ঝামেলা কি শেষ হয়নি আমাদের? বিরক্ত স্বরে শঙ্কা প্রকাশ করল সে, চোখ কুঁচকে দূরে নাচতে থাকা তাপতরঙ্গের দিকে তাকাল।
কিছুই চোখে পড়ছে না…
ভাবছি ট্যাপ কোথায় গেল।
আমি ভাবছি ইলেন ট্যাপকে খুঁজে পেয়েছে কিনা। বোকার মত ওর পিছু নিয়েছে মেয়েটা। তারপর আমার দিকে ফিরল সে। আমরা সবাই মনে করতাম ওকে পছন্দ করো তুমি, তোমার সঙ্গেই গাঁট বাঁধবে ইলেন।
কয়েকবার গল্প করেছি, আমরা ব্যস, এরচেয়ে গভীর কোন সম্পর্ক ছিল না আমাদের।
এগিয়ে গেলাম আরা। ঘামে ভিজে গেছে ঘোড়ার শরীর। আমাদের অবস্থাও তথৈবচ। ঘাম আর ধুলোর অত্যাচারে গা চটচট করছে। প্রখর রোদে চোখ কুঁচকে তাকালাম। সামনে বিস্তৃত প্রান্তর পড়ে রয়েছে, ঘাস নেই বলতে গেলে, পানির চিহ্নমাত্র নেই কোথাও…
সঙ্গে মেয়েরা না থাকলে… বললাম আমি।
পালের আগে আগে পুরো একদিনের পথ এগিয়ে এসেছি আমরা। পেছনে পানির উৎস রয়েছে, হয়তো একটা দিন কোন রকমে চলে যাবে; কিন্তু সামনে পানির চিহ্ন নেই কোথাও, অথচ হর্স হেড ক্রসিং এখনও অনেক দূরের পথ।
অনেক গরু মারা পড়বে, সিগারেট ধরাল কার্ল। পানি খুঁজে না পেলে সত্যিই অনেক গরু হারাতে হবে আমাদের।
পানি থাকলেও ক্ষারে ভরা থাকবে। পানির ওপর ক্ষারের ঘন স্তর পড়বে।
হ্যাট সরিয়ে হাটবেন্ড মুছলাম। সূর্য এখন পিঠ নয়, চাঁদি তাতাচ্ছে। ভাগ্যিস ঘন চুল আছে আমার মাথায়।
একবার অগভীর একটা জায়গায় কিছু ঘাস চোখে পড়ল। গ্ল্যামা ঘাস, তবে শুকিয়ে মৃতপ্রায় এখন। ঘোড়া দুটো সানন্দে শুকনো ঘাস নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ল। জায়গাটার কিনারায় উঠে এসে সামনের বিস্তৃত অঞ্চলের দিকে তাকালাম। কি মনে হয় তোমার, কার্ল, অন্য কোন পথ ছিল ড্রাইভের জন্যে?
শ্রাগ করল সে। মনে হয় না, আঙুল তুলে একটা জায়গা দেখাল ও। কি এটা?
কাছাকাছি দুই পাহাড়ের ফাঁকে একটা রাস্তার ওপর কয়েকটা বাজার্ড উড়ছে, চক্কর মারছে আয়েশী ভঙ্গিতে। দু’তিনটে বাজার্ড। সংখ্যাটা নেহাতই অল্প।
গত কয়েক ঘণ্টায় জীবন্ত কোন প্রাণী দেখলাম এই প্রথম, মন্তব্য করল ও। নিশ্চই কিছু একটা খুঁজে পেয়েছে ওরা।
কিছু যদি পেয়েই থাকে, জিনিসটা মৃত।
ঘোড়াকে হুঁটিয়ে নিয়ে এগোলাম, অস্ত্রের কাছাকাছি রয়েছে হাত। প্যাটার্সনটা আমার হাতে, আলতো ভাবে ধরে রেখেছি মুঠিতে। ব্যারেলের ব্যাপারে সচেতন, কারণ সূর্যের তাপ আর গরমে তেতে আছে ওটা।
মৃত একটা ঘোড়া চোখে পড়ল প্রথমে। প্রায় একদিন আগে মারা গেছে। বাজার্ড থাবা বসায়নি এখনও। কাঁধে মার্কা দেখলাম-রকিং এইচ। হর্নার ব্র্যান্ড।
পাহাড়ের ওপর উঠে এসে ওপাশের অ্যারোয়ায় নজর চালালাম। অস্ফুট স্বরে বিস্ময় প্রকাশ করল কার্ল, ফ্যাকাসে এবং অসুস্থ দেখাল মুখটা। এমনিতে কঠিন মানুষ হিসেবে পরিচিত সে, সামনের দৃশ্য নিশ্চই দারুণ ধাক্কা দিয়েছে ওকে। আমার ঘোড়াটা এগোতে চাইছিল না, কিন্তু কার্লের ঘোড়ার পাশে যেতে বাধ্য করলাম ওটাকে।
