অতঃপর, একরাতে সবকিছু বদলে যায়।
আমি যেই মাত্র টেলিভিশনটি বন্ধ করে বিছানায় যাওয়ার কথা ভাবছিলাম, ঠিক সেই মুহূর্তে আমার দৃষ্টি টেলিভিশনের পর্দায় আটকে যায়। পর্দায় তখন রকেট-এ করে একটি মহাশূন্যযান উৎক্ষেপণের দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল। আমি শেষ ৫ সেকেন্ড সময় গণনা শুনতে পেলাম ৫-৪-৩-২-১, অতঃপর আগুন ও ধোঁয়ায় টেলিভিশন পর্দাটি ভরে উঠলো এবং সঙ্গে সঙ্গে রকেট-টির উৎক্ষেপণ।
মনে মনে ভাবলাম ঠিক আছে, আগামীকাল ভোরে ঠিক এইভাবে আমি নিজেকে বিছানা থেকে তুলে দেব। একটি রকেট উৎক্ষেপণের মতো। আমি খুব দ্রুত কাজটি করব যাতে করে নিজের সঙ্গে কথা বলার সময় না পাওয়া যায়। এটা ছিল আমার একটি বোধ যা আমি সহজেই আবার বাতিল করে দিতে পারতাম। সৌভাগ্যক্রমে আমি দেইনি। আমি এর উপর কাজ করেছিলাম।
আসলে আমি আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে চেয়েছিলাম। আমি আমার বৈবাহিক সম্পর্কটি ধ্বংস হয়ে যাক তা দেখতে চাইনি কিংবা নিজেকে একজন খারাপ মা হিসেবেও দেখতে চাইনি। আমি আর্থিক নিরাপত্তা চেয়েছিলাম। আমি নিজেকে নিয়ে সুখী ও গর্ববোধ করতে চেয়েছিলাম।
পরিবর্তিত হওয়ার জন্য আমি বেপরোয়া ছিলাম। শুধু জানতাম না কেমন করে।
এটা আমার গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। বিছানা থেকে নিজেকে তুলে আনার এই প্রবৃত্তিটি ছিল আমার ভেতর থেকে কারো কথা বলা। এটা শোনা ছিল আমার প্রান্তিক পয়েন্ট। এবং এর নির্দেশনা অনুসরণ করা ছিল জীবন বদলে দেওয়ার মতো। আপনার শরীর ও মস্তিষ্ক আপনাকে উঠে দাঁড়াতে এবং মনোযোগ দিতে সংকেত পাঠাবে। কিছু সময়ের জন্য আপনার মনে হতে পারে আপনার এই বোধগুলো অর্থহীন, কিন্তু আপনি যখন এদের প্রতি সম্মান দেখাতে শুরু করবেন, দেখতে পাবেন আপনার জীবন বদলে যেতে শুরু করেছে।
এখানে আপনার প্রবৃত্তিগুলোর উপর কাজ করার চাইতে আরো বেশি কিছু রয়েছে যাকে বলা যায়– নিজের অন্তরকে বিশ্বাস করা। অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যলয়ের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, আপনার মস্তিষ্ক এবং প্রবৃত্তিগুলোর মাঝে একটি শক্তিশালী যোগাযোগ রয়েছে যা অত্যন্ত ক্রীয়াশীল। আপনি যখন একটি লক্ষ্য স্থির করেন, আপনার মস্তিষ্ক একটি কার্যতালিকা প্রস্তুত করে। যখনই আপনি আপনার লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছুবেন, আপনার মস্তিষ্ক আপনার প্রবৃত্তিগুলোকে লক্ষ্য পূরণের জন্য তাগাদা দেবে।
ধরা যাক আপনি আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতিকল্পে একটি লক্ষ্যস্থির করেছেন। এখন আপনি যদি আপনার শোবার ঘরে পায়চারি করেন, তাতে করে কোনো লাভ হবে না। কিন্তু আপনি যদি জিমনেসিয়াম-এর পথে হাঁটেন, তাহলে আপনি লক্ষ্যপূরণের কাছাকাছি যেতে শুরু করবেন। আপনি যখন জিমনেসিয়াম গিয়ে পৌঁছুবেন, আপনার মনে হতে থাকবে– ব্যায়াম শুরু করা উচিত। এটা হলো প্রবৃত্তি যা আপনাকে আপনার লক্ষ্য স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এটাকে আপনি অন্তর্গত জ্ঞানও বলতে পারেন এবং এর প্রতি মনোযোগী হওয়া জরুরি, আপনার প্রবৃত্তিটি ছোট কিংবা অর্থহীন যাই মনে হোক না কেন।
অবচেতনভাবে আমার মস্তিষ্ক টেলিভিশনে রকেট উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়াটির প্রতি মনোযোগী হতে আমাকে সংকেত দিচ্ছিল। নির্দিষ্ট সেই ৫ সেকেন্ড সময়ে আমার মস্তিষ্ক আমাকে কিছু পরিষ্কার দিক-নির্দেশনা দিয়েছিল–
মেল, রকেট উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়াটির প্রতি মনোযোগী হও। মেল, ধারণাটি আত্মস্থ কর এবং কাজ কর। থেমো না এবং চিন্তা করো না। এ ব্যাপারে নিজের সঙ্গে বেশি কথা বলতে যেয়ো না। মেল, আগামীকাল ভোরে ঠিক এভাবেই নিজেকে বিছানা থেকে তুলে দিও।
এটা হলো সেই একটি ব্যাপার যা আমি ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহারের মাধ্যমে শিখেছিলাম। যখন এটা আপনার লক্ষ্য, স্বপ্ন এবং জীবন বদলে দেবে, আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার অন্তর্গত জ্ঞান একটি প্রতিভা। আপনার লক্ষ্য সম্পর্কিত তাড়না, আকাঙ্ক্ষা এবং প্রবৃত্তিগুলো আপনাকে পথ দেখাবে। আপনাকে নিজের উপর বাজি ধরা শিখতে হবে। ইতিহাস প্রমাণ করে যে, আপনি যখন নিজের উপর যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্বাস রাখবেন এবং তার উপর কাজ করবেন, তখন আপনি বুঝতেও পারবেন না যে আপনার সর্বশ্রেষ্ঠ অনুপ্রেরণাটি কখন কাজ শুরু করে দিয়েছে এবং তা আপনাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কিছু উদ্ভাবন এভাবেই আবিষ্কৃত হয়েছিল। ১৮২৬ সালে জন ওয়াকার কাঠি দিয়ে রাসায়নিক মিশ্রিত একটি পাত্রে নাড়তে নাড়তে দেখতে পান কাঠিটির অগ্রভাগে আঠালো পদার্থের একটি দলা তৈরি হয়েছে এবং তা জ্বলজ্বল করছে। আর এখান থেকেই আবিষ্কৃত হয়েছিল ম্যাচবাতি/ম্যাচকাঠি। জন ওয়াকার তার প্রবৃত্তি অনুসরণ করে সফল হয়েছিলেন। ১৮৪১ সালে জর্জ দ্য মেন্ট্রাল ভেলক্রো আবিষ্কার করেছিলেন যখন তার নজরে আসে যে কতটা সহজে তার কুকুরের পশমের সাথে শামুকের খোল লেগে থাকে। ১৯৭৪ সালে আর্ট ফ্রাই তার পোস্ট ইট নোট-এর ধারণাটি পান, কারণ স্তবগ্রন্থের পৃষ্ঠায় রবিবার গির্জাসেবা শুরু হওয়া পর্যন্ত একটি বুকমার্ক রাখার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বুকমার্কটি সরিয়ে নেবার সময় যেন পৃষ্ঠাটির কোনো ক্ষতি না হয় তাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন ছিল।
দেখা যাক কিভাবে জন্ম হয়েছিল ফ্রাপুচ্চিনিও। ১৯৯২ সালে সান্তা মনিকোতে অবস্থিত স্টারবাকস-এর ম্যানেজার লক্ষ্য করলেন, যখনি বাইরে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় তাদের বিক্রি পড়ে যায়। তার প্রবৃত্তি তাকে একটি হিমায়িত পানীয় তৈরি করতে বলছিল এবং তিনি তা অনুসরণ করেছিলেন। তিনি একটি ব্লেন্ডার চাইলেন, রেসিপি তৈরি করলেন এবং তার ভাইস প্রেসিডেন্ট-কে একটি নমুনা পাঠালেন। পরের বছর তার দোকানে বিক্রি শুরু হলো ফাপুচ্চিনিও।