ফেলিপ জাপাটাকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। কঠিন, বেপরোয়া মানুষ। ধূর্ত এবং জেদী। আবার আসবে সে। মওকামত চেপে, ধরবে আমাদের। কোমাঞ্চেরা বা পেলো ডিউরো ক্যানিয়ন সম্পর্কে কেউ আলাপ-আলোচনা করুক চায় না ওরা, ওই ক্যানিয়নের ধারে-কাছেও কাউকে দেখতে অনিচ্ছুক; ইতোমধ্যে জাতভাইদের সামলাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে তাদের।
যতটা সম্ভব পালের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করব আমরা, স্যামকে বললাম আমি। শিগগিরই ডেলাওয়ারে পৌঁছতে হবে।
পানি আর স্বল্প সময়ের বিশ্রামের ফলাফল সত্যিই বিস্মিত করেছে আমাকে। দারুণ চটপটে মনে হচ্ছে গরুর পালকে। ঘাস প্রায় ছিলই না, কিন্তু প্রিকলি পিয়ারের মধ্যে চাহিদার যোগান খুঁজে পেয়েছে এরা, এগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কোন সমস্যাই হলো না, বলা যায় স্বেচ্ছায় এগোচ্ছে। যেন ওরা কোন ভাবে টের পেয়ে গেছে দীর্ঘ ড্রাইভের সবচেয়ে কঠিন অংশ পেছনে ফেলে এসেছে। সুদূর শুনেছি বা জানি, আমি অন্তত নিশ্চিত নই।
গরুগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে এগোতে বাধ্য করলাম, দু’পাশে রয়েছে ওয়াগনগুলো। স্যাম গার্ট আর ফ্রিম্যান স্কায়ার পেছনে রয়ে গেছে, পিছিয়ে পড়া বা রয়ে যাওয়া গরু নিয়ে আসবে; পাশাপাশি স্কাউটিঙের কাজও করবে। বাবা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, মাঝে মধ্যে পাল ছাড়িয়ে অনেকটা এগিয়ে যাচ্ছেন, অ্যাম্বুশ বা ট্র্যাকের খোঁজে রেকি করছেন। অন্যরা, যতটা সম্ভব পালকে ছোট করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
টোয়াহ্ ক্রীক শুধু নামেই ক্রীক, তলায় চকচকে বালি দেখতে পেলাম আমরা। বছরের অন্য সময়ে হয়তো পানি থাকে, কিন্তু এখন নেই। সুতরাং এগিয়ে চললাম আমরা। চলার পথে পরিত্যক্ত বা ভাঙা ওয়্যাগন থেকে কাঠ সগ্রহ করলাম, যেহেতু ট্রেইলের ধারে-কাছে বাফেলো চিপস আর মেস্কিট ছাড়া জ্বালানি হিসেবে ব্যরহার করার জন্যে কিছুই নেই। মেস্কিট বা বাফেলো চিপসগুলো বেশিরভাগই মাটি খুঁড়ে বের করতে হলো।
শীতল পরিবেশ বদলে তেতে উঠল, খরতাপে পুড়তে শুরু করল মাটির ওপর সবকিছু। গরুগলো পরস্পরের গা ঘেঁষে থাকায়, ওদের শরীর থেকেও যে-ভাপ বেরোল, সেটাও সহ্য করার মত নয়।
ঘোড়া দাবড়ে আমার পাশে চলে এল জুয়ানিতা।
জুয়ারেজের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার, খানিক দ্বিধার পর বলল ও। তুমি আমাদের না বাঁচালে এতক্ষণে হয়তো খুন হয়ে যেতাম।
এমন কিছু নয় ওটা।
কিন্তু এটুকুও আশা করিনি আমরা, জুয়ারেজ তো নয়ই…মেক্সিকান বলেই কারও কাছ থেকে কোন রকম সহায়তা আশা করে না ও।
কারও কারও কাছে হয়তো কথাটার গুরুত্ব আছে, কিন্তু আমাদের কাছে নেই। প্রথম যখন এখানে এসেছিলাম আমরা।মানে বাবার কথা বলছি-প্রতিবেশী মেক্সদের সাহায্য না পেলে বাবা বখনোই টিকতে পারতেন না।
তোমাদের ড্রাইভের ব্যাপারেও পরামর্শ করেছি আমরা। একটা জায়গার কথা জানি-খুব ভাল জায়গা। ইন্ডিয়ানদের হামলার ভয় আছে বটে, কিন্তু পশ্চিমের কোন জায়গাই বা নিরাপদ? সবখানে ইন্ডিয়ান হামলার আশঙ্কা আছে।
জায়গাটা কোথায়?
