দ