মনোবল বলতে আমরা কি বুঝি?
* কোনো কিছু করার সক্ষমতা যা আপাতঃদৃষ্টিতে কঠিন বা ভয়ঙ্কর
* আপনার নিরাপদ এলাকার বাইরে পা রাখা
* আপনার ধারণাগুলো শেয়ার করা, কথা বলা অথবা প্রদর্শন করা
* আপনার বিশ্বাস ও মূল্যবোধের ব্যাপারে দৃঢ় থাকা
* এবং একদিন… বিছানা ছেড়ে উঠে পড়া
*
(২) কেমন করে দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুটি আবিষ্কার করলাম
মনোবল অসম্ভাব্য জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়।
— জে. আর. আর. টলকিন
এর শুরু ২০০৯ সালে। আমার বয়স তখন ছিল ৪১ বৎসর এবং আমি টাকা-পয়সা, কাজ এবং আমার বিবাহসংক্রান্ত কিছু বড় সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলাম। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে জেগে ওঠার পরপরই আমি এক ধরনের ভীতি অনুভব করতাম। আপনি কি কখনো এরকম অনুভব করেছেন? এটা খুব খারাপ অনুভূতি। ঘড়িতে অ্যালার্ম বাজছে অথচ আপনি বিছানা থেকে উঠে সামনের দিনটির মুখোমুখি হতে চাইছেন না। অথবা রাতের বেলা আপনি হয়তো আপনার সমস্ত সমস্যাগুলো মাথায় নিয়ে শুধু শুধু জেগে থাকছেন।
আমার অবস্থা ঠিক এরকমই ছিল। মাসকয়েক ধরে আমার সমস্যা এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছিল যে আমি খুবই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম এবং ভোরবেলা বিছানা ছেড়ে প্রায় উঠতেই পারতাম না। ঘড়িতে যখন ভোর ৬টার অ্যালার্ম বাজতো, আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে সামনের দিনটির কথা, আমার ঘর, আমার নেতিবাচক ব্যাংক হিসাব এবং আমার স্বামী আমার উপর কতটুকু বিরক্ত এসব নিয়ে ভাবতে থাকতাম এবং একটা সময় আমি আবার ঘুমের ঘোরে তলিয়ে যেতাম। একবার নয়, এটা বারবার আমার সাথে ঘটে চলছিল।
শুরুতে এটাকে আমার খুব বড় কোনো সমস্যা মনে হতো না। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে যখন এটাই একটা খারাপ অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেল তখন সারাদিনের জন্য আরো বড় একটি সমস্যা হয়ে দেখা দিল। শেষ পর্যন্ত আমি যখন বিছানা থেকে নেমে আসতাম, ইতিমধ্যে আমার বাচ্চারা তাদের স্কুলবাস মিস করেছে আর আমার নিজের কাছে মনে হচ্ছে জীবনটাই বুঝি ব্যর্থ। বেশিরভাগ দিনই আমি ক্লান্ত হয়ে পড়তাম, দেরি করতাম এবং নিজেকে বিধ্বস্ত মনে হতো। আমি জানিনা এটা কিভাবে শুরু হয়েছিল– শুধু মনে করতে পারি নিজেকে পরাজিত মনে হতো। আমার পেশাগত জীবন আক্ষরিক অর্থে গর্তে পড়ে গিয়েছিল। বিগত ১২ বৎসর যাবৎ আমি এতবার আমার পেশা বদল করেছি যে, আমার ভেতরে বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিসত্ত্বা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আইন বিষয়ে স্নাতক অর্জন করার পর আমি নিউইয়র্ক শহরে অপরাধীদের আইনি সহায়তা প্রদানকারী প্রতিরক্ষা সোসাইটির একজন পাবলিক ডিফেন্ডার হিসেবে আমার কর্মজীবন শুরু করেছিলাম।
এরপর আমার বর্তমান স্বামী ক্রীস-এর সাথে আমার দেখা হয়। আমরা বিয়ে করি এবং বোস্টন শহরে চলে আসি যাতে করে ক্রীস তার এম-বি-এ শুরু করতে পারে। বোস্টন শহরে একটি বড় ল ফার্মে আমি প্রতিদিন লম্বা সময় ধরে পাগলের মতো কাজ করতাম। নিজেকে সবসময় আমার দুর্দশাগ্রস্ত মনে হতো। আমার কন্যার জন্মের সময়ে একটি নতুন চাকরি খোঁজার জন্য আমি আমার প্রসূতিকালীন ছুটি ব্যবহার করেছিলাম এবং এটা ছিল বোস্টন শহরে আমার শুরুর দিককার দৃশ্যপট। আমি ঐ বছরগুলোতে বিভিন্ন কারিগরি কাজে সম্পৃক্ত ছিলাম। এটা ছিল মাজার অভিজ্ঞতা এবং এখান থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছিলাম বটে কিন্তু আমার কখনোই মনে হয়নি এটা আমার ক্যারিয়ারের জন্য সঠিক ছিল।
আমি একজন প্রশিক্ষকের স্মরণাপন্ন হয়েছিলাম যে আমাকে জীবনে কি করা উচিৎ সেই সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়েছিল। একজন প্রশিক্ষকের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমাকে তাই হতে সহায়তা করেছিল যা আমি হতে চেয়েছিলাম। সুতরাং, আমি আরো অনেকের মতো কাজ করতে শুরু করি, বাড়ি ফেরার পর বাচ্চাদের দিকে নজর দিতে শুরু করি এবং রাতের বেলা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকি যাতে করে আমি আমার প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেটটি অর্জন করতে পারি। অবশেষে, আমি একটি প্রশিক্ষণ ব্যবসা চালু করি যা আমার খুব প্রিয় ছিল এবং সম্ভবত এখন পর্যন্ত আমি এই ব্যবসাটিই চালিয়ে যেতাম যদিনা মিডিয়া আমাকে ডেকে নিতো।
আমার মিডিয়া জগতে প্রবেশ ছিল একটু অদ্ভুত। ইন ম্যাগাজিন আমার প্রশিক্ষণ ব্যবসার উপর একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিল যা সিএনবিসির একজন নির্বাহীর নজরে পড়ে এবং ফলশ্রুতিতে তিনি আমাকে ডাকেন। সেই একটি ডাকের সূত্র ধরে আরো অনেকের সাথে আমার সাক্ষাৎ ঘটে। বেশ কয়েক মাস চেষ্টার পর এবিসি রেডিওর সাথে একটি অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে আমি চুক্তিবদ্ধ হই। অভিনব শোনাচ্ছে কি? কিন্তু এটা তা ছিল না। আমি খুবই বিস্মিত হয়েছিলাম এটা দেখে যে, এ ধরনের কর্মসূচি থেকে প্রায় কিছুই উপার্জন হতো না। রেডিও এমনকি আরো অনেক কম প্রদান করতো। বাস্তবে আমি নিউইয়র্ক শহরে তিনটি বাচ্চাকে নিয়ে গাড়ি চালাতাম, বন্ধুদের বাড়ির কাউচে ঘুমাতাম, ক্লায়েন্টদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতাম, কি করে বাচ্চাদের দেখাশোনা করার মাঝখানে শূন্যতাগুলো পূরণ করা যায় তা বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে শিখে নিতে চেষ্টা করতাম এবং প্রয়োজনীয় সমস্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতাম যাতে বিষয়গুলো আমার কাজে লাগে।
মিডিয়া জগতে বেশ কয়েক বছর এদিক-সেদিক করার পর আমি একটা বড় সুযোগ পেলাম। ফক্স টেলিভিশন-এ একটি রিয়েলিটি শো উপস্থাপনা করার জন্য আমি নির্বাচিত হলাম। একজন টেলিভিশন স্টার হওয়ার মাধ্যমে আমার সব আর্থিক সমস্যাগুলোর জাদুকরী সমাধানের ব্যাপারে আমার একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। যাই হোক, আমরা কয়েকটি পর্বের দৃশ্যধারণ করি যার শিরোনাম ছিল- কেউ একজনকে যেতে হবে এবং তারপর তা প্রদর্শন করার জন্য উপস্থাপন করি। একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমার মিডিয়া পেশা প্রায় শেষ হতে চলেছিল। আমি লক্ষ্য করেছিলাম যখন দৃশ্য ধারণ করার কাজ চলতো, তখনই শুধু আমার পারিশ্রমিক প্রদান করা হতো। নিজেকে আমার বেকার মনে হলো এবং মিডিয়াতে আবার একটি নতুন কাজ খোঁজা রুখতে আমি দশমাসের একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করলাম।