আপনার সিদ্ধান্ত বদলান– আপনার জীবন বদলে যাবে। আপনার সিদ্ধান্তগুলো এর চাইতে বড় আর কি পরিবর্তন করতে পারে? মনোবল।
আপনার যদি শুরু করার সাহস থেকে থাকে, তাহলে সফল হওয়ার মনোবলও রয়েছে।
পর্ব ২ : মনোবলের শক্তি
দ্বিতীয় পর্ব : মনোবলের শক্তি
(৫) প্রাত্যহিক মনোবল
আমি বহু বছর ধরে শিখেছি যে কারো মন যখন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয় তখন ভয় কমে যায়; যা অবশ্যই করতে হবে তাকে জানা, ভয়কে দূরে নিয়ে যায়।
– রোসা পার্ক
ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি আবিষ্কার করার পূর্বে আপনি যদি আমার কাছে মনোবলের উদাহরণ সম্পর্কে জানতে চাইতেন তাহলে আমি হয়তো আপনাকে ইতিহাস সৃষ্টিকারী কিছু মানুষের তালিকা দিতাম। আমি হয়তো কখনোই বলতাম না যে মনোবল হলো– আপনার বিছানা ছেড়ে উঠে আসা, বসের সঙ্গে কথা বলা, ফোনটি হাতে তুলে নেয়া অথবা ওজন মাপা যন্ত্রের ওপর উঠে পড়া। আমি হয়তো আপনাকে এটা বলতাম যে মনোবল হলো একটি শব্দ যা বিশাল ও সাহসিক কাজগুলোকে বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
আমার দৃষ্টিতে সাহসী মানুষ হলো– নোবেল পুরস্কার জয়ী মালালা ইউসুফজাই, লেইমা গব্বি, দালাইলামা, অং সান সু চি, নেলসন ম্যান্ডেলা ও এলি ওয়াইসেল। আমি হয়তো আরো ভাবতাম উইনস্টন চার্চিলকে– নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করার জন্য, রোসা পার্কসকে– বাসে তার আসন রক্ষা করার জন্য এবং রুখে দাঁড়ানোর জন্য, মুহাম্মদ আলীকে– তার ধর্মীয় বিশ্বাসে অনঢ় থাকার জন্য এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার জন্য। আমি হয়তো স্মরণ করতাম হেলেন কেলারকে– যিনি তার নিজের অক্ষমতার উপর জয়লাভ করেছিলেন অন্যদের অধিকার আদায়ের জন্য, স্যার আর্নেস্ট শ্যাকেলটনকে– যিনি অ্যান্ডুরেন্স জাহাজের ক্রুদের বাঁচাতে অবিশ্বাস্য ও অদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছিলেন, অথবা গ্যালিলিওকে– যিনি সনাতন গির্জাগুলোকে অগ্রগামী বিজ্ঞানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু সাত বৎসর যাবৎ রুলটির ব্যবহার ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষের কথা শোনার পর আমি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে শিখেছি। আমাদের প্রাত্যহিক জীবন ভীতিকর, অনিশ্চয়তাপূর্ণ এবং কঠিন মুহূর্ত দ্বারা পরিপূর্ণ। এই মুহূর্তগুলোর মুখোমুখি হতে এবং জীবনের সুযোগ, জাদু ও আনন্দগুলোকে অর্গলমুক্ত করতে প্রয়োজন অসাধারণ মনোবল।
মনোবল হলো ঠিক তাই, দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল যা আপনাকে দেয়। রুলটি হোসেকে নিজের মূল্য সম্পর্কে বিশ্বাস করার মনোবল জুগিয়েছিল যা তাকে তার বসের কাছে মজুরি বৃদ্ধির কথা বলতে সাহসী করেছিল। যখন সে একটি বৃদ্ধির কথা বলেছিল, সেটা সে পেয়েছিল এবং পরবর্তী মজুরি গ্রহণের দিন তার জন্য আরো বড় একটি বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। না চাইতেই তাকে ঘন্টাপ্রতি আরো এক ডলার মজুরি বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।
