আপনার সকালগুলোর মালিক হোন আপনি।
আপনার সকালগুলোর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ উৎপাদনশীলতার জন্য একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। আমি যেভাবে করেছিলাম তা হলো সকালের জন্য একটি কার্যসূচি তৈরি করা। এলিসা তার সকালের কার্যসূচি বাস্তবায়ন করার পর খেয়াল করলেন যে, তিনি তার দিনটিকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছেন। এলিসা ঠিক যেমনটি বলেছেন– আপনি যখন সকালের জন্য একটি কার্যসূচি তৈরি করেন এবং তা অনুসরণ করেন, আপনি আসলে আপনার উদ্দেশ্যগুলোকে ছকে সাজান।
আমার সকালের কার্যসূচির জন্য আমি ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধ্যাপক ড্যান অ্যারেলিরর কাছে ঋণী। তার মতে সম্পূর্ণ জেগে ওঠার পর দিনের প্রথম ২/৩ ঘণ্টা আপনার মস্তিষ্কের শ্রেষ্ঠ সময়। সুতরাং, আপনি যদি ভোর ৬টায় বিছানা থেকে উঠে পড়েন তাহলে আপনার ব্যস্ত চিন্তা ও উৎপাদনশীল সময় হলো সকাল ৬ :৩০মি. থেকে সকাল ৯ :০০টা পর্যন্ত।
আপনার ঘরের জিনিসপত্র যদি আমাদেরগুলোর মতো হয়, তাহলে বেশির ভাগ সকালেই তা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। কুকুরকে খাওয়ানো, নাশতা তৈরি করা আর তিনটি বাচ্চাকে তৈরি করে স্কুলে পাঠাতে পাঠাতে আমার সকালের সবচেয়ে উৎপাদনশীল একটি ঘণ্টা চলে যায়। আর তাই সকালগুলোর ব্যাপারে আমাকে আরো সতর্ক হতে হবে যদি আমি আমার দিনটির মালিক হওয়ার পরিকল্পনা করে থাকি। আর এটা শুরু করতে হবে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ার মাধ্যমে যাতে করে দিনটি আমাকে অপহরণ করে নেওয়ার আগে বড় মাপের উদ্দেশ্যগুলোর উপর ফোকাস করার জন্য প্রয়োজনীয় সময় হাতে পাওয়া যায়। আমি কিভাবে নিয়ন্ত্রক হয়ে আমার অগ্রাধিকারগুলোর উপর ফোকাস করার জন্য নিজের কার্যসূচি পরিবর্তন করেছিলাম, এখানে তা উল্লেখ করা হলো :
আমার প্রাত্যহিক কার্যসূচি :
(১) অ্যালার্ম বেজে ওঠার সাথে সাথে আমি উঠে পড়ি
আমরা এর গুরুত্ব সম্পর্কে জেনেছি যখন আপনি উঠে পড়ার চ্যালেঞ্জটির ব্যাপারে শিখছিলেন। অ্যালার্ম বাজা, উঠে পড়া, এবং শেষ। ব্যস্ত উৎপাদনশীলতার জন্য কখনোই ঘুমিয়ে পড় বোতামটি চাপবেন না। এর একটি স্নায়ুতাত্ত্বিক কারণ রয়েছে যা আমি এই বইটির জন্য গবেষণা করার সময় শিখেছি।
আপনি নিশ্চয় জানেন উৎপাদনশীলতার জন্য একটি ভালো ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমি বাজি ধরে বলতে পারি, আপনি জানেন না যে কিভাবে জেগে উঠবেন যা আপনার ঘুমের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, আপনি যখন ঘুমিয়ে পড় বোতামটি চাপেন, এর একটি নেতিবাচক প্রভাব আপনার মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ও উৎপাদনশীলতার উপর পড়ে যা ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। আপনাকে যা জানতে হবে :
