তিনি হাসলেন এবং মৃদু হাত নাড়লেন। আমরা সবাই প্রতি উত্তরে হেসে তার দিকে হাত নাড়ালাম। এবং আমার মনে আছে আমি তাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নীরবে জানিয়েছিলাম যে সব ঠিক হয়ে যাবে। মনে আছে ঐ মুহূর্তে ভয়ের একটি আকস্মিক যন্ত্রণা আমি অনুভব করেছিলাম। অতঃপর তিনি দোল খাওয়া দরজার ভেতর দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না যে তার অস্ত্রোপচার এতটা খারাপ হতে যাচ্ছে এবং এর জটিলতাগুলো শেষ পর্যন্ত তাকে মেরে ফেলবে।
আমি বর্তমানে ফিরে এসে ক্যাব-এর পেছনের সিটে বসে বাবার কথা শুনেছিলাম। আমি কল্পনা করতে পারি বাবা হাসপাতালের বারান্দাপথে বিদায়সূচক হাত নাড়ছেন আর আমি ভীত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি। জানিনা কেন, কিন্তু আমি জানতে চেয়েছিলাম বাবাও ভয় পেয়েছেন কিনা। তাকে একথা জিজ্ঞেস করার একটি প্রবৃত্তি আমার ভেতরে ছিল কিন্তু অবিলম্বে আমি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম। নিজেকে বলতে শুরু করেছিলাম—
এটা জিজ্ঞেস করো না, এটা তাকে অস্থির করে তুলবে। সে অবশ্যই ভীত, তুমি বুঝতে পারছো না? বিষয়টি হালকা ও ইতিবাচক রাখ। তাকে চাপ দিও না, এ্যুরিজমটি বিস্ফোরিত হতে পারে।
এটাই ছিল ধাক্কা দেবার মুহূর্ত। কোনো কিছু লুকিয়ে রাখা ঠিক নয়।
৫-৪-৩-২-১
বাবা তুমি কি ভীত?
অন্য প্রান্তে নীরবতা। আমি প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করার জন্য অনুতাপ বোধ করা শুরু করলাম। তার পরের কথাটি শুনব বলে আশা করিনি।
আমি ভীত নই। আমি কিছুটা স্নায়বিক উত্তেজিত কিন্তু চিকিৎসকদের উপর আমার সত্যিই আস্থা রয়েছে। জানো মেল, আমি আসলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।
ভাগ্যবান?
হ্যাঁ, আমাকে মেরে ফেলার আগেই এটাকে ঠিক করার একটি সুযোগ আমি পেয়েছি। এবং দিনের শেষে যদি কিছু হয়েই যায়, আমার কোনো দুঃখ নেই। আমার বাবার স্ট্রোক করার পর মাকে তার যে যত্ন নিতে দেখেছি তা ছিল ভয়ঙ্কর। আমার কাছে জীবনের গুণগত মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমার জীবনমান যা আমি আশা করেছিলাম তার চাইতেও বেশি। ছোট বয়সে আমি সবসময় ডাক্তার হতে চেয়েছি এবং আমি হয়েছি। তোমার মা এবং আমি একসাথে একটি চমৎকার জীবন কাটিয়েছি। তুমি এবং তোমার ভাই বড় হয়েছ। আমি মূলতঃ আমার জীবনের সঙ্গে যা করতে চেয়েছিলাম তাই করেছি। আর এটাই হলো– যা তুমি চাইতে পার…জীবনকে উপভোগ করার জন্য আরো কিছুটা সময়।
এটা ছিল বাবার সাথে শেয়ার করা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহত, আর ফাইভ সেকেন্ড রুল-টির সাহায্য ছাড়া আমি হয়তো ঐ প্রশ্নটি করার মনোবল খুঁজে পেতাম না। তারপর তিনি যোগ করলেন :
আসলে আমি আরো একটি জিনিস করতে চাই। আমি আফ্রিকা দেখতে চাই এবং যদি ৯০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকি তাহলে প্লেন থেকে লাফিয়ে পড়তে চাই, জর্জ এইচ বুশ তার ৯০তম জন্মদিনে যেমনটি করেছেন।
আমি হেসে বলি– বাবা তুমি করবে, তুমি করবে।
