমি অন্তত এত উঁচু ক্যান্টলে অভ্যস্ত নই। স্ক্যাবার্ডে একটা রাইফেল ঝুলছে, স্যাডল-ব্যাগ ফুলে-ফেঁপে-আছে। নিশ্চই ভেতরে কিছু আছে।