আমরা একটি চক্রের মধ্যে ঘুমাই যা সম্পূর্ণ হতে সময় নেয় ৯০ থেকে ১১০ মিনিট পর্যন্ত। আপনি জেগে ওঠার প্রায় ২ ঘণ্টা আগে এই ঘুমচক্র সমাপ্ত হয় এবং আপনার শরীর ধীরে ধীরে উঠে পড়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। আপনার ঘড়ির অ্যালার্ম যখন বেজে ওঠে, আপনার শরীর তখন উঠে পড়ার জন্য প্রস্তুত। এখন আপনি যদি ঘুমিয়ে পড় বোতামটি চেপে দিয়ে আবার শুয়ে পড়েন, তাহলে আপনি আপনার মস্তিষ্ককে নতুন একটি ঘুমচক্রে প্রবেশ করতে বাধ্য করছেন যা ৯০ থেকে ১১০ মিনিট দীর্ঘ।
১৫ মিনিট পর যখন ঘুমি পড় অ্যালার্মটি বন্ধ হয়ে যায় তখন আপনার মস্তিষ্কের কটিক্যাল অংশ যা সিদ্ধান্ত, মনোযোগ, সতর্কতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী, সেটি তখনো ঘুমচক্রে অবস্থান করছে। এটি সহসাই উঠে পড়তে পারবে না– ঘুমিয়ে পড় বোতামটি যা শুরু করেছিল তা শেষ করতে এর আরো ৭৫ মিনিট সময় লাগবে।
নিদ্রাহীনতা অবস্থাটি ঝেড়ে ফেলতে এবং আপনার জ্ঞান-নির্ভর কার্যক্রম তাদের পূর্ণ ক্ষমতা ফিরে পেতে চার ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আর তাই ঘুমিয়ে পড় বোতামটি টিপে দেওয়ার পর আপনি যখন উঠে দাঁড়ান তখন কিঞ্চিৎ মাতাল বা টলটলায়মান বোধ করেন। এর কারণ এই নয় যে আপনার পর্যাপ্ত ঘুম হয়নি। এর কারণ আপনি ঘুমিয়ে পড় বোতামটি টিপে একটি নতুন ঘুমচক্র শুরু করার পর তা আবার বিঘ্নিত করেছেন। যেদিন আপনি এই কাজটি করবেন, কোনোভাবেই আপনি সেদিন আপনার সেরা অবস্থায় থাকবেন না।
সুতরাং, এই ব্যাপারে আমি খুবই সিরিয়াস– যখনই অ্যালার্মটি বন্ধ হবে, আর ঘুমিয়ে পড় বোতাম নয়। উঠে পড়ুন। কোনো সংকোচ ছাড়াই। এখানে আলোচনা করার কোনো সুযোগ নেই।
(২) আমি বাথরুমের দিকে হাঁটতে শুরু করি এবং অ্যালার্মটি বন্ধ করে দিই
আমার এবং আমার স্বামীর ফোন কিংবা অ্যালার্ম ঘড়ি আমাদের শোবার ঘরে কিংবা কোনো স্ট্যান্ডের উপর থাকে না। থাকে বাথরুমে। খুব কাছেই, তাই কেউ ফোন করলে কিংবা ভোরে অ্যালার্ম বাজলে আমরা শুনতে পাই। কিন্তু যথেষ্ট দূরে, তাই এর প্রলোভনে পড়ি না। আমার ফোনটি যদি বিছানার পাশে স্ট্যান্ডের উপর থাকে, তাহলে হয়তো কোনো রকম চিন্তা ছাড়াই আমি সেটি হাতে তুলে নিতে পারি এবং বিছানায় বসে ই-মেইলগুলো পড়া শুরু করতে পারি। আপনি জানেন আপনিও একই কারণে দোষী। এটি নাগালের মধ্যে থাকলে কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই হাতে তুলে নেয়া সহজ। একটি বিশাল সংখ্যক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিছানা থেকে উঠে পড়ার আগে ব্যক্তিগত ই মেইল পড়ে থাকেন এবং ডেলয়েট রিপোর্টস-এর এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এক-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক ও ৩৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে অর্ধেকই মাঝরাতে জেগে ওঠে এবং তাদের ফোনগুলো পরীক্ষা করে থাকে। আমার ফোন বা অ্যালার্ম ঘড়িটি বাথরুমে রেখে আসার মাধ্যমে এর কাছে পৌঁছানোর অভ্যাসে নিমজ্জিত হওয়াকে আমি কঠিন করে দিয়েছি এবং রাতে একটি ভালো ঘুম দেওয়ার ব্যবস্থা পাকাঁপোক্ত করেছি।