তিনি নিজের প্রবৃত্তির উপর নির্ভর করে তার কন্যার সঙ্গে কিছু শেয়ার করতে কিভাবে নিজের উপর জোর খাঁটিয়েছিলেন, সেই সম্পর্কিত একটি গল্প বললেন যা তাদের সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছিল। কয়েক বছর ধরে তার কন্যা অ্যাম্বার ও তার স্বামীকে পরিবারের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল যারা খুব কঠিন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল। তারাও প্রতি সপ্তাহান্তে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছে এবং ইতিমধ্যে বেশ কিছু সেবা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।
ডন তাদেরকে জানিয়েছিলেন যে তিনি তাদের প্রশংসা করছেন। তিনি প্রশংসা করছেন কারণ যেভাবে তারা জীবন-যাপন করেছে এবং পৃথিবীর জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে তা ছিল অনন্য। তিনি আরো যোগ করলেন যে, কন্যা অ্যাম্বার-এর পরিণত হয়ে ওঠায় তিনি ছিলেন গর্বিত। আর তারপর তিনি আমাকে বলেছিলেন– এটা বলার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে আমি খুব ভয়ে ছিলাম। চিন্তা করুন, আমি কিছু বলতে ভয় পেয়েছিলাম। কারণটি ছিল, আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ার ব্যাপারে ভয় পাচ্ছিলাম।
তিনি বলেন, ঐ কথোপকথনের পর তার কন্যার সঙ্গে সম্পর্ক আর কখনোই আগের মতো ছিল না। তারা এখন অনেক কাছাকাছি যা তিনি কখনো কল্পনা করেননি, আর এই অভিজ্ঞতা তাকে এই নিয়ম মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করেছে যে– কোনো কিছু লুকিয়ে রাখা ঠিক নয়।
ঘনিষ্ঠতার জন্যেও মনোবল প্রয়োজন। আবেগপ্রবণ হওয়ার ঝুঁকি অথবা কাউকে বিপর্যস্ত করা যাতে করে আপনি নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন। এটা ভীতিকর কিন্তু এর ফলাফল জাদুকরী। গত শরতে আমার বাবার সাথে একটি সহজ আলাপচারিতার সময় আমি ঠিক একই ধরনের জাদুকরী অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম। আমি মিয়ামিতে একটি বক্তৃতা শেষ করে বিমানবন্দরের পথে ছিলাম এবং আমার ফোনে এসময় বাবার একটি ক্ষুদে বার্তা দেখতে পেলাম– যতদ্রুত সম্ভব আমাকে ফোন কর।
আমি ভাবলাম, অদ্ভুত তো! আমি বাড়িতে ফোন করলাম এবং মা ফোনটি তুলল।
হ্যালো মা, আমি এইমাত্র বাবার কাছ থেকে ফোন করার জন্য একটি বার্তা পেয়েছি, সব ঠিক আছে তো?
তোমার তার সাথে কথা বলা উচিত, দাঁড়াও তাকে দিচ্ছি।
মা ফোনটি নামিয়ে রাখল যখন তাকে বলতে চাচ্ছিলাম– মা, শোনো, কি হচ্ছে ওখানে?
আমি রান্নাঘরের দরজা খোলার শব্দ পেলাম কারণ মা দরজা খুলে বাবাকে চিৎকার করে বললেন– বব, মেল ফোন করেছে।
আমি বুঝতে পারছিলাম না কি হতে চলেছে। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম বিপদে পড়েছি। ক্যাবের পেছনের সিটে বসে আমার মনে হতে লাগল, আমি যেন ১০ বছরের এক বালিকা যে প্রায় বিধ্বস্ত হওয়ার পথে। এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে, কিছু একটা সমস্যা হলে আপনার মস্তিষ্ক কত দ্রুতই না আপনাকে খরগোশের গর্তে ঢুকিয়ে দিতে পারে।
অনিশ্চয়তা আমার উদ্বিগ্ন হওয়ার অভ্যাসকে জাগিয়ে তুলল এবং এই মুহূর্তে আমি কি-যদি চক্রতে অবস্থান করছি। দাদিমা কি মারা গেছেন? আমি কি কিছু ভুল করেছি? বাবা কি কোন আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন? এটা নিশ্চয় আমি, আমি কি করেছি?
আপনি কি ধরতে পেরেছেন কি ঘটছে? অনিশ্চয়তা আমার উদ্বিগ্ন হওয়ার অভ্যাসকে জাগিয়ে দিয়েছে। পাঁচ সেকেন্ডেরও কম সময়ে আমি আমার নিজেকে বোঝালাম যে– দাদিমা মারা গেছেন, আমি গুরুতর কিছু ভুল করেছি, বাবা আমার উপর গম্ভীর হতাশ অথবা আমি বড় কোনো বিপদে পড়তে যাচ্ছি।
আমি শুনতে পেলাম পেছনের দরজা খুলে গেল এবং বাবা রান্নাঘরের দিকে হেঁটে আসছেন। তিনি ফোনটি তুলে নিলেন এবং নির্বিকার ভাবে বললেন– মেল, ফোন করার জন্য ধন্যবাদ, ঠিক এই মুহূর্তে তুমি কোথায় আছো?
আমি ফোনের অন্য প্রান্তে অস্থির হয়ে আছি। আমি বিমানবন্দরের পথে মিয়ামিতে আছি বাবা, তোমার ক্ষুদে বার্তা আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। আমি কি কিছু ভুল করেছি?
তিনি হালকা হেসে বললেন– না, এটা তোমার ব্যাপার নয় মেল, এটা আমার ব্যাপার। আমি আসলে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে এবং তোমার ভাইকে বলতে চাইনি।
আমার হাত থেকে ফোনটি প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। তুমি কি মারা যাচ্ছ? ওহ্ গড, তোমার কি ক্যান্সার ধরা পড়েছে?
তিনি আমাকে বাধা দিয়ে বললেন– তুমি কি আমাকে কথা বলতে দেবে? আমার ক্যান্সার হয়নি। আমার এ্যুরিজম (ধমনির দুর্বলতাজনিত কোনো কারণে এর একটি অংশ ফুলে ওঠা) আছে এবং এটা আমাকে মেরে ফেলার আগেই এটিকে অপসারণ করার জন্য একটি ওপেন ব্রেইন সার্জারি করতে হবে।
তিনি পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন। তার মাথা ঘোরানো রোগ ছিল এবং গলফ খেলার সময় একদিন তিনি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে একটি এম-আর-আই করতে হলো। সেখান থেকেই এই এ্যুরিজম ধরা পড়ল। আর তারা এটি ভুলক্রমে পেয়ে গিয়েছিল। সপ্তাহান্তে তিনি মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্জারিটি করাবেন বলে ঠিক করেছেন।
ফোনের অন্য প্রান্তে আমি জমে গিয়েছিলাম। আমার শ্বশুর খাদ্যনালির ক্যান্সারে মারা গিয়েছিলেন। বাবার গল্পটি শোনার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমি আমার শ্বশুরের অস্ত্রোপচার করার দিনটির কথা মনে করেছিলাম। এটি ছিল একটি মুহূর্তের বিষয়। ম্যানহাটন-এর মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং এ নার্স যখন অস্ত্রোপচার করার জন্য তাকে ট্রলি করে নিয়ে যাচ্ছিল, জোড়া দরজা ঠেলে ভেতরে যাওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে তিনি আমাদের দিকে ফিরে তাকালেন।