দেখিয়ে দেব। পাদ্রীরা যাতায়াত করত ওদিকে। ব্যবসায়ীরাও যেত। পানি, ঘাস সবই প্রচুর আছে। আমার তো ধারণা ওখানেই বসতি করতে পারো তুমি। ইন্ডিয়ান আক্রমণ ছাড়া কোন ঝামেলা হওয়ার কথা নয়।
তোমরা কি করবে-যাবে কোথায়?
বাড়ি যাব। মিগুয়েলের মা আর বউ আছে। স্ত্রীর কথা তো বলেনি ও! আমি তো ভেবেছি হয়তো তুমি আর ও…
না, সেনর, ও বিবাহিত। একসঙ্গে বড় হয়েছি আমরা, ভাইবোনের মত। ভাল বন্ধু বলতে পারো আমাদের। জুয়ারেজ বা ওর মা, দুজনেই ভালমানুষ…ওর বউয়ের সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক আমার।
ট্যাপ আর আমার মত। কখনোই সমস্যা হত না আমাদের মধ্যে।
প্রায় সারাটা দিন একসঙ্গে রাইড করলাম আমরা, এটা-সেটা নিয়ে কথা বললাম। গরুর পাল টানা এগিয়ে চলেছে। রাত নামার আগে প্রায় বারো মাইল পেছনে ফেলে এলাম।
ধুলো ঝড়ে হয়তো আমাদের ট্র্যাক মুছে যাবে। বিরাট স্বস্তির ব্যাপার। কিন্তু এ ধরনের এলাকায় মানুষ মাত্রই পানির উৎসের খোঁজে থাকে, থাকতে বাধ্য হয়, তাই একবার ট্র্যাক হারিয়ে ফেললেও পানির উৎসের কাছে এলে হারানো ট্র্যাক ফিরে পাওয়া সম্ভব।
পেকোসের কিনারে এটাই আমাদের শেষ বিরতি। ড্রাইভের উত্তরের কিনারায় দায়িত্বে রয়েছে চার্লি হীথ। এখান থেকে অনায়াসে ডেলাওয়ারের দিকে চলে যেতে পারব।
সন্ধের আগে আগে একটা অ্যান্টিলোপ শিকার করে ক্যাম্পে ফিরে এল হীথ। এত মানুষের তুলনায় সামান্য মাংস, কিন্তু স্রেফ রুচি বদলের সুযোগ হলো বলেই কৃতজ্ঞ সবাই।
পালের কোন গরু জবাই করার ইচ্ছে নেই আমাদের। নতুন ভাবে শুরু করতে প্রতিটা কমবয়েসী গরু দরকার হবে আমাদের, আর বলদগুলো সেনাবাহিনী বা অন্য কারও কাছে বেচে দেব। গরু বিক্রির টাকা রসদপত্র কিনতে লাগবে-পুরো একটা বছর কাটাতে হবে। আমরা নেহাতই গরীব মানুষ, গরুর পাল আর জনবলই আমাদের ভরসা। মূলধন।
সে-রাতে আগুনের পাশে এসে বসলাম সবাই। কাট্টহ্যান্ডদের ক্লান্ত মুখে নেচে বেড়াচ্ছে আগুনের শিখার প্রতিফলন। পরস্পরের কাছ ঘেঁষে বসেছি আমরা। জানা সব গান গাইলাম, গল্প করলাম বিভিন্ন বিষয়ে-তবে শিকার আর ভ্রমণের গল্পই হলো বেশি। ভেতরে ভেতরে হয়তো উদ্বেগ বা অনিশ্চয়তার দোলায় ভুগছি সবাই, কিন্তু পেকোস অঞ্চল ছেড়ে যাচ্ছি আমরা-যে-কোন লোকের জন্যে এটা বিরাট এক স্বস্তি।