বাবার সাথে আমার সেই কথোপকথন আমাকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে করিয়ে দিয়েছিল। সম্পর্কের বাস্তবতা পেতে সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করা একটি বোকাদের বার্তা। কথোপকথনের কোনো সঠিক সময় নেই, কঠিন প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করে ফেলুন, বলুন– আমি তোমাকে ভালোবাসি অথবা সত্যি শোনার জন্য সময় নিন।
কখনো কখনো এটি শুধুমাত্র একটি কঠিন প্রশ্ন নয় যা আপনি জিজ্ঞেস করতে চান। এটা আসলে দুজনের মাঝে বিরাজমান যে নীরবতা, তার সমাপ্তি টানা। অনেক বছর হল কোর্টনি তার বাবার সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টেনেছেন, কিন্তু তিনি তা সংশোধন করতে চান। তিনি এটা ছেড়ে দেননি কিংবা এটা নিয়ে অতি-চিন্তাও করেননি, যেমনটি তিনি আগে করতেন। তার পরিবর্তে তিনি ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করে নিজের প্রবৃত্তির উপর বিশ্বাস রেখে ফোনটি হাতে তুলে নিয়েছিলেন এবং বাবাকে ফোন করেছিলেন। তিনি শুধু ৫ ৪-৩-২-১ গণনা করে কল বাটনটি চেপে দিয়েছিলেন। লক্ষ্য করুন, আপনার জীবন বদলে দিতে শুধুমাত্র ৫ সেকেন্ড সময় দরকার।
মাইক তার নিজের বিয়েতে হওয়া ঘটনা লুকিয়ে রেখেছিলেন যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি নিজের সঙ্গে সৎ হওয়ার মনোবল খুঁজে পেয়েছিলেন।
আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে আবারো সেইসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি যা আমি উপেক্ষা করেছিলাম (এই জন্য না যে আমার মাথা বলিতে গুঁজে থাকার কারণে সেগুলো আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গিয়েছিল), আর আমি নিজের সঙ্গে আরো অধিক সৎ হয়েছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো সেটা আমার ভালো লেগেছে। আমি হয়তো নিখুঁত হতে পারব না, কিন্তু আমি যোগ্য। আমি আশ্চর্য হচ্ছি এটা দেখে যে, যোগ্য হওয়ার জন্য এই অনুভূতি কতটাই না অসাধারণ।
– মাইক।
মাইক এইমাত্র তার একটি শক্তিশালী গোপনীয়তা ভাগাভাগি করল। যোগ্য অনুভব করতে হলে প্রথমে আপনার মনোযোগ ও প্রচেষ্টার সাথে আপনার নিজের প্রবৃত্তিকে যোগ করতে হবে। এন্থনি এটা দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন যে, খুব সাধারণ কিছুর মধ্যে রয়েছে স্বভাবতঃ তিনি যে সব ব্যাপারে নির্ভর করতে কুণ্ঠিতবোধ করতেন সেই মনোবল যা তার বিবাহের ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তন সৃষ্টি করতে, তার স্ত্রীর কাছাকাছি হতে এবং তার চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করতে পারে।
ঐ সহজ কিছুই বিশাল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। সেটা দেখা ছিল বিস্ময়কর। আমি আশা করতাম মানুষ আমার চাহিদা সম্পর্কে জানবে। যখন সেটা পূরণ হতো না, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমার স্ত্রীর সঙ্গে, তখন আমি অসন্তুষ্ট হতাম। আমি ভেবেছিলাম সব স্ত্রীরাই মন বুঝতে পারে, বিস্ময়বোধ করতে পারে।