গরুর পাল উধাও হয়ে গেছে। ফ্রিম্যান স্কয়ারমৃত, সম্ভবত বেন টিল্টনেরও একই পরিণতি হয়েছে।
কিছুই নড়ছে না। কোন শব্দ নেই। অন্ধকারে শুয়ে থেকে সিক্সশূটারে তাজা শেল ঢোকালাম আমি, প্যাটার্সনের খোঁজে আশপাশে তাকালাম।
ধারে-কাছে অন্ধকারে অস্কুট গোঙানি শুনতে পেলাম, তারপর নীরব হয়ে গেল সব। ধুলো উড়ছে বাতাসে, নাকে সুড়সুড়ি দিচ্ছে ধুলো। গায়ে আড়ষ্ট ব্যথা অনুভব করছি। হাতের তালুতে পিস্তলের বাঁটের স্পর্শ স্বস্তি আর নির্ভরতা এনে দিল শরীরে। পেছনে নদীর কুলকুল ধ্বনি কানে আসছে, কিন্তু এছাড়া আর কোন শব্দ নেই।
ধারে-কাছেই আছে ওরা, জানি আমি। নড়লেই খুনী বুলেট ছুটে আসবে।
জুয়ানিতার কি হয়েছে? মিসেস অটম্যানের ভাগ্যে কি ঘটল? বাবা কোথায়?
দূরে মেঘের গুড়গুড় শব্দ হলো…রাতটা নিঃশব্দ আর শূন্যতায় ভরা। দমকা হিমেল বাতাস বয়ে গেল, ছড়িয়ে দিল ক্যাম্পের জ্বলন্ত কয়লাকে, একটা কাপ কাৎ হয়ে পড়ে গেল মাটিতে।
সন্তর্পণে মাটিতে হাতের তালু রেখে, হাতের ওপর ভর করে ধীরে ধীরে শরীর তুললাম। উঠে বসলাম এরপর, পিছিয়ে গাঢ় অন্ধকারে চলে এলাম। কয়েক মুহূর্ত পর আরও দুই গজ পিছিয়ে এলাম।
বজ্রপাত হলো ধারে-কাছে..নীল বজ্র চিরে গেল ঘন অন্ধকার। আবার বজ্রপাত হলো, এবং পরপরই বৃষ্টি শুরু হলো। প্রচণ্ড বৃষ্টি। মাত্র কয়েক মিনিটেই তৃষিত ধুলোময় জমির উষ্ণতা ছাপিয়ে গেল, স্যাতস্যাঁতে এবং ভিজে চুপচুপে হয়ে গেল।
আবার যখন বজ্রপাত হলো, নীলচে রূপালী আলোয় বাবাকে চিৎ হয়ে পড়ে থাকতে দেখতে পেলাম। মাত্র এক মুহূর্তের জন্যে, তারপর মেঘের গর্জন ভেসে এল। তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে।
৫. তুমুল বৃষ্টির মধ্যেই ছুটে গেলাম
তুমুল বৃষ্টির মধ্যেই ছুটে গেলাম আমি, একটু আগে যেখানে বাবাকে দেখেছি।
মারা গেছেন তিনি। দুটো গুলি বিঁধেছে শরীরে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।
বাবার পাশে পড়ে থাকা রাইফেল তুলে নিয়ে এক ছুটে কাছের ওয়্যাগনের আড়ালে চলে এলাম। পাটাতনের তলায় অবস্থান নিলাম। অন্য কেউ বেঁচে আছে কিনা জানি না, কিন্তু বাবা মারা গেছেন; সব গরু হারিয়েছি আমরা, সব স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে; এবং এই প্রথম নিজের ভেতর তীব্র ঘৃণা আবিষ্কার করলাম আমি।
ওয়্যাগনের নিচে, আংশিক আশ্রয়ে থেকে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবলাম। জাপাটা আর ওর লোকেরা কি করবে এখন? যুক্তি আর সহজাত প্রবৃত্তি বলছে পালানো উচিত আমার, সকাল হওয়ার আগেই কেটে পড়া উচিত, যদি ভুল না করে থাকি, নির্ঘাত ওয়্যাগন লুট করার জন্যে ফিরে আসবে কোমাঞ্চেরোরা।
