পরবর্তী ৫ সেকেন্ড ক্রিস্টিন হয় চুপ থাকবে যা কর্মস্থলে অভ্যাসের একটি ধরন হয়ে দাঁড়িয়েছে, না হয় তাকে কথা বলার সাহস খুঁজে পেতে হবে। সাথে ক্রিস্টিন-এর একটি লক্ষ্যও রয়েছে। তিনি কর্মস্থলে উন্নতি করতে চান এবং আরো জ্যেষ্ঠ পদবীর জন্য নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে তার উদ্বেগ রয়েছে যদি না তিনি তার নির্বাহী উপস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারেন। তিনি এ ব্যাপারে কি করা উচিত তা খুঁজে বের করতে প্রচুর সময় ব্যয় করেছেন এবং আমাকেও লিখেছিলেন, কারণ এটা করার জন্য নিজের সক্ষমতার সাথে তিনি সংগ্রাম করছিলেন। আত্মবিশ্বাস নেমে যাচ্ছিল।
তিনি লান ইট, ট্রাইবস, ডেয়ারিং গ্রেটলি এবং দ্য কনডিফেন্স কোড এর মতো বইগুলো পড়ে ফেলেছিলেন। তিনি মহিলা সম্মেলনগুলোতে অংশগ্রহণ করেছেন, পরামর্শদাতার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং বাড়িতে আয়নার সামনে শক্ত হয়ে দাঁড়ানো অনুশীলন করেছেন। এই সকল গবেষণা ও পড়াশোনার প্রতি– কৃতজ্ঞতা। ক্রিস্টিন এখন জানে তাকে কি করতে হবে (কৌশলগত ধারণা শেয়ার করা, সক্রিয়া হওয়া, স্বাস্থ্যের উন্নতি করা, আরো দৃশ্যমান হওয়া এবং যে প্রকল্পগুলো তাকে প্রসারিত করবে তাতে স্বেচ্ছাসেবক হওয়া) এবং কেন করতে হবে।
আপনি সম্ভবত ভাবছেন, কেন ক্রিস্টিন কথা বলেনি যেখানে তার সুযোগ ছিল কথা বলার। দারুন প্রশ্ন। উত্তরটি কিন্তু খুব সহজ। তিনি অনুভূতিগুলোর সাথে তার যুদ্ধে হেরে যাচ্ছিলেন। ক্রিস্টিন-এর কথা বলার ব্যাপারে কোনো সমস্যা ছিল না। তিনি আত্ম-সন্দেহের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন। একটি সভায় কিভাবে কথা বলতে হয়, ক্রিস্টিন অবশ্যই তা জানেন। যা জানেন না তা হলো কিভাবে অনুভূতিগুলোকে পরাজিত করতে হয়, যেগুলো তাকে থামিয়ে দিচ্ছিল।
আপনি যদি কখনো এটা জেনে বিস্মিত হয়ে থাকেন যে, কেন এমন জিনিসগুলো করা কঠিন যা আপনার সমস্যাগুলোর সমাধান ও জীবনমানের উন্নতি করবে, তাহলে এর উত্তরটি খুব সহজ।
এটা আপনার অনুভূতি। আমরা কেউ এটা বুঝতে পারি না, কিন্তু আমরা প্রায় সব সিদ্ধান্তই আমাদের যুক্তি দিয়ে, হৃদয় দিয়ে, আমাদের লক্ষ্য ও স্বপ্নের উপর ভিত্তি করে গ্রহণ করি না– গ্ৰহণ করি আমাদের অনুভূতি দিয়ে। কিন্তু আমাদের অনুভূতিগুলো প্রায়শঃই যা আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো, তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না। উদাহরণ হিসেবে ক্রিস্টিন-কে নিতে পারেন। তিনি জানেন তার জন্য সবচেয়ে ভালো কি, কর্মীসভায় কথা বলা, কিন্তু তার অনুভূতি তাঁকে দ্বিতীয় কিছু অনুমান করতে প্রলুব্ধ করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে– হৃদয় থেকে আমরা জানি যা দীর্ঘমেয়াদে আমাদের জন্য ভালো করবে তার চাইতে বরং এই মুহূর্তে যা আমাদের কাছে ভালো বা সহজ মনে হয়, আমরা তাই বেছে নেই।
যে মুহূর্তে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার অনুভূতিগুলোই আপনার সমস্যা, আপনি এটাও জেনে যাবেন এদের পরাজিত করার ক্ষমতা আপনার ভেতরে রয়েছে। খেয়াল করে দেখুন প্লানো, টেক্সাস-এর কর্মীসভায় কত দ্রুত ক্রিস্টিন-এর অনুভূতিগুলো ডালপালা মেলে দিয়েছিল। পাঁচ সেকেন্ডেরও কম সময়ে তার মন সন্দেহে পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছিল। এটা আমাদের সবার ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে। একবার যখন আপনি বুঝতে পারবেন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আপনার অনুভূতিগুলোর ভূমিকা কি, আপনি তাদের পরাজিত করতে পারবেন।
আপনার সিদ্ধান্তগুলো অনুভূতির উপর ভিত্তি করে নেওয়া
আমরা এটা ভাবতে পছন্দ করি যে আমাদের সিদ্ধান্তগুলো যুক্তি বা লক্ষ্য নির্ভর, কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। স্নায়ুবিজ্ঞানী এন্টোনিও দামাসিওর মতো ৯৫% ক্ষেত্রে আমাদের অনুভূতিগুলোই আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়। আপনি চিন্তা করার পূর্বে অনুভব করেন। আপনি কাজ করার পূর্বে অনুভব করেন। দোমাসিও যেমনটি মনে করেন– মানুষ হলো অনুভূতির যন্ত্র যে চিন্তা করে, চিন্তা করার যন্ত্র নয় যে অনুভব করে। এবং এভাবেই আসলে আপনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন, আপনার অনুভূতির উপর ভিত্তি করে। দোমাসিও সেইসব মানুষদের পর্যবেক্ষণ করেছিলেন যাদের মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং যারা কোনো আবেগ অনুভব করতে অক্ষম, আর তিনি যা আবিষ্কার করেছিলেন তা ছিল খুবই চিত্তাকর্ষক। যাদের তিনি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন তাদের কেউই কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি। তারা যৌক্তিকভাবে কি করা উচিত বা একটি পছন্দের সুবিধা-অসুবিধাগুলো বর্ণনা করতে পেরেছিল কিন্তু সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করতে পারেনি। আমি কি খেতে চাই জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রেও তারা ছিল অসাড়।
দোমাসিও যা আবিষ্কার করেছিলেন আপনাকে তা সর্বাগ্রে অনুধাবন করতে হবে। প্রত্যেকবার একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সময় অবচেতন মনে আমরা আমাদের পছন্দটির সুবিধা অসুবিধাগুলো বিচার বিবেচনা করি এবং তারপর যেভাবে আমরা অনুভব করি তার উপর ভিত্তি করে একটি সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকি। এটি এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ের মধ্যে ঘটে থাকে, আর এজন্যই আমাদের কেউ এটা ধরতে পারে না।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন নিজেকে প্রশ্ন করেন– আমি কি খেতে চাই? তখন আপনি আসলে নিজের কাছে জানতে চাইছেন– কি খেতে আমার ইচ্ছে করছে? একইভাবে, আমি জিজ্ঞেস করিনি যে– আমার কি ওঠা উচিত? আমি আসলে নিজেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম– আমি কি উঠে পড়তে পছন্দ করব? টম জিজ্ঞেস করেনি– আমি কি তার কাছে হেঁটে যেতে চাই? অবচেতন মনে তিনি আসলে জিজ্ঞেস করেছিলেন– আমি কি তার দিকে হেঁটে যাওয়ার ব্যাপারে অনুভব করছি? ক্রিস্টিন তার কর্মক্ষেত্রে ঠিক এটাই করেছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেননি– আমি কি আমার ধারণা শেয়ার করব? তিনি অবচেতন মনে নিজেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন– আমি কি আমার ধারণা শেয়ার করার মতো কিছু অনুভব করছি?