২০০৫ সালে কেনইয়ন কলেজ-এর উদ্বোধনী বক্তৃতায় ডেভিড ফস্টার ওয়ালেস প্রদত্ত বক্তব্য কি আপনি শুনেছেন? না শুনে থাকলে ইউটিউবে খুঁজে দেখতে পারেন। যা শুনতে আপনার সর্বোচ্চ ২০ মিনিট সময় লাগতে পারে। কিন্তু এটা আপনার অনেক কাজে লাগবে। মি. ওয়ালেস এই কৌতুকটি বলে তার বক্তব্য শুরু করেছিলেন–
দুটি অপেক্ষাকৃত কম বয়সী মাছ পাশাপাশি সাঁতার কাটছিল এবং তাদের উদ্দেশ্য ছিল অপরদিক থেকে আসা একটি বয়স্ক মাছের সাথে সাক্ষাৎ করা। দেখা হওয়া মাত্র বয়স্ক মাছটি কম বয়সী মাছ দুটির দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে বলল– ছেলেরা শুভ সকাল, তা পানি কেমন বুঝতে পারছো? অল্প বয়সী মাছ দুটি একটু দূরে সরে এসে একজন আরেক জনকে জিজ্ঞেস করলো– বুঝলাম না, পানি মানে কি?
আপনি ভিডিওটি দেখার এই পর্যায়ে দর্শকদের হাসির রোল শুনতে পাবেন। অতঃপর মি. ওয়ালেস মাছেদের এই গল্পের ব্যাখ্যায় বলেছেন– এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যিক বাস্তবতা যে, যা দেখা কঠিন, সেই সম্পর্কে কথা বলাও অত্যন্ত কঠিন।
আমার জন্য কঠিন বিষয় ছিল পরিবর্তনের প্রকৃতি দেখা এবং সেই সম্পর্কে কথা বলা। আমি অবাক হয়েছিলাম এটা দেখে যে, আমার পেশাগত উন্নতি, সম্পর্কের উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সামগ্রিক জীবনমান উন্নয়নের জন্য যা করা উচিত ছিল তা করতে আমার সমস্যা হচ্ছে। ফাইভ সেকেন্ড রুল আবিষ্কারের মাধ্যমে আমি কোটি টাকা মূল্যের জবাবটি জানতে পেরেছিলাম। জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসে মনোবল যা একটি ৫ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে প্রতিদিনই আপনার প্রয়োজন।
একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জীবন থেকে আপনি একটি সিদ্ধান্তের দূরত্বে অবস্থান করছেন।
পরিবর্তন এবং প্রাত্যহিক মনোবল সম্পর্কে আমি যা শিখেছি তা এই বইটিতে আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চলেছি। আপনি যা শিখতে যাচ্ছেন তা অবশ্যই আপনার ভালো লাগবে বলে আমি মনে করি। এর সবচাইতে ভালো অংশটি হবে, যখন আপনি রুলটি ব্যবহার করতে শুরু করবেন এবং আপনার জন্য এটি কি ফলাফল বয়ে আনছে তা দেখতে শুরু করবেন। আপনি শুধু জেগেই উঠবেন না বরং আপনি নিজেকে এতদিন কতটা পেছনের দিকে ধরে রেখেছিলেন তাও বুঝতে পারবেন। আপনি আপনার অন্তর্নিহিত শক্তিকে জাগ্রত করবেন।
বইটির গল্পগুলো আপনি যখন পড়বেন, আপনার মনে হবে দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি আপনি এর আগে নিজেও ব্যবহার করেছেন। আপনি যদি আপনার ফেলে আসা জীবনের দিকে ফিরে তাকান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো স্মরণ করেন তাহলে আমি আপনাকে নিশ্চিত করছি যে, আপনি দেখতে পাবেন আপনার সহজাত প্রবৃত্তি দ্বারা জীবন বদলে দেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত আপনি গ্রহন করেছিলেন। ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে আপনি গ্রহণ করেছিলেন, আমি যাকে বলবো– হৃদয় উৎসরিত সিদ্ধান্ত। আপনি ভয়কে উপেক্ষা করে আপনার সাহস ও আত্মবিশ্বাসকে আপনার পক্ষে কথা বলার সুযোগ দিয়েছিলেন। খেয়াল করুন, ৫ সেকেন্ড সময়ের মনোবলটুকুই সব পার্থক্য তৈরি করে দেয়।
আপনি ক্যাথরিন-কে জিজ্ঞেস করতে পারেন। প্রথমবার যখন তিনি কোম্পানির নির্বাহী নেতৃত্বের অফসাইট থেকে রুলটি সম্পর্কে জানতে পারেন, তখনই তার উপলব্ধি হয় যে রুলটি ব্যবহারের মাধ্যমে জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তিনি পূর্বেই নিয়েছিলেন। সেই সময়ে যা তিনি বুঝতে পারেননি। ১৯৯০ সালে তার বোন ট্রেসি মারা যায় এবং ক্যাথরিন তার পরিবারকে সাহায্য করতে বাড়ি ফিরে আসে। সেই সময় একটি ৫ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্ত কেবল তার নিজের জীবনই বদলে দেয়নি বরং তার সাথে আরো অনেকের জীবন বদলে দিয়েছিল। ক্যাথরিন তার মৃত বোনের ছোট দুটি বাচ্চা লালন-পালন করার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
এটা দেখে আমার ভালো লেগেছিল যে, ক্যাথরিন তার এই সিদ্ধান্তটি আমার কাছে বর্ণনা করতে গিয়ে একে মস্তিষ্ক বহির্ভূত হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলেন– কারণ আপনাকে এটা মনে রাখতে হবে যে, আপনি যখন কোনো কাজ করতে গিয়ে আপনার মনোবল শক্তির ব্যবহার করবেন, আপনার মস্তিষ্ক সেখানে কাজ করবে না। আপনি শুনতে পাবেন আপনার হৃদয় কথা বলছে। কেমন করে, সেটাই আপনাকে শেখাবে দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল। প্রশ্ন হলো– এটা কি আপনার ভেতরকার শক্তিকে আবিষ্কার করার কোনো উদ্যোগ নেবে? হ্যাঁ, নেবে। কিন্তু মার্লো ইতিপূর্বে এটাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিল– এটি খুবই বিস্ময়কর এবং অবিশ্বাস্য, কারণ আপনি যখন কোনো কিছু শুরু করে দেবেন তখন তা কত সহজ হয়েই না ধরা দেয়।
নিজের জীবনকে উন্নত করার জন্য কোনো কিছু করা সহজ, আপনি এটা করতে পারেন এবং আপনি এটা করতে চান। কারণ এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটা হলো সেই কাজ যার দ্বারা আপনি নিজেকে ভালোবাসা ও বিশ্বাস করার মাধ্যমে আপনার জীবন, কর্ম এবং সম্পর্কগুলোর মধ্যকার জাদু ও আনন্দের বিচ্ছুরণ সম্পর্কে জানতে পারবেন। ফাইভ সেকেন্ড রুল্ল-টি ব্যবহার করার পর আপনার জীবনে কি কি পরিবর্তন ঘটবে তা জানতে আমি খুবই উগ্রীব। কিন্তু আমি এর গল্পটি সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এই রুলটি ব্যবহারের সব উত্তেজনাপূর্ণ উপায়গুলো বর্ণনা করার পূর্বে আমি আপনাকে ২০০৯ সালে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই যেখান থেকে সবকিছুর শুরু।