ইতিমধ্যে ক্রীস তার এম-বি-এ সম্পন্ন করে বোস্টন শহরে তার একজন প্রিয় বন্ধুকে সাথে নিয়ে একটি পিজা রেস্টুরেন্ট শুরু করলো যা প্রথমদিকে খুব ভালো চলেছিল। তাদের প্রথম ঠিকানাটি ছিল একটি বাড়ি এবং তাদের প্রতিষ্ঠানটি বোস্টন এলাকার একটি সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কৃতও হয়েছিল। সঙ্গে ছিল আরো কিছু আঞ্চলিক স্বীকৃতি এবং তাদের তৈরি পিজা ছিল সত্যিই অসাধারণ। শিগগিরই তারা তাদের দ্বিতীয় রেস্টুরেন্ট চালু করা, একটি বড় মুদি দোকান এবং পরবর্তী পর্যায়ে পাইকারি ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা করছিল। বাইরে থেকে দেখে মনে হতো তাদের ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে উঠছে কিন্তু আর্থিক হিসাব বিবরণী দেখে বোঝা যাচ্ছিল প্রকৃত প্রস্তাবে ব্যবসার চাকা বন্ধ হতে শুরু করেছে। তারা তাদের ব্যবসা খুব দ্রুতগতিতে বাড়াচ্ছিল। দ্বিতীয় রেস্টুরেন্টটি চালু করার পর তা ঠিকমতো দাঁড়ালো না এবং পাইকারি ব্যবসাটি পরিচালনার জন্য আরো অধিক নগদ অর্থের প্রয়োজন পড়লো। অবস্থা খুব দ্রুত ভীতিকর পরিস্থিতির রূপ নিল।
আরো অনেক ব্যবসা মালিকদের মতো আমরাও আমাদের বাড়ির স্টক শেয়ার এবং ভবিষ্যতের সঞ্চয়গুলো রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলাম যা চোখের সামনে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল। আমাদের আর কোনো সঞ্চয় অবশিষ্ট ছিল না এবং বাড়ির স্টক শেয়ারের অংশটি আটকা পড়ে গিয়েছিল। কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রীস-এর উপার্জন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ঋণের বোঝা আমাদের বাড়িটিকে আঘাত করে বসলো।
আমার পেশাগত সমস্যা, ক্রীসের ব্যবসা নিয়ে সংগ্রাম, পাহাড়সম আর্থিক চাপ, অ্যাটর্নিদের কাছ থেকে ভীতিকর চিঠি এবং ক্রমাগত ব্যাংক থেকে চেক ফেরত আসতে লাগলো। এতো নিরলসভাবে পাওনাদারদের তাগাদা আসতে লাগলো যে আমরা আমাদের ফোনের সংযোগটি খুলে রাখতে বাধ্য হলাম। আমার বাবা যখন আমাকে মর্টগেজের কিস্তি পরিশোধ করার জন্য টাকা পাঠালো, আমি যুগপৎ কৃতজ্ঞতা ও লজ্জিতবোধ করলাম। আমরা চেষ্টা করছিলাম মানুষজনদের মাঝে উপস্থিত থাকার, কারণ আমাদের অনেক বন্ধু ও আত্মীয় পরিজন আমাদের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু এতে করে কেবল উল্টো চাপই সৃষ্টি হচ্ছিল। ক্রীস ও তার বন্ধু ব্যবসাটিকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিল। আমি চেষ্টা করতাম নিজের মুখ বন্ধ রাখতে কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমি বিব্রত, বিপর্যস্ত এবং ভীত হয়ে পড়েছিলাম। আমাদের আর্থিক সমস্যাগুলো আমাদের মাঝখানে দূরত্ব তৈরি করছিল। আমি তাকে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার জন্য এবং সে আমাকে মিডিয়া পেশার জন্য দায়ী করতে শুরু করলো। আমরা সত্যি বলতে কি, উভয় উভয়ের প্রতি দোষারোপ করে যাচ্ছিলাম।
