চলুন ফিরে যাই প্লানো, টেক্সাস-এ, যেখানে ক্রিস্টিন-কে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পূর্বে, যখনই তিনি অনিশ্চিত বোধ করেছেন, তিনি হয়তো কিছু না বলে নিজের নোটপ্যাড-এর দিকে তাকিয়ে থেকেছেন, আর ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে মুহূর্তটি হয়তো কেটে গেছে। আর যদি তার কোনো সহকর্মী একই ধারণা উত্থাপন করে থাকে (যা সহকর্মীরা প্রায়ই করে থাকে তাহলে সারা বিকেলজুড়ে তিনি হয়তো কথা না বলে চুপ থাকার জন্য নিজেকেই দায়ী করতে থাকবেন।
কিন্তু, আজ ক্রিস্টিন ভিন্ন কিছু করলেন। তিনি ভয় পাচ্ছিলেন এবং অনুভব করছিলেন ৫ সেকেন্ড-এর জানালাটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কারণ তার মস্তিষ্ক তার সাথে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। তিনি যখন রুলটি প্রয়োগ করলেন, তার পেটের ভেতর গিট লেগে গেল।
তিনি তার সন্দেহগুলোকে চুপ করিয়ে দিতে এবং মস্তিষ্কের গিয়ারগুলোকে চালু করতে নীরবে উল্টো গণনা শুরু করলেন–
৫…৪…৩…২…১
এই গণনাটি তার আচরণের স্বাভাবিক ধারাকে ব্যাহত করল, ভয় পাওয়া থেকে তাকে বিরত রাখল এবং ইচ্ছাকৃত পদক্ষেপ গ্রহণের একটি মুহূর্ত সৃষ্টি করল। ঐ মুহূর্তটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার মাধ্যমে তিনি তার প্রিফ্রন্টাল করটেক্স-কে সক্রিয় করলেন যাতে করে চিন্তা-ভাবনাগুলো পরিচালনা ও কার্যপ্রক্রিয়া শুরু করা যায়। অতঃপর তিনি মুখ খুললেন এবং বললেন– আমার কাছে একটি ধারণা আছে।
সবাই তার দিকে ঘুরে তাকাল এবং ক্রিস্টিন-এর মনে হলো তিনি সেখানেই মারা যাবেন। সামনে এগোতে নিজের উপর জোর খাটালেন তিনি। একটু উঁচু হয়ে বসলেন, একটু বেশি জায়গা নিয়ে টেবিলের দুপাশে তার কনুই দুটি ছড়িয়ে দিলেন (শক্তিশালী অঙ্গপ্রদর্শন যেমন পরামর্শ দিয়ে থাকে) এবং কথা বলা শুরু করলেন– সুতরাং, আমার ধারণা, আপনারা পরিসংখ্যানগত ভাবে জানেন কিভাবে অজস্র মানুষ একটি প্রচার মাধ্যম হিসেবে স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহার করছে…
সবাই তার ধারণাটি শুনলেন, কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন এবং তারপর তার বস বললেন– ধন্যবাদ ক্রিস্টিন, অত্যন্ত আকর্ষণীয় পরামর্শ, আর কেউ? বাইরের পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো কিছু ঘটল না কিন্তু ভেতরে জীবন বদলে দেয়ার মতো কিছু একটা ঘটে গেল। ক্রিস্টিন নিজের ভেতরে সেই মনোবল আবিষ্কার করলেন যা কর্মক্ষেত্রে তিনি যা হতে চেয়েছিলেন (একজন রকস্টার) তার জন্য প্রয়োজন ছিল।
ক্রিস্টিন যা বলেছিলেন তা মুখ্য বিষয় নয়। বিষয়টি হলো তিনি যা কিছু বলেছিলেন তা ঐ মুহূর্তটিকে শক্তিশালী করেছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারাভিযানের উদ্দেশ্যে তার ধারণা শেয়ার করা ছিল একটি প্রতিষ্ঠানের বিপণন কৌশলের চাইতেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা ক্রিস্টিন-কে পরিবর্তন করে দিল। এটা শুধু তিনি কেমন আচরণ করেন তাই পরিবর্তন করল না বরং নিজেকে তিনি কিভাবে দেখেছিলেন তাও পরিবর্তন করে দিল। এটা এমনকি তার মনস্তত্ত্ব পরিবর্তন করে দিল। এটাই হলো যেভাবে আপনার আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে– একটি ৫ সেকেন্ড সময়ের পদক্ষেপ দ্বারা।