ব্রাইসকে একটি রান্নার বই লেখার জন্য দুই বৎসর প্রচেষ্টা চালানোর মনোবল জুগিয়েছিল এই রুলটি। এবং সে এখানেই থেমে থাকেনি। একটি বইয়ের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান উপস্থাপনার জন্য সে পেয়েছিল বার্নস অ্যান্ড নোবেল বিক্রয় প্রতিষ্ঠানকে। ব্রাইস-এর ভাষায়– আপনি যে বিষয়ে উৎসাহী এবং যা কিছুর জন্য কাজ করতে আগ্রহী, তার সবকিছুই আপনি অর্জন করতে পারেন।
মজার বিষয়, ব্রাইস-এর বয়স যখন মাত্র ১৫ বৎসর, রুলটি মার্টিন-কে নয় বৎসর যাবৎ একের পর এক অজুহাত তৈরির ভেতর দিয়ে সামনে ঠেলে দিতে, অজুহাতগুলোকে ধাক্কা মেরে গুঁড়িয়ে দিয়ে স্কুলে ফিরে যেতে, পরবর্তীতে তার কর্মজীবনকে পরিপূর্ণতা দিতে এবং দ্বিতীয় স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছিল।
জুনিতা তার ভেতরের জ্ঞান-এর কথা শুনতে শিখেছিল। একটি চাকরি ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে চিন্তা করা বাদ দিয়ে তার এক বন্ধুর সুপারিশক্রমে ফোনটি হাতে তুলে নিয়েছিল এবং তাৎক্ষণিকভাবে কল করেছিল। অনুমান করতে পারেন সে কি পেয়েছিল? ঠিক তাই, যার জন্য সে নিজেকে ধাক্কা মেরেছিল, এমন একটি কাজ– যার স্বপ্ন দেখেছিল সে।
গ্যাবের জন্য দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি সম্পর্কে জানা ছিল একটি টার্নিং পয়েন্ট। আমিই আমার জীবনের সব ঘটনার জন্য দায়ী এই বোধটি আসার পর গ্যাবে তার জীবন বদলে দিতে রুটি ব্যবহার করার মাধ্যমে নিজের অন্তর্জালিক বাস্তবিক প্রতিষ্ঠান (ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কোম্পানি) চালু করতে পেরেছিলেন। আজ তিনি তার স্বপ্নের কর্মজীবন নির্মাণ করে চলেছেন।
ক্রিস্টিন-এর জীবন চিরতরে বদলে গেছে কারণ তার প্রেমিক ড্রাগ আসক্তি থেকে এখন মুক্ত। যখনি তিনি (প্রেমিক) অনুভব করেছেন ঐসব আসক্তি থেকে তার বেরিয়ে আসা উচিত, নিজের মনস্তত্ত্ব নিয়ন্ত্রণ করে আসক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি তিনি ব্যবহার করেছেন। তিনি তার আচরণ পরিবর্তন করতে উল্টো ক্ষণ গণনা ৫-৪-৩-২-১ করেছিলেন যা তার মানসিকতা সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছিল এবং তিনি ফিরে পেয়েছিলেন তার নিজস্ব সময়।
মনোবল আমার কাছে তাই যা বিছানা ছেড়ে উঠে আসতে আমার প্রয়োজন। বিছানা ছেড়ে উঠে আসাটা আমার জন্য ভীতিকর ছিল কারণ এরপরই আমাকে আমার সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে হতো। আয়নায় নিজেকে দেখা আমার জন্য কঠিন ছিল এবং এটা স্বীকার করা যে আমি এখন ৪১ এবং আমার কর্মজীবন বিশ্রী আকার ধারণ করেছে। আমার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করা দুঃসাধ্য এটা স্বীকার করে নেয়াটাও আমার জন্য ছিল কষ্টকর।