বিশাল পার্থক্য। আর এটা ব্যাখ্যা করে কেন পরিবর্তন এত কঠিন। যৌক্তিকভাবে, আমরা জানি আমাদের কি করা উচিত, কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের অনুভূতিগুলোই আমাদের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। আপনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আপনার অনুভূতিগুলো এটা করে ফেলবে। ঐ মুহূর্তে আপনি যেভাবে অনুভব করে থাকেন তা কখনোই আপনার লক্ষ্য এবং স্বপ্নের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আপনি যা চান তা কখনোই পাবেন না যদি আপনি শুধুমাত্র আপনার তাৎক্ষণিক অনুভূতির উপর ভিত্তি করে কাজ করে থাকেন।
আপনি যে কাজগুলো করে থাকেন তা থেকে আপনার অনুভূতিগুলোকে আলাদা করা শিখতে হবে।
• যে মুহূর্তে আপনি খুব ক্লান্তি বোধ করেন, আপনি না দৌড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কিন্তু ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে আপনি দৌড় শুরু করে দিতে পারেন।
• আপনি যদি আপনার টেবিলের কার্যতালিকা অনুসরণ করার ব্যাপারে উৎসাহ বোধ না করে থাকেন, আপনি কাজ করতে পারবেন না। কিন্তু ৫-৪ ৩-২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে আপনি তা করতে নিজের উপর জোর খাটাতে পারেন।
• আপনি যদি নিজেকে যোগ্য মনে না করেন, আপনি বিশেষ কাউকে কিছু না বলার সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে আপনি বলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
আপনি যদি আপনার কার্যকলাপ থেকে অনুভূতিগুলোকে আলাদা করতে না শেখেন, আপনি আপনার সত্যিকারের সম্ভাবনাগুলোকে কখনোই বন্ধনমুক্ত করতে পারবেন না।
এভাবেই আপনার অনুভূতিগুলো পরিবর্তন থেকে আপনাকে সরিয়ে রাখে। আপনি কিভাবে অনুভব করছেন তা যখন বিবেচনা করা বন্ধ রাখেন, আপনি আসলে লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হওয়া বন্ধ করে দেন। একবার যখন আপনি দ্বিধা করেন, আপনি চিন্তা করা শুরু করেন। কি করা প্রয়োজন, কি ভালো কি মন্দ। যা করা প্রয়োজন সেই সম্পর্কে কিভাবে আপনি অনুভব করছেন তা বিবেচনা করেন এবং আপনি কাজটি করার বাইরে অন্য বিষয়ে নিজের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন।
আমি এটা আগেও বলেছি এবং আবারও বলব, কারণ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি নির্দিষ্ট ডায়েট অনুসরণ করতে, একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে, একটি ভেঙ্গে যাওয়া বৈবাহিক সম্পর্ক মেরামত করে জীবন পুনর্নির্মাণ করতে, আপনার বিক্রয় লক্ষ্য অর্জন করতে অথবা একজন খারাপ ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে আপনি আপনার সক্ষমতা নিয়ে লড়াই করছেন না, আপনি আসলে এটা করতে আপনার অনুভূতিগুলোর জন্য লড়াই করছেন। আপনি অনুভূতি থাকা সত্ত্বেও ভালোর জন্য যে কোনো পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করতে অনেক বেশী সক্ষম।
আপনি কিভাবে অনুভব করবেন তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। কিন্তু কিভাবে কাজ করবেন তা সবসময় নির্বাচন করতে পারেন।
এটা সবসময় আশ্চর্যজনক যে কি করে পেশাদার ক্রিড়াবিদরা এতসব অর্জন করেন? এর একটি অংশ প্রতিভা ও অনুশীলন, কিন্তু অন্য একটি মূল উপাদান দক্ষতা যা আমার আপনার সবার জীবনে প্রয়োজন– আমাদের আবেগ থেকে বাস্তবতা আলাদা করার দক্ষতা এবং শরীর ও মুখকে নাড়ানোর জন্য ধাক্কা দেওয়া। যখন ফুটবল চতুর্থ অর্ধে প্রবেশ করে, তারা হয়তো ক্লান্তি অনুভব করেন কিন্তু তা তারা প্রদর্শন করেন না। অনুভূতিগুলো নিছকই পরামর্শ যখন কোনো শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ বা দল তা উপেক্ষা করে। পরিবর্তনের জন্য আপনাকেও একই কাজ করতে হবে। আপনি অবশ্যই উপেক্ষা করবেন ঠিক যেভাবে অনুভব করবেন, নাইকি যেমন বলে থাকে– যেভাবে হোক কাজটি করুন।
প্রত্যেক মানুষই আত্ম-সন্দেহ বোধের সাথে লড়াই করে। লিন-ম্যানুয়েল মিরান্ডা-কে জিজ্ঞেস করুন যিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় হ্যামিল্টন-এর স্রষ্টা যা ২০১৬ সালে ১১টি টনি অ্যাওয়ার্ড জিতেছিল। তার ছয় বৎসর সময় লেগেছিল হ্যামিল্টন লিখতে। আপনি হয়তো পরবর্তী হ্যামিল্টন লেখার স্বপ্ন দেখছেন। শুধু ভুলে যাবেন না, মিরান্ডার ৬ বৎসর লেগেছিল এবং এর প্রতিটি পদক্ষেপে তাকে আত্ম-সন্দেহ বোধের সাথে সংগ্রাম করতে হয়েছিল।
তিনি সম্প্রতি তার টুইটার পৃষ্ঠায় একটি পোস্ট অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এটি মিরান্ডা ও তার স্ত্রী ভেনেসার মধ্যকার কথোপকথনের উপর একটি পোস্ট। তিন বৎসর আগে হ্যামিল্টন যখন সর্বসাধারণের সামনে প্রথম আবির্ভূত হয় এবং এক হাজার ডলার মূল্যের টিকিট বিক্রি করা শুরু করে, মিরান্ডা তখনো এই মিউজিক্যালটি লিখছিলেন এবং তার আত্ম-সন্দেহ বোধের সাথে লড়াই করছিলেন। তার ভাষায় :
আমি যত দ্রুত এটা শেষ করতে চাচ্ছিলাম তত দ্রুত হচ্ছিল না এবং এটা শেষ করার জন্য অপেক্ষা করে আমি সময় নষ্ট করতে চাইছিলাম না। এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজতে আমাকে কঠিন সময় পার করতে হয়েছিল।
মিরান্ডা কি করলেন? তিনি নিজেকে ধাক্কা মারলেন এবং লিখতে থাকলেন। এজন্য তিনি তার টুইটার পৃষ্ঠায় পোস্ট করেছিলেন– এটা মনে করিয়ে দিতে চাই যে আমরা প্রত্যেকে একই রকম। আমরা সবাই নিজেকে পরাজিত করার একই রকম অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করছি এবং এ থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় হলো ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করা এবং নিজের কাজে ফিরে যাওয়া।
তার স্ত্রী যা বলেছিলেন তা আমার পছন্দ হয়েছিল। প্রত্যেকেরই এই সমস্যাটি হয়, সবসময়। তিনি ঠিকই বলেছেন। এটাই সত্যি। আপনি সবচেয়ে বড় ভুলটি করতে পারেন যখন আপনার অনুভূতিগুলোর কথা শুনে কোনো কিছু করতে যাবেন। কোনো কিছুর জন্য অনুভব করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না। ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করুন এবং আপনার কাজে ফিরে যান।