একসময় পরিকল্পনা ছিল প্রত্যেকের নিজস্ব জমি থাকবে আমাদের, নির্দিষ্ট সীমানা থাকবে; কিন্তু শুরু থেকে কাউ-হাউসে যেভাবে বসতি করেছে সবাই, তাতে নির্দিষ্ট কারও সীমানা নিরূপণ করা সম্ভব ছিল না। হলোও না।
পশ্চিমে চলে যাওয়ার আলোচনা জোরেসোরে শুরু হলো, এবং তখনই ট্যাপের আগমন। পশ্চিম অর্থাৎ নিউ মেক্সিকোর ওদিক থেকেই এসেছে ও।
খামারের প্রতিবেশি আগ্রহী বাবা, ফসল ফলাতে পারলেই আনন্দ পান, ইদানীং তাই গরুর ব্যাপারে একা আমিই মাথা ঘামাই।
‘মিথ্যে বলব না, যাত্রাটা সত্যিই কঠিন হবে,’ বলছে ট্যাপ। কিন্তু সারা বছরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। শিগগিরই যদি যাত্রা করি, তাহলে ট্রেইলে ঘাস আর পানি, দুটোই পর্যাপ্ত পাওয়া যাবে।
‘আর ওখানে পৌঁছলে?’ জানতে চাইল অটম্যান।
‘এত ভাল ঘাস কোথাও দেখিনি আমি। আর পানির কথা কি বলব! নিউ মেক্সিকোর পেকোস অঞ্চলে থামতে পারি আমরা, কিংবা কলোরাডোয় চলে গেলেও অসুবিধে নেই’।
তুমি কি করতে বলো? অটম্যান সাবধানী মানুষ, প্রশ্নটা করার সময় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল ট্যাপের দিকে।
আমি পেকোসের ধারে-কাছে বসতি করার পক্ষে। বস্ক রেডোন্ডো নামে একটা পাহাড়ী উপত্যকা আছে। ওখানে বসতি করাই ঠিক হবে।
আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ইলেন অটম্যান, ট্যাপের ওপর স্থির হয়ে আছে ওর অনুসন্ধানী দৃষ্টি। দারুণ ব্যাপার, তাই না? মুগ্ধ স্বরে জানতে চাইল মেয়েটা। ও আমাদের সঙ্গে যাচ্ছে বলে সত্যিই খুশি হয়েছি আমি।
এই প্রথম, সামান্য হলেও ঈর্ষা বোধ করলাম। যদিও সেটা খুবই ক্ষীণ, কারণ আমি নিজেও ট্যাপ এডলের ভক্ত, ওকে পছন্দ করি, সমীহের চোখে দেখি। সম্ভবত ইলেনের দৃষ্টিভঙ্গিও অনেকটা আমারই মত।
ট্যাপ এডলে অবশ্যই ভিন্ন ধাতের মানুষ-সব বিচারেই। দামী কাপড় ওর পরনে, এত দামী কাপড় কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই। দারুণ সুন্দর একটা চেস্টনাট ঘোড়ার মালিক, স্যাডলটাও কারুকাজ করা-এই প্রথম দেখলাম এমন জিনিস। সবচেয়ে বড় কথা, সবকিছুতে নিজস্ব ধরন আছে ওর, সবার চেয়ে সে যে আলাদা, বুঝিয়ে দিতে কখনও কার্পণ্য করে না ট্যাপ।
ট্যাপ আত্মবিশ্বাসী মানুষ। নিজের সম্পর্কে নিশ্চিত। ওর চলাফেরায় এক ধরনের দৃঢ়তা রয়েছে যা আমাদের নেই। কখনোই অনিশ্চয়তায় ভোগে না সে, নিজের প্রত্যাশা বা চাহিদা সম্পর্কে সচেতন এবং জানে সেটা কিভাবে পেতে হবে। মাঝে মধ্যে আমার মনে হয়-সেজন্যে ক্ষীণ অপরাধবোধও হয় যে হয়তো ভুল করছি-অন্যদের ভাবনা বা অনুভূতি সম্পর্কে মোটেই পরোয়া করে না সে। সবকিছুর পরও, যে-যাত্রার পরিকল্পনা করেছি আমরা, সঙ্গী বা গাইড হিসেবে ট্যাপের তুলনা হয় না।
ইলেনের ব্যাপারটা ভিন্ন। মাঝে মধ্যে হাঁটতে বেরিয়ে গল্প করেছি আমরা, কয়েকবার রাইডও করেছি একসঙ্গে। পরস্পরের মধ্যে বোঝাপড়া আছে আমাদের, তা বলা যাবে না; কিন্তু এ কথা সত্যি যে চৌহদ্দিতে ও-ই সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে। টেক্সাসের এই পাহাড়ী অঞ্চলে ইলেন অটম্যান যে অনেকেরই কাঙিক্ষতা তাতে কোন সন্দেহ নেই।
টিম অটম্যানের তিন সন্তানের মধ্যে ও-ই বড়। অন্য দুজন ছেলে-একজনের চোদ্দ চলছে, অন্যজনের দশ।
দৃশ্যত, ট্যাপের ব্যাপারে কৌতূহলী হয়ে উঠেছে ইলেন। সম্ভবত ট্যাপও। মেয়েদের ব্যাপারে শুধু আগ্রহী নয়, রীতিমত সিরিয়াস ও, অনায়াসে মানিয়ে নিতে পারে যে-কোন মেয়ের সঙ্গে; ঠিক ঠিক পটিয়ে ফেলে।
ঘুরে আমার দিকে তাকালেন বাবা। এদিকে এসো, ড্যান। তোমার পরামর্শ দরকার আমাদের।
আমি দু’পা এগোতেই হেসে উঠল ট্যাপ, সবল, ভারী একটা হাত রাখল আমার কাঁধে, তবে কথা বলল, বাবার সঙ্গে: কি ব্যাপার, ট্রভেন? বাচ্চাদের পরামর্শ নেয়া শুরু করলে কবে থেকে?
ট্যাপের কণ্ঠে ক্ষীণ তাচ্ছিল্য থাকলেও গ্রাহ্য করলেন না বাবা। মানুষটা তিনি এমনই। দরকার না পড়লে, সাধারণত তর্ক এড়িয়ে যান। গরুর ব্যাপারে আমার চেনা যে-কোন লোকের চেয়ে ড্যানের জ্ঞান অনেক বেশি, শান্ত, মৃদু স্বরে উত্তর দিলেন তিনি। এবং এই ড্রাইভও নতুন নয় ওর কাছে।
তাই? সন্দিহান সুরে জানতে চাইল ট্যাপ, বিস্মিত। সত্যি ট্রেইল, ড্রাইভে গেছ?
হ্যাঁ। গত বছর বেক্সটার স্প্রিং হয়ে এক পাল গরু নিয়ে ইলিনয়সে গেছি।
বেক্সটার স্প্রিং? দাঁত কেলিয়ে হাসল সে। নিশ্চই গন্তব্যে পৌঁছার আগেই অর্ধেক গরু খুইয়েছ? বেক্সটার স্প্রিংয়ের আশপাশের বেয়াড়া আউটলদের সম্পর্কে জানি আমি।
উঁহু, ড্যানের পালের ক্ষতি করতে পারেনি ওরা, জানাল অটম্যান। সব গরু নিয়ে বহাল তবিয়তে ইলিনয়সে পৌঁছেছে ও, ভাল দামে বেচেছে।
দারুণ! আমার কাঁধে চাপ দিল ট্যাপ। পুরানো দিনের মত, দু’জনে মিলে অজেয় টীম হব আমরা, তাই না, বয়? আহ্, বাড়ি ফিরে এসে সত্যিই কাজের কাজ করেছি! ঘাড় ফিরিয়ে করালের দিকে তাকাল সে, ইলেন দাড়িয়ে আছে ওখানে। হঠাৎ বলল: তো, তোমরা জানো কি কি দরকার হবে আমাদের। সবকিছু গোছগাছ হলে ড্রাইভের দায়িত্ব নেব আমি।
ঘুরে দাঁড়িয়ে রেইলের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ইলেনের কাছে চলে গেল ও। নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকল টিম অটম্যান। মুখ যতই নির্বিকার দেখাক, বহুদিন ধরে তাকে চিনি আমি, জানি ব্যাপারটা অনুমোদন করছে না সে। মিনিট খানেক পর, আচমকা ঘুরে দাঁড়িয়ে বাড়ির দিকে চলে গেল অটম্যান। অন্যরাও একে একে সরে পড়তে শুরু করল। কেবল আমি আর বাবাই রয়ে গেলাম।