কফির কাপ নামিয়ে রেখে পাইপে তামাক ভরল গার্ট। নিচু স্বরে কথা বলল যাতে অন্য কেউ শুনতে না পায়। কিছু মনে কোরো না, ড্যান, ট্যাপ এডলেকে স্রেফ স্বার্থপর একজন লোক মনে হয়েছে আমার। বলতে চাইছি, সবার আগে নিজের কথা ভাবতে অভ্যস্ত ও। ধরো, ওই জমিটা চাই আমরা। কিন্তু সঙ্গে যদি গরু না থাকে? এই এলাকায় কোন জমি ক্লেইম করতে হলে গরু থাকতেই হবে..জমিতে গরু চরাতে হবে।
আসলে নিজের স্বার্থে আমাদের ব্যবহার করতে চেয়েছে ও। জানত যে তোমরা কাউ-হাউসে থাকতে পারছ না, পশ্চিমে নতুন কোন জায়গায় নিঝঞ্ঝাট বসতি করতে চাইছ, তাই বস্ক রেভোরন্ডার কথা বলেছে তোমাদের। অথচ জায়গাটা নিয়ে ইতোমধ্যে কামড়াকামড়ি লেগে গেছে। আমার তো মনে হয়, পুরোদস্তুর রেঞ্জ ওঅরের মধ্যে গিয়ে পড়ব আমরা, হোনাস গান্টের পাশে হবে আমাদের অবস্থান…অর্থাৎ জমি দখলের জন্যে নিরীহ কিছু মানুষকে ব্যবহার করতে চেয়েছে ট্যাপ।
স্বীকার করছি পরিস্থিতি খুব খারাপ। গান্ট সম্পর্কে আর কি জানো?
যা বলেছি, নীচ জাতের লোক। যে-কোন অস্ত্র নিয়ে লড়াই করবে সে, এবং প্রচুর মানুষ খুন হয়ে যাবে ওর হাতে। কেউ কেউ বলে আসলে ও বাল্ড নেব পরিবারের লোক, মিসৌরীতে কেমন আধিপত্য ছিল ওদের, শুনেছ তো? সত্যি-মিথ্যে জানি না, তবে আমার কাছে মনে হয়েছে জর্জিয়ার লোক সে-কথাবার্তায় টান স্পষ্ট।
ট্রেইলে গরুর পাল নিয়ে এলাম আমরা। কাজটা সহজ হলো না। গরুগুলো অস্থির, অধৈর্য হয়ে উঠেছে। তেষ্টা মেটেনি ওদের, গতরাতের পর এ পর্যন্ত পেটেও কিছু পড়েনি; অথচ দৃষ্টিসীমায় পানি বা ঘাস-কোনটার চিহ্নমাত্র নেই।
সূর্য ওঠার আগেই গরুর পাল রওনা করিয়ে দিলাম আমরা, ধীর গতিতে এগোচ্ছে গরুগুলো। সেদিন অন্য যে-কোন দিনের চেয়ে বেশি খাটুনি গেল আমাদের। পানি না পাওয়ায় ফিরতি পথে কাউ-হাউস বা মিডল কঞ্চোয় চলে যাওয়ার কুবুদ্ধি উঁকি দিয়েছে ওদের মাথায়, সামনের কক্ষ এলাকার দিকে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। কোন একটাকে উল্টো ঘুরতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে অন্যগুলোও ফিরতি পথ ধরতে চাইছে।
ড্রাগের দায়িত্ব নিলাম আমি। এটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। পালের নেতৃত্ব এখন আমার, সুতরাং দায়িত্ববোধের কারণে কঠিন কাজটা আমারই করা উচিত। দুপুরের দিকে একটা ব্লফের কিনারায় পৌঁছলাম আমরা। প্রায় আধ-মাইলের মত জায়গায় ছায়া পড়েছে। সব গরু ছায়ার মধ্যে এনে থামলাম। দুপুরের সময়টা এখানেই কাটিয়ে দেয়ার ইচ্ছে।
ওয়াগনে ঢুকে দেখলাম উঠে বসেছে জুয়ারেজ। আগের চেয়ে বেশ সুস্থ এবং সবল দেখাচ্ছে ওকে। শিগগিরই রাইড করতে পারব আমি, স্মিত হেসে বলল সে। তোমাদের সাহায্য করতে পারব।
আশপাশে তাকালাম, কাউকে চোখে পড়ল না। জুয়ারেজ, নিউ মেক্সিকোয় যাচ্ছি আমরা।
সি, জানি আমি।
মিম্বার্স ভ্যালি চেনো তুমি?