দৃশ্যটা ভয়ঙ্কর এবং রীতিমত অস্বস্তিকর। যেখান থেকে দেখছি আমরা, আরও ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে। অ্যারোয়ার তলায় মানুষ আর ঘোড়ার লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে…প্রথম দৃষ্টিতে সংখ্যাটা আন্দাজ করা কঠিন হলো।
মৃতদের শরীরে একটা সুতোও নেই। সবার চোখ উপড়ানো। কোমাঞ্চিরা যখন ছেড়ে গিয়েছিল, কেউ কেউ নিশ্চই জীবিত ছিল, কারণ অ্যারোয়োর মাটিতে ক্রল করার প্রচুর চিহ্ন দেখা যাচ্ছে, অন্ধের মত এখান থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেছে লোকগুলো-যেন অসহায় কোন পশু আশ্রয় খুঁজেছে। যে-কোন আশ্রয়।
মৃত্যুকূপে নেমে এসে চারপাশে নজর চালালাম। জীবনে এরচেয়ে তিক্ত এবং বীভৎস দৃশ্য চোখে পড়েনি আমার। ঘটনা পরিষ্কার হয়ে গেছে। কাউ-হাউস থেকে আমাদের অনুসরণ করে এসেছে এরা-এদের অনেকেই আমাদের গরু চুরি করছিল এবং গরুগুলো উদ্ধার করেছিলাম কয়েকদিন আগে।
ঘুরপথে, বড়সড় চক্কর কেটে সামনে চলে এসেছিল এরা, এখানে এসে অবস্থান নিয়েছিল আমাদেরকে অ্যাম্বুশ করার জন্যে। কিন্তু, হঠাৎ আক্রমণ করেছে কোমাঞ্চিরা, কিছুই টের পায়নি এরা। ওরা জানত যে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে, সেজন্যেই আগুন জ্বেলে খাবার তৈরির আয়োজন করেছিল-ছাই আর কয়লা পড়ে রয়েছে এক জায়গায়, কয়েকটা পাত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
এগারোজন, গুনলাম।
অন্যরা কোথায়? অন্য কোথাও সরে গেছে। নাকি ইন্ডিয়ানরা বন্দী করে নিয়ে গেছে?
অ্যারোয়ো থেকে উঠে এসে স্যাডল ছাড়লাম। কিনারে কিছু পার্থর অপঘাত জড়ো করলাম, যাতে ট্রেইল থেকে অ্যারোয়োটা কারও চোখে না পড়ে। একইসঙ্গে কিছু পাথর তলায় ফেলে দিলাম। মোটামুটি ঢাকা পড়ল লাশগুলো।
নেকড়ের দল লাশ নষ্ট করতে পারবে না, মন্তব্য করল কার্ল। গত কয়েকদিন একটা নেকড়েও চোখে পড়েনি।
থাকবে কি করে, সাপ ছাড়া খাওয়ার কিছু আছে নাকি ওদের জন্যে? ট্যাপের কাছে শুনেছি জায়গাটা সাপে ভরা।
মনে এবং পেটে অস্বস্তি নিয়ে অ্যারোয়ো থেকে সরে এলাম আমরা। হয়তো শত্রু ছিল এরা, কিন্তু শত্রুর এমন ভয়াবহ পরিণতিও চায় না সুস্থ কোন লোক। কোমাঞ্চিদের হাতে কেউ যখন মারা পড়ে, মৃত্যুটা হয় প্রলম্বিত এবং সীমাহীন যন্ত্রণার!
জায়গাটার চারপাশে চক্কর মেরে ইন্ডিয়ানদের ট্র্যাক খুঁজে পেলাম। অন্তত চল্লিশজন ছিল ওরা, বেশিও হতে পারে। উত্তরে চলে গেছে রেডস্কিনরা, অবস্থা দেখে মনে হলো না আশপাশে থাকার ইচ্ছে আছে ওদের। পানির অভাবই এর কারণ। কিন্তু রুক্ষ এ প্রান্তর নিশ্চই পাড়ি দিয়েছে ওরা, আমাদের জানা নেই এমন পানির উৎসের অবস্থান জানা থাকতে পারে ওদের; যদিও চারপাশের এলাকা দেখে মনে হচ্ছে তেমন সম্ভাবনা একেবারে কম।