তিনি একটু মনোবল খুঁজে পেতে নিজের ভেতর গভীরে পৌঁছানোর জন্য ফাইভ সেকেন্ড রুলটি ব্যবহার করেছিলেন। এবং কথা বলার মাধ্যমে (যখন সাধারণতঃ নিজেকে তিনি পেছনে টেনে ধরে রাখতেন) প্লানো, টেক্সাস-এর এক বিকেল বেলায় সম্মেলন কক্ষে বসে তিনি নিজের কাছে প্রমাণ করেছিলেন যে, কর্মক্ষেত্রে ধারণা শেয়ার করে অবদান রাখার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট পরিমাণে ভালো এবং করিতকর্মা।
এটি ছিল একটি ছোট কিন্তু বিস্ময়কর পদক্ষেপ। এবং এর জন্য প্রয়োজন। হয় মনোবল। রুলটি ছিল কেমন করে তিনি একটি ঝুঁকি নিয়েছিলেন এবং পরামর্শটি প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছিলেন সেই সংক্রান্ত, যা আমরা সবাই জানি কাজ করে থাকে। এটি ছিল কেমন করে –শেরিল স্ট্যান্ডবার্গ অনুরোধ করেছিলেন, সেথ গোডিন টিকটিকি মস্তিষ্ককে বোকা বানাতে চেয়েছিলেন, গ্রান্ট চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মৌলিক কাজ দেখাতে চেয়েছিলেন এবং ব্রেনে ব্রাউন মহা-সাহসিকতার সাথে আমাদের ক্ষমতায়িত করতে চেয়েছিলেন।
ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি, রুলটি এমন একটি হাতিয়ার যা ক্ষণিকভাবে মানুষের আচরণে পরিবর্তন নিয়ে আসতে সক্ষম। ঠিক এভাবেই ক্রিস্টিন রুলটি ব্যবহার করেছিলেন। আপনিও তাই করবেন। স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে। ক্রিস্টিন তার অনুভূতিগুলোকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন যা তাকে থামিয়ে দিত এবং কর্মজীবনে অধিক প্রভাব বিস্তার করত। তিনি তার ধারণাগুলো প্রকাশ করার জন্য যত বেশি করে রুটি ব্যবহার করবেন, ততবেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন।
আত্মবিশ্বাস একপ্রকার দক্ষতা যা আপনি কাজের মাধ্যমে অর্জন করে থাকেন। সামাজিক মনোবিজ্ঞানী টিমোথি উইলসন অ্যারিস্টটল-কে মানসিক হস্তক্ষেপ সম্পর্কে লিখেছিলেন– ভালো করুন, ভালো হোন। এর সূচনা প্রথমতঃ মানুষের আচরণগত পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে, যা তাদের কাজের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ব্যক্তিত্বের আত্ম-উপলব্ধি বদলে দেয়।
ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি আপনার সঙ্গী হওয়ার এটাই সঠিক কারণ। এটি কাজ ও আচরণ পরিবর্তনের সাথে আপনার লক্ষ্য ও প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এটি চিন্তা করার হাতিয়ার নয় এবং দিনের শেষে আপনি যদি জীবনকে পরিবর্তন করতে চান তাহলে চিন্তা করার চাইতে আপনাকে বেশি কিছু করতে হবে।