স্যাম গার্টের সঙ্গে নদীর তীর ধরে এগোলাম আমি। ট্র্যাক যদি কিছু পড়েও থাকে, বৃষ্টিতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এতগুলো মানুষের বেঁচে থাকাই অস্বাভাবিক, কিন্তু এ পর্যন্ত কোন মৃতদেহ চোখে পড়েনি আমাদের-এটাই স্বস্তি এবং প্রত্যাশার ব্যাপার।
দুজনে আলাদা হয়ে গেলাম আমরা। একটু পর ওর চিৎকার শুনতে পেলাম। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে সে, পায়ের কাছে কি যেন দেখছে। ওখানে যাওয়ার পর দেখলাম, কিছু লাইমস্টোনের ডোবার কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে।
সামনের মাটিতে বড়সড় গুহার মত গর্ত তৈরি হয়েছে, গর্তের ব্যাসার্ধ অন্তত ত্রিশ ফুট। গার্টের পাশে এসে দাঁড়িয়ে গর্তের দিকে তাকালাম, গুহার গাঢ় অন্ধকার মুখ চোখে পড়ল।
কেউ আছ নাকি? ডাকল স্যাম।
বিস্ময়কর হলেও সঙ্গে সঙ্গেই সাড়া এল। গুহার কিনারায় এসে দাঁড়াল মিলো ডজ। তোমার গলা শুনলাম, বলল সে। ঠিক আছ তো তোমরা?
বাচ্চাদের দেখেছ?
আমার সঙ্গে আছে ওরা। এমা বুচার্ডও আছে এখানে।
ধীরে ধীরে গুহা থেকে উঠে এল বাচ্চারা। সবার শেষে মিসেস বুচার্ডের পিছু পিছু মিলো ডজ বেরিয়ে এল।
ফ্রাঙ্ক কেলসি মারা গেছে। সারারাত কষ্ট পেয়েছে বেচারা, সকালেই মারা গেল। দুটো গুলি বিধেছিল…একটা পেটে।
বাবা আর টিল্টন মারা গেছে, বললাম আমি।
প্রথম হামলার সময় বাচ্চাদের নিয়ে এদিকে চলে আসে মিসেস বুচার্ড। জায়গাটা আগেই দেখেছিলাম আমি, দ্রুত ওদেরকে এখানে রেখে বেরিয়ে গেলাম। দুটো গুলি লাগিয়েছি, কিন্তু যাঁকে লাগাতে পারলে সবচেয়ে শান্তি পেতাম, ওটাই মিস্ হয়েছে।
মানে? মিলো ডজের চোখে বিতৃষ্ণা দেখে বিস্ময় বোধ করছি।
কার কথা বলছ?
চার্লি হীথ! ওদের সঙ্গে ছিল সে। ক্যাম্পে হামলার সময় বাড সাটক্লীফের পাশে দেখেছি ওকে। একটা গুলি করেছিলাম ওকে।
ওয়েব হর্নারের সঙ্গে ট্যাপের গানফাইটের কথা মনে আছে? চার্লি যদি ওদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে থাকে, তাহলে অন্তত একটা ঘাপলা পরিষ্কার হয়ে যায়-আচমকা দু’জনের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল ওরা, মনে আছে? হীথ নিশ্চই সতর্ক করে দিয়েছিল ওদের।
হীথের সঙ্গে এটা আমার ব্যক্তিগত লড়াই, শীতল সুরে বলল মিলো। ওই লোকটাকে চাই আমি!
