আলোচনা করার জন্য, মূল্য বাড়ানোর জন্য, উপস্থাপনার জন্য অথবা শুরু করার জন্য অপেক্ষা করে করে আমরা জীবনের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করে থাকি। এটা আমাকে মহান ওয়েইন গ্রেটজিকির উক্তিটি স্মরণ করিয়ে দেয়– আপনি যে শটগুলো নেয়া থেকে বিরত থাকেন সেগুলো আপনি ১০০% মিস করেন। বিষয়টি হলো– আপনার নেয়া শটগুলো নিয়ে কখনোই আপনার অনুশোচনা হবে না কিন্তু যে ক্ষেত্রে নিজেকে আপনি পেছনে টেনে ধরে রাখেন, সে সব ক্ষেত্রে অবশ্যই পরে অনুশোচনা হবে। এন্থনি এটা কঠিনভাবে বুঝতে পেরেছিলেন।
আজ রাতে কাউকে আমার নাম্বারটি দেওয়ার সুযোগ এসেছিল কিন্তু আমি দিইনি আর এজন্য সারাজীবন আমাকে অনুশোচনা করতে হবে। হায়, জীবন কেন এত কঠিন??
জীবন সত্যিই কঠিন, কিন্তু আমরা যখন ভয়ের কথা শুনে নিজেদেরকে অপেক্ষা করতে বলি এবং আমাদের শ্রেষ্ঠত্বকে পেছনে টেনে ধরে রাখি, জীবনকে আমরা তখন আরো কঠিনতর করে তুলি। এটা আমরা সবাই করি। আমরা কর্মক্ষেত্রে, বাড়িতে বা আমাদের সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে নিজেদের পেছনে টেনে ধরে রাখি। প্রশ্ন হলো– কেন আমরা এটা করি? উত্তরটি খুবই রূঢ়। আপনি এটাকে বলতে পারেন– প্রত্যাখ্যান, ব্যর্থতা অথবা খারাপ লাগার ভয়, কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা নিজেদের লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করি কারণ আমরা চেষ্টা করে দেখতেও ভয় পাই।
কয়েক মাস আগে আমার কন্যা কেন্ডাল-এর সাথে আমার একটি কথোপকথন হয়েছিল যা আমাকে স্পষ্ট করেছিল– আমাদের স্বপ্নের কাছে এই ধরনের অপেক্ষার খেলা কতটা মারাত্মক হতে পারে। আপনাদের প্রথমে একটু পটভূমি জানাতে চাই। কেন্ডাল-এর বয়স ১৫ এবং সে খুব প্রতিভাবান সঙ্গীতশিল্পী। সকালবেলা বিছানা ছেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে বিছানায় ফিরে যাওয়া পর্যন্ত সে গান গাইতে থাকে। সম্প্রতি তার একজন পরামর্শদাতা তাকে নিউইয়র্ক শহরের একজন সঙ্গীত পরিচালকের কাছে অডিশন দেওয়ার জন্য উপদেশ দিয়েছে। এই সঙ্গীত পরিচালক লা মিজারেবল, মেরী পপিন ও মাটিল্ডা মঞ্চনাটকগুলো নিয়ে তার ভ্রমণ পরিকল্পনায় শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করছিলেন। পরামর্শদাতার মনে হয়েছিল যে কেল-এর কোনো একটি ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার এখানে একটি ভালো সুযোগ রয়েছে।
দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, সে (কেন্ডাল) অডিশন দিতে চেয়েছিল কিন্তু তা জানিয়ে পরামর্শদাতাকে কখনো কিছু লেখেনি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন সে অপেক্ষা করছে। এটা জানা আমার জন্য আকর্ষণীয় ও হৃদয়বিদারক ছিল যে, কেমন করে তার ভাবনা ও অনুভূতিগুলো তাকে ফাঁদে ফেলেছিল। মজার বিষয় হলো সে অডিশন দেওয়ার ব্যাপারে ভীত ছিল না। অন্তত যখন সে এটা নিয়ে ভেবেছিল তখন তো নয়ই। এটা ছিল অডিশন দেওয়ার পর কি ঘটতে পারে তা নিয়ে দুর্ভাবনা।
সে আমাকে বলে– আমি চেষ্টা করে দেখতে চাইনি কারণ যদি আমি ব্যর্থ হই তাহলে কি হবে মা? কি হবে যদি দেখতে পাই নিজেকে নিয়ে যা ভাবি আমি তা নই? আমি যদি অডিশন না দিই, অন্তত নিজেকে বলতে পারব যে আমি অসাধারণ। যা চাই তা পেতে আমি শুধু একটু অলস, এই যা!
