আপনি সেইসব লোকদের গল্প শুনে আরো উৎসাহিত হবেন যারা অহেতুক চিন্তা-ভাবনা ছেড়ে তাদের ধারণাসমূহ বাস্তবে প্রয়োগ করার মাধ্যমে নিজেদের মনোবল ফিরে পেয়েছিলেন। মার্ক নামক একজন যিনি শহরের বাচ্চাদের জন্য একটি অলাভজনক আইস হকি লীগ শুরু করার ক্ষেত্রে দশকব্যাপী চিন্তা-ভাবনা ছেড়ে শেষ পর্যন্ত তার ধারণাটিকে বাস্তবে রূপদান করতে পেরেছিলেন ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করার মাধ্যমে। তিনি এখন ক্যাম্প, ক্লিনিক এবং লীগ আয়োজনের ক্ষেত্রে প্রাক্তন অলিম্পিয়ান ও ন্যাশনাল হকি লীগ অ্যালামনাই-এর সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছেন।
আসক্তি ও বিষণ্ণতামুক্তির সংগ্রামেও দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল একটি শক্তিশালী যন্ত্র। বিল নামক এক ব্যক্তি রুটি সম্পর্কে জানতে পারেন যা তার কাছে ছিল– সঠিক সময়ে, সঠিক স্থানে একটি সঠিক তথ্য জানার মতো ব্যাপার। তিনি ক্ষণ গণনার এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করেছিলেন মদ্যপান ছেড়ে দেবার জন্য এবং এটি অসাধারণভাবে তার ক্ষেত্রে কাজ করেছিল। বিল একজন সম্পূর্ণ ভদ্র মানুষরূপে তার ৪০তম জন্মবার্ষিকীটি উদ্যাপন করেছিলেন।
এটা এমনকি আপনার জীবন রক্ষা করতে সক্ষম। সম্প্রতি আমার একজন সহকর্মী দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল সংক্রান্ত একটি মর্মস্পর্শী গল্প আমার সাথে শেয়ার করেছেন। স্বামী স্ত্রীতে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পর সে গভীর বিষণ্ণতায় ডুবে গিয়েছিল। জেনে খারাপ লেগেছিল যে এ সময় সে আত্মহত্যা করার চিন্তা-ভাবনা পর্যন্ত করেছিল। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তৃতীয় কারো সাহায্য তাকে গ্রহণ করতে হবে। ৫-৪-৩ ২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে সে তার মনোবল ফিরে পেয়েছিল এবং তৎক্ষণাৎ নিজেকে রক্ষা করতে সাহায্য প্রার্থনা করেছিল, যা তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল।
দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিগত সাত বৎসরের অধিক সময় ধরে আমি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষের প্রতিক্রিয়া জানতে চেষ্টা করছি এবং আমি এটা অনুভব করতে পারছি যে, আমরা প্রতিনিয়তঃ কঠিন, অনিশ্চিত এবং ভীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি। এমতাবস্থায় যা প্রয়োজন তা হলো আপনার মনোবল। আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবার মনোবল আপনি আবিষ্কার করতে পারেন ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করার মাধ্যমে।
কেমন করে একটি সহজ যন্ত্র শক্তিশালী উপায়ে বিভিন্নভাবে কাজ করে?
দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল হলো এমন কিছু যা একটি বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকর। আর তা হলো আপনি নিজে। আপনার আছে মহত্ত্ব। এমনকি আপনি যখন ভেঙে পড়েছেন, তখনও এটি আপনার ভেতরেই আছে। এই রুটি আপনাকে আপনার সেই মহত্ত্বের কথা শুনতে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে মনোবল জোগাবে।
রুলটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমি লক্ষ্য করেছি যে, কোনো কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে আমি বছরব্যাপী চিন্তা-ভাবনা এবং অজুহাত খুঁজে বেড়িয়েছি। শুধুমাত্র কাজ শুরু করে দেবার মাধ্যমে আমি আমার অন্তর্গত শক্তিকে জাগাতে পেরেছিলাম এবং তাই হতে পেরেছি যা হতে চেয়েছিলাম। টেলিভিশনে, অনলাইনে এবং মঞ্চে আমি আমার সেই আত্মবিশ্বাস প্রদর্শন করতে পেরেছি। যা হলো সত্যিকারের আত্মবিশ্বাস। আমি নিজের ভেতর সত্যিকারের আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে পেরেছিলাম নিজের অনুভূতিগুলোকে সম্মান প্রদর্শন করার মাধ্যমে যেন সেগুলো বাস্তবে রূপ নিতে পারে।
সম্মান শব্দটি ব্যবহার করছি একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে। এটা আপনাকে রুলটি ব্যবহার করার সময় প্রয়োগ করতে হবে। নিজের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে আপনি প্রকৃত অর্থে নিজের ধারণাগুলোকে বিজয়ী হতে সাহায্য করবেন। এবং প্রতিবার এর মাধ্যমে আপনি এক এক কদম তার কাছাকাছি যেতে থাকবেন যে রকম আপনি হতে চেয়েছেন।
আমি আমার নিজের ধারণাগুলোকে আত্মবিশ্বাসের সহিত শেয়ার করা, তার উপর কাজ করা এবং তাদের পেছনে ক্রমাগত ছুটে চলার মতো মনোবল সম্পন্ন ব্যক্তিত্বে নিজেকে পরিবর্তন করেছিলাম। আপনার ভেতরেও ঠিক এই রূপান্তরটি ঘটতে পারে যদি আপনি আপনার নিজের অনুভূতিগুলোকে সবসময় সম্মান দেখাতে পারেন এবং এই রুলটি ব্যবহারের মাধ্যমে তার উপর কাজ করতে পারেন।
মার্লো নামক একজন ভদ্রমহিলা এটা আবিষ্কার করেছিলেন যে, রুলটি ব্যবহার করার মাধ্যমে নিজেকে পরিবর্তন করা কতটা সহজ। এই রুটি শেখার কিছু দিনের মধ্যে মার্লো দুটি কোর্স সম্পন্ন করার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন যা তিনি দীর্ঘদিন ধরে চিন্তা করছিলেন এবং না করার বিভিন্ন অজুহাত খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। মার্লো বুঝতে পেরেছিলেন যে এটা একটি অসাধারণ ও উৎসাহব্যঞ্জক বিষয় যা করা খুবই সহজ যখন আপনি অহেতুক ভাবনা-চিন্তা বন্ধ করে নিজেকে শুধু একটু সামনে ঠেলে দেবেন।
সে ঠিকই বুঝতে পেরেছিল। যখনই আপনি নিজেকে সামনে এগিয়ে নিতে এই রুলটি ব্যবহার করবেন, আপনি দেখে আশ্চর্য হবেন যে একটি ৫ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্ত কি করে সবকিছু বদলে দিচ্ছে। আমি যেমন আমার জীবনে এই রুলটি অধিক থেকে অধিকতর ব্যবহার করেছি। আমি লক্ষ্য করছিলাম যে আমি দিনভর শুধু ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছি যা আমাকে পিছু টেনে ধরে রাখছে। এমতাবস্থায় আমি নিজেকে ৫ সেকেন্ড সময়ের জন্য সম্পূর্ণ চুপ করিয়েছি, অপেক্ষা করেছি এবং কোনো প্রকার ঝুঁকি নেয়া থেকে নিজেকে বিরত রেখেছি। আমার ভেতরে একটি বোধ কাজ করতো যা ঐ সকল সন্দেহ, দুঃশ্চিন্তা, অজুহাত অথবা ভয়কে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। সমস্যাটা ছিল আমি নিজেই এবং এর সমাধান নিহিত ছিল ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে নিজেকে শুধু সামনের দিকে একটু ঠেলে দেওয়ার মধ্যে। নিজেকে বদলাবার এই গোপন সূত্রটি পুরোটা সময় ধরে আমার চোখের সামনেই ছিল।