তাহলে আমার আগেই ওকে পাকড়াও করতে হবে তোমার, বলল স্যাম গার্ট। ওই ব্যাটাকে কখনোই পছন্দ হয়নি আমার।
সবাই একত্রিত হলাম আমরা। বিধ্বস্ত, পরাজিত, ক্লান্ত, হতোদ্যম কিছু মানুষ।
টিম অটম্যান, মিলো ডজ, স্যাম গার্ট এবং আমি…তিনজন মহিলা। পাঁচটা বাচ্চা। অটম্যানের ছেলে দুটোর বয়স চোদ্দ আর দশ, এমা বুচার্ডের মেয়েটার বয়স তেরো বছর, আর দুই ছেলের বয়স নয় এবং এক বছর।
সবার আগে, বললাম আমি। এই গুহায় আশ্রয় নেব আমরা, মিলল। তারপর, ঘোড়ার খোঁজে বেরোব পুরুষরা, মেয়েরা তখন বাচ্চাদের নিয়ে গুহায় থাকবে। আমার মনে হয় না সব ঘোড়া নিয়ে গেছে ওরা কিংবা তাড়িয়ে দিতে পেরেছে; সেজন্যেই চারপাশে চক্কর মেরে দেখা উচিত। ছড়িয়ে পড়া দু’একটা ঘোড়া ক্যাম্পেও ফিরে আসতে পারে।
ব্যবহার করা যাবে, এমন যা কিছু রয়েছে ওয়্যাগন থেকে নামিয়ে ফেললাম আমরা, তবে খুঁটিনাটি এবং সহজে বহন করা যাবে এমন জিনিসই নিয়েছি। বিছানা, রান্নার তৈজসপত্র, কার্তুজ গুহায় স্থানান্তর করলাম। সামান্য যে খাবার ছিল তাও সরিয়ে নেয়া হলো।
স্যামের সঙ্গে বেরোলাম আমি, দুজনের হাতেই দড়ি রয়েছে। মিলো আর টিম অন্য দিকে গেছে। দুর্ভাগ্য যে ঝড়ের পর কোন ট্র্যাকই নেই, তবে ঠিক করে নিয়েছি বেশিদূর যাব না আমরা; কোমাঞ্চিদের ব্যাপারে সতর্ক থাকছি, কয়েক মাইলের মধ্যে যদি কিছু খুঁজে না পাই, তাহলে ফিরে আসব।
রীজের দিকে চলে এসেছি স্যাম আর আমি। কর্দমাক্ত ঢালু জমি উঠে গেছে রীজের চূড়ায়। প্রায় গোলাকার ওটার মাথা; বেশ কিছু সোপইড, প্রিকলি পিয়ার, এবং মেস্কিট রয়েছে। দূরে ঘোড়ার মতই একটা অবয়ব চোখে পড়ল, বলদও হতে পারে-দূরত্বের কারণে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না।
ওই যে, আরেকটা আঙুল তুলে দেখাল স্যাম। চলো! ধরি ওদের!
পশু দুটোর দিকে এগোলাম আমরা, প্রায় আধ-মাইল যাওয়ার পর কাঠামো পরিষ্কার হলো-ঘোড়া নয় বলদ। ডোরাকাটা বলদটা। আমাদের পালের লীডার।
কখনও বলদের পিঠে রাইড করেছ, ড্যান?
হ্যাঁ-বাচ্চা বয়সে। আমার মনে হয় না এটার পিঠে রাইড করতে পারবে কেউ।
হয়তো, হিসেবী দৃষ্টিতে বলদটার দিকে তাকাল স্যাম গার্ট। শেষ দিকে কিন্তু পোষা হয়ে এসেছিল এটা, এমন আচরণ করত যেন ও আর আমরা মিলে গরুর পাল সামলাচ্ছি। চলো যাই, আগে ধরি ওকে।
তো, এগোলাম দুজনে। অল্পক্ষণের মধ্যে আমাদের দেখতে পেল বলদটা। ঝট করে মাথা তুলল, দুই শিংয়ের দূরত্ব আট ফুট; হেঁটে আমাদের দিকে এগিয়ে এল ওটা, মাথা নিচু করে রেখেছে, শিং দুটো সামনের দিকে ঝুঁকে আছে যেন লড়াই করার জন্যে প্রস্তুত। সাধারণত কোন অশ্বারোহীকে আক্রমণ করে না ওরা, অথচ সেই একই লোককে বাহনহীন অবস্থায় পেলে হামলা করতে দ্বিধা করবে না। অশ্বারোহীর সঙ্গে লড়াই করা যতটা কঠিন, ঠিক ততটাই সহজ মাটিতে দাঁড়ানো লোকের বিপক্ষে।
কাছাকাছি চলে এল ওটা। এদিকে নিচু কোমল স্বরে ওটার সঙ্গে কথা বলছি, আমি। চোখ বড়বড় করে আমাদের দিকে তাকাল ওটা, মাথা তুলল। ঘুরে দাঁড়িয়ে অন্য পশুটা যেদিকে দেখেছি, সেদিকে এগোলাম। আয়, ব্যাটা! তুই আমাদের সঙ্গে আছিস এখনও।