আপনি চাইলে আপনার জীবন প্রকৃত অর্থে যতটা খারাপ একে তার চাইতে আরো অনেক বেশি খারাপ করে তুলতে পারেন। আমিও করেছিলাম। আমি অতিরিক্ত মদ্যপান শুরু করি। আমি আমার সেই সব বন্ধুদের ঈর্ষা করতে শুরু করি যাদের কোনো কাজ করতে হতো না। আমি বিদ্বেষপূর্ণ হয়ে উঠছিলাম এবং সহজেই কোনো বিষয়ের উপর রায় দিয়ে দিতাম। সমস্যাগুলো আমার কাছে এত বড় মনে হতে লাগলো যে নিজেকে আমি এই বলে বোঝালাম– এখানে আমার কিছুই করার নেই। অন্যদিকে মানুষজনদের মাঝখানে আমি এমন ভাব দেখাতে লাগলাম– যেন কিছুই হয়নি।
গোপনে আমি এটা দেখতে পাচ্ছিলাম যে, আয়নায় নিজেকে দেখা ও নিজেকে তুলে দাঁড় করানোর চাইতে নিজের জন্য দুঃখবোধ করা এবং ক্রীস ও তার ব্যবসা নিয়ে করা সংগ্রামকে দোষারোপ করাটা অনেক বেশি সহজ। আমার প্রকৃত অবস্থা বোঝানোর সর্বোত্তম উপায় ছিল এটা বলা যে– আমি আটকা পড়ে গেছি। মনে হচ্ছিলো নিজের জীবন ও সিদ্ধান্তগুলোর মাঝে আমি আটকা পড়ে গেছি। আমাদের আর্থিক সমস্যাগুলোর মাঝে আমি আটকা পড়ে গেছি। এবং আমার মনে হচ্ছিলো আমার সঙ্গে আমার হতাশাজনক সংগ্রামও আটকা পড়ে গেছে। আমি জানতাম সবকিছু ঠিক করার জন্য আমাকে কি করতে হবে কিংবা কি করা উচিত। কিন্তু জিনিসগুলো করার জন্য নিজেকে আমি ঠিক তৈরি করতে পারছিলাম না। বিষয়গুলো ছিল ছোট ছোট। যেমন– সময়মতো বিছানা ছেড়ে ওঠা, ক্রীস-এর প্রতি মনোযোগী হওয়া, বন্ধুদের সমর্থন আদায় করা, মদ্যপান কমিয়ে আনা এবং নিজের প্রতি আরো একটু বেশি যত্নবান হওয়া।
শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম করার ব্যাপারে আমার চিন্তা করা দরকার ছিল, কিন্তু আমি তা করতে পারছিলাম না। কথা বলার জন্য বন্ধুদের কল করা উচিত ছিল, কিন্তু আমি করিনি। আমি জানতাম যে মিডিয়া জগতের বাইরে একটি কাজের জন্য আমি যদি চেষ্টা করি তাহলে সেটা হয়তো আমাকে সাহায্য করবে, কিন্তু নিজেকে উৎসাহিত করতে আমি ব্যর্থ হই। আমি পুনরায় প্রশিক্ষণ ব্যবসায় ফিরে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলাম না কারণ নিজেকে আমার ব্যর্থ মানুষ মনে হচ্ছিলো। আমি জানতাম কি করা প্রয়োজন কিন্তু বাস্তবে তা করার জন্য নিজেকে আমি প্রস্তুত করতে পারছিলাম না। আর এটাই কোনো পরিবর্তন প্রক্রিয়াকে কঠিন করে তোলে। কোনো কিছু পরিবর্তন করতে হলে আপনাকে তাই করতে হবে যা আপনার কাছে মনে হবে কঠিন ও ভয়ঙ্কর। পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন মনোবল ও আত্মবিশ্বাস এবং আমি এই দুটির বাইরে চলে গিয়েছিলাম।