আর ক’জন মারা গেছে? কেউ কি গুরুতর আহত হয়ে পড়ে আছে? যদি তাই হয়, ওদেরকে খুঁজে বের করা উচিত। যে-কোন বিচারেই হোক, এ মানুষগুলোর কাউকে কোমাঞ্চিদের অসহায় শিকার হওয়ার জন্যে রেখে যেতে পারি না আমি।
সতর্কতার সঙ্গে ভেজা পিস্তল মুছলাম। প্যাটার্সনটা ধারে-কাছে কোথাও পড়ে আছে, তবে ওটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না এখন, কারণ বাবার ব্রীচ-লোডিং শার্পসটা এখন আমার হাতে। বাবার কাছে যে শটগান ছিল, ওটাও নিশ্চই পড়ে আছে কোথাও।
ঝড় বন্ধ হয়নি। অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে, পেকোসের দুই কুল ছাপিয়ে উঠবে পানিতে। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে কারও বাইরে থাকার কথা নয়, সম্ভবত আমাদের শত্রুরাও নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে এখন, যদি চেনা কোন আশ্রয় থেকে থাকে ওদের; কিংবা আমাদের গরুর পালের পিছু নিয়েছে, নিঃসন্দেহে বলা যায় পালের দখল নেবে ওরা।
আচমকা, মাথার ওপর ওয়্যাগনের ভেতর ক্ষীণ নড়াচড়া টের পেলাম। দূরে মেঘের গর্জন হলো, বজ্রপাত হলো আবারও। নীল বিদ্যুতের আলোয় নদীর পাড়ে, বড়জোর বিশ গজ দূরে দুটো কাঠামো চোখে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে চিনতে পারলাম।
টিম অটম্যান আর ওর বউ!
অন্তত দু’জন বেঁচে আছে। আর…ওয়্যাগনে কে আশ্রয় নিয়েছে? নিঃসন্দেহে আমাদের একজন, কিন্তু নিশ্চিত বলা যায় কি? এমনও হতে পারে কোন কোমাঞ্চি, লুট করার ধান্ধায় উঠে পড়েছে ওয়্যাগনে।
সন্তর্পনে ওয়্যাগনের তলা থেকে বেরিয়ে এলাম আমি। বৃষ্টির সুচাল ফোঁটা গায়ে খোঁচা মারছে যেন, মুখে চিমটি কাটার মত অনুভূতি হচ্ছে। ওয়্যাগনের ভেতরটা পুরোপুরি অন্ধকার, বাইরের অপেক্ষাকৃত আলোর বিপরীতে আমার কাঠামো নিশ্চই পরিষ্কার ফুটে উঠবে।কিন্তু ভেতরে কে আছে, জানতেই হবে। সুতরাং ঝুঁকিটা নিতে মনস্থ করলাম। অটম্যানরা আসছে, কোন ভাবেই ফাঁদে পড়তে দেয়া উচিত হবে না ওদের।
চাকার অনুভূমিক স্পোকের ওপর একটা পা রেখে, বাম হাতে ওয়্যাগনের কিনারা চেপে ধরে শরীর টেনে তুললাম, তারপর শরীর বাঁকিয়ে পাশ থেকে হঠাৎ ওয়্যাগনের ভেতরে উঁকি দিলাম।
অস্ফুট স্বরে বিস্ময় প্রকাশ করল কেউ।
জুয়ানিতা?
ড্যান! ওহ্, ড্যান! বেঁচে আছ তুমি!
টিকে আছি কোন রকমে। তুমি ঠিক আছ তো?
হ্যাঁ, কিন্তু এই লোকটা আহত হয়েছে। গুলি লেগেছে।
ঝুঁকি নিয়ে দেয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালালাম। স্যাম গার্ট। চাদিতে দীর্ঘ একটা আঁচড় কেটে চলে গেছে বুলেট, কাঁধ থেকে এক খাবলা মাংস তুলে নিয়েছে। দৃশ্যত, ওয়্যাগনে শুয়ে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে সে, চাদির চামড়ায় আঁচড় কেটে কাঁধের ওপরের অংশে গিয়ে আঘাত করেছে তপ্ত সীসা। প্রচুর রক্তপাত হয়েছে, এছাড়া মোটামুটি সুস্থ, সে।