সি, টানটান হয়ে গেল মেক্সিকানের মুখ, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে আমাকে।
ওখানকার জমি কি ক্লেইম করা?
সামান্য দ্বিধা করল সে। সি…বেশিরভাগই ক্লেইম করেছে লোকজন। ঝামেলাও হয়েছে সেজন্যে। তবে উপত্যকাটা বিশাল-হয়তো আমি যেটার কথা বলছি সেটা নয়।
আর লেক ভ্যালি?
সি…চিনি। ওখানেও ঝামেলা হচ্ছে, অ্যাপাচীরা কাউকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না…সাদা মানুষ বা মেক্সরাও রেহাই পাচ্ছে না। মেক্সিকানদের মধ্যে অনেকেই খারাপ, যেমন ফেলিপ জাপাটা।
কি মনে হয় তোমার, ওখানে গিয়ে ঝামেলায় পড়ব? আমরা যদ্দূর জানতাম উপত্যকাটা উন্মুক্ত। কেউ ক্লেইম করেনি-তাই শুনেছি। কিন্তু আসলে উন্মুক্ত নয়, তাই না?
না…সত্যিই ঝামেলায় পড়তে হবে তোমাদের। সেনর, আফসোস হচ্ছে আমার…রাইড করতে পারতাম যদি! সবকিছু সামলাতে ধকল যাচ্ছে তোমার।
ওদিকে কখনও গেছ নাকি-এই ট্রেইল ধরে?
না.. উত্তর দিক থেকে এসেছি আমি। পালানোর ধান্ধায় ছিলাম, আহত হওয়ার পর পানির খোঁজে কঞ্চোর দিকে যাচ্ছিলাম।
বিকেলের দিকে রওনা দিলাম আমরা। জুয়ানিতা পুরুষদের মতই রাইড করছে, ড্রাইভে খাটছে সাধারণ কাউবয়ের মত। বিশাল কালো ঘোড়ায় চড়েছে ও। বিস্ময়কর হলেও, ঘোড়াটা কাটিং-হর্স হিসেবে দক্ষ, যা দরকার ছিল আমাদের।
প্রতিটি লোককে দরকার আমাদের এখন। ধীর গতিতে চলছে গরুগুলো, পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছে কিংবা উল্টোদিকে চলে যেতে চাইছে; কিন্তু ওগুলোকে এগোতে বাধ্য করলাম আমরা-টানা তাগাদার মধ্যে রাখতে হলো। সন্ধে গড়িয়ে রাত হলো, থামলাম না আমরা, তারার আলোয় পথ চলতে অসুবিধে হচ্ছে না-টানা পশ্চিমে এগিয়ে চলেছি। একসময় থামলাম আমরা, কি গরুর দল থামতে চাইছে না, বিশ্রাম নেওয়ার ইচ্ছে দেখা গেল না ওদের মধ্যে, অস্থির ভঙ্গিতে নড়াচড়া করছে। বাধ্য হয়ে হাল ছেড়ে দিলাম আমি।
বাবা, ওদেরকে বরং হাঁটার মধ্যে রাখাই ভাল। বিশ্রাম নেওয়ার ইচ্ছে নেই ওদের, হয়তো হাঁটবে ওরা।
তো, আবার যাত্রা করলাম আমরা। ক্লান্তির চরমে পৌঁছে গেছি সবাই। গর্তে বসে গেছে চোখ, কিন্তু থামার উপায় নেই। ধুলোর অত্যাচারে হাঁসফাঁস অবস্থা সবার।
সকাল হওয়ার পরও থামলাম না আমরা। পুব আকাশে সূর্য উঠল অগ্নিবলয়ের মত, গাঢ় টকটকে লাল রঙ। বাতাস স্থির। বিন্দুমাত্র কাঁপন নেই কোথাও। নিঃশ্বাস নেয়া হয়ে উঠল আয়াসসাধ্য। পুরো একটা দিন টানা চলার পর, এবার থামার লক্ষণ দেখা গেল গরুগুলোর মধ্যে, কিন্তু থামলাম না আমরা।