এ পর্যায়ে আমরা কোথাও এসে পৌঁছলাম। পর্যাপ্ত ভালো না হওয়ার অথবা ব্যর্থতার অনুভূতির মতো বাস্তবতার মুখোমুখি হতে আমরা কেউই চাই না। সুতরাং, মরণঘাতী কোনো রোগের মতো আমরা এগুলো এড়িয়ে চলি। আমরা আসলে অনুশীলনের সাথে এটা করে থাকি। আমরা কল্পনা করি যতক্ষণ এগুলো এড়িয়ে চলব ততক্ষণ খুব সুন্দর থাকতে পারব। যে মুহূর্তে আমি জিমনেসিয়াম যাব, আমাকে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। আর বাস্তবতা হলো– মিনিট দুয়েক ট্রেডমিল-এর উপর দৌড়ানোর পর আমাকে বাথরুমে যেতে হবে, আমার নিঃশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেবে। মনে হবে আমি মোটেই আর সুন্দর অবস্থায় নেই। আমাকে এখন অনেক কাজ করতে হবে। আর এজন্যই নিজেদের অহঙ্কার রক্ষা করতে এমনকি এটা যদি হয় আমরা যা পেতে চাই তা পাবার সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে হলেও আমরা চ্যালেঞ্জগুলোকে ধোকা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকি।
আমি কেন্ডাল-এর যথেষ্ট পরিমাণে ভালো না হওয়ার ভয় সম্পর্কে শুনে তাকে একটি সহজ প্রশ্ন করেছিলাম :
তোমার যদি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে?
এটি একটি শক্তিশালী প্রশ্ন এবং এই প্রশ্নটি আমরা যথেষ্ট পরিমাণে করি। তোমার যদি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে? কি হবে যদি তুমি অডিশনে ভালো কর এবং সবাই যেমন বলে থাকে তুমি আসলে তেমনই ভালো। কি হবে যদি তোমার ধারণাটি আসলে একটি ভবিষ্যতের কোটি টাকা মূল্যের ব্যবসা? কি হবে যদি তুমি শুধু এ বছরের কোটাই পূর্ণ করলে না বরং তা অতিক্রম করে গেলে? কি হবে যদি দেখ এটা থাকা ততটা ভীতিকর নয় যতটা তুমি ভেবেছিলে এবং তোমার সত্যিকারের সঙ্গীটির আবির্ভাব খুব সন্নিকটে?
তুমি কি দুঃশ্চিন্তাগুলোকে তোমার শ্রেষ্ঠতর হওয়ার এবং ভালোবাসার জীবন পাওয়ার প্রশ্নে তোমাকে থামিয়ে দিতে দেবে? অবশ্যই দেবে না। এমনকি যদি তুমি নিঃশেষ হয়ে যাও– নিজেকে তুমি আরেকটি কথা বলতে পার :
তাহলে কি?
আসুন আমরা দেখি তারপর আসলে কি? সুতরাং, কি হবে যদি আপনি নিঃশেষ হয়ে যান? অন্তত ক্লান্ত। আমি এ ব্যাপারে যতটা উদ্বিগ্ন ভূমিকা গ্রহণ করছি বিষয়টি ঠিক ততটাই অপ্রাসঙ্গিক। যেমন অপ্রাসঙ্গিক ছিল গুঁড়িখানায় টম-এর দৃষ্টি তরুণীটির উপর পড়া। একমাত্র প্রাসঙ্গিক বিষয় হলো– আপনি নিজে। আপনার ভেতরে আছে শক্তি। আপনি সেই শক্তির নাগাল পেতে নিজেকে একটু ধাক্কা দেওয়ার মাধ্যমে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। আপনি আপনার শ্রেষ্ঠত্ব দেখাতে পারেন অডিশনে, শুড়িখানায়, হাত তুলে অথবা কর্মক্ষেত্রে কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে।