অপেক্ষা করা, চিন্তা করা বা প্রায় করে ফেলা গণনাযোগ্য নয়। কাইরা যেমন ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, কোনো পরিবর্তনের জন্য আপনাকে আসলে কাজটি করতে হবে। প্রায় করে ফেলা বিবেচ্য নয়।
যারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে আর আমরা যারা পারিনা, তাদের মধ্যে পার্থক্য একটাই– শুরু করা এবং শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে এগিয়ে চলা। ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি দৃশ্যপট বদলে দেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন কারণ, ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা আপনাকে আপনার মাথা থেকে বের করে নিয়ে আসবে এবং সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
এবং এটা আমাদেরকে শিকাগো শহরের হায়াত রিজেন্সি হোটেল-এর শুড়িখানায় টম-এর কাছে ফিরিয়ে নিয়ে এনেছে। সে কি এখন তরুণীটির দিকে হেঁটে যাবে নাকি অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেবে। পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে। নির্ভর করছে কে টম-এর পক্ষ থেকে সিদ্ধান্তটি নেবে। এটা কি তার হৃদয় নাকি মস্তিষ্ক? কে জয়ী হবে– টম-এর স্বপ্ন নাকি ভয়? ঠিক এই ধরনের মুহূর্তের জন্য রোসা পার্কস কিছু অসাধারণ উপদেশ দিয়েছেন। টম-কে ঠিক তাই করতে হবে যা করা আবশ্যক। টম-এর হৃদয় জানে কি করা আবশ্যক। তাকে পুনরুজ্জীবিত হতে হবে।
অপেক্ষা করা কাজে দেবে না। অপেক্ষা শুধু কোন বিষয়কে আরো খারাপ করে তুলতে পারে। আপনি যখন ভয় ও অনিশ্চয়তা নিয়ে বসে থাকবেন, আপনার মস্তিষ্ক এগুলোকে আরো বাড়তে দেবে। এর নাম দ্য স্পট লাইট ইফেক্ট (প্রচার আলোর প্রভাব) এবং এটা হলো আপনাকে নিরাপদ রাখতে আপনার মস্তিষ্কের অনেকগুলো কৌশলের একটি। টম-এর ভয়টি বাস্তব। অনিশ্চয়তা ভীতিকর ব্যাপার। নিজেকে সন্দেহ করা অ-সমর্থন যোগ্য। কেউই প্রত্যাখ্যাত বা বোকা হতে চায় না। কেউই নিজেকে নিঃশেষিত অবস্থায় দেখতে চায় না। একারণেই মুহূর্তটি আপনার সামনে দিয়ে একটি আন্তঃযোগাযোগ সভা, একটি পার্টি, একটি সাক্ষাৎকার, একটি ক্যাফেটেরিয়া অথবা আপনার যাকে আকর্ষণীয় মনে হয় তার দিকে হাঁটা শুরু করে দেয়। এটা আপনার কাছে ভীতিকর মনে হতে পারে। কি ভুল হতে পারে অথবা কতটা অস্বস্তিকর বোধ হতে পারে তা নিয়ে আমরা চিন্তা করতে পারি, যদি সব সম্ভাবনা থাকার পরও কেউ আমাদের স্বাগত না জানায়।
কিন্তু টম নিরাপত্তা চায় না। টম তার জীবনকে পুনর্নির্মাণ করতে এবং আবারো ভালোবাসা পেতে চায়, যা করতে হলে প্রয়োজন মনোবল। শুড়িখানার অন্য প্রান্তের দিকে হেঁটে যাওয়ার প্রথম পদক্ষেপটি যতই ভীতিকর হোক না কেন, যে মুহূর্তে টম তা করবে, সে জীবনের সকল জাদু, আশ্চর্য এবং আনন্দ আবিষ্কার করতে শুরু করবে।
আপনি সমান্তরালভাবে কিছু কাজ করতে পারেন যেমন– আপনি অনিশ্চিত বোধ করতে এবং প্রস্তুত হতে পারেন। আপনি ভীতিবোধ করতে এবং যে কোনো ভাবে কাজটি করতে পারেন। আপনি প্রত্যাখ্যানের ভয় পেতে এবং তারপরও চেষ্টা চালাতে পারেন।
৫ সেকেন্ড-এর মনোবল বদলে দেয় সবকিছু
টম ক্ষণ গণনা শুরু করেন ৫-৪-৩ এবং এ পর্যায়ে যখন ২ এ পৌঁছান, তিনি তার জায়গা থেকে হাঁটতে শুরু করে দেন। তার কোনো ধারণা ছিলনা কি বলবেন। তার হৃত্যন্ত্র অস্থির ছিল কিন্তু দীর্ঘদিন পর এই প্রথমবারের মতো নিজেকে তার অসাড় মনে হলো না। তিনি প্রাণ অনুভব করলেন। তিনি যতই তরুণীটির দিকে এগোচ্ছিলেন, তার বুক ততই লাফাচ্ছিল। যখন তিনি পৌঁছুলেন, তরুণীটি তার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। তারপর কি হলো– সেটা অপ্রাসঙ্গিক।
কি হয়েছিল তা কোনো ব্যাপার নয় কারণ তিনি হয়তো তার হৃদয়সঙ্গী হবেন অথবা হবেন না। গল্পের শেষ অংশটি অপ্রাসঙ্গিক। একমাত্র যে বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো গল্পের শুরু, যেখানে টম আবার জীবন শুরু করা পছন্দ করেছেন। এভাবেই আপনার হৃদয়ের কথা শুনতে হয়। যখন আপনি নতুন করে ডেট করা শুরু করতে চান, একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করতে চান অথবা একটি ইউটিউব চ্যানেল শুরু করতে চান– আপনাকে প্রথমে শুরু করার মনোবল খুঁজে পেতে হবে।
লক্ষ্য করুন, আমরা কেমন মরিয়া হয়ে একটি নিশ্চয়তা চেয়েছি যেন টম তরুণীটিকে পায়। এটি হয়তো একটি ভালো সিনেমার গল্প তৈরি করেছে কিন্তু তরুণীটিকে পাওয়া এখানে মূল বিষয় নয়। জীবন নিকোলাস স্পার্কস-এর কোন উপন্যাস নয়। জীবন ধুলোময় ও কঠিন এবং পাশাপাশি হঠাৎ করেই এটা উজ্জ্বল ও অসাধারণ। তরুণীটি কারো সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে, সমকামী হতে পারে কিংবা হতে পারে সত্যিকারের দুশ্চরিত্র। এমনকি সে যদি অসাধারণ হয় এবং এর সমাপ্তি ঘটে উদ্দাম যৌনতা ও বিবাহ পর্বের মাধ্যমে, তারপরও তরুণীটি এই গল্পের শক্তির উৎস নয়। এটা হলো টম।
আপনার জীবনের মহামূল্য সম্পদ আপনার ভেতরেই সমাহিত অবস্থায় আছে। এটা অন্য কারো কাছে জমা করা নেই। টম তার নিজের জীবনের শক্তির উৎস, আর আপনার জীবনের শক্তির উৎস– আপনি নিজে। আপনি আপনার প্রবৃত্তির কথা যখন শোনেন তখন এই শক্তি বন্ধনমুক্ত হয়, আর ৫-৪ ৩-২-১ ক্ষণ গণনা করে নিজেকে ধাক্কা দেওয়ার মাধ্যমে আপনি একে সম্মানিত করেন। আপনি যখন আপনার ভেতরকার প্রকৃত আপনাকে আবিষ্কার করবেন, এটা হবে আপনার জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ উপহার।
জিন-ব্যাপটিস্টও এটা দেখেছিলেন। তিনি আমাকে লিখেছিলেন– এটা বুঝতে পেরেছি যে, আমি যে জীবনযাপন করতে চাই তা কেউ এসে আমাকে দিয়ে যাবে না। এই পৃথিবীতে আমার নিজে স্থান তৈরি করার একমাত্র উপায় হলো কাজ শুরু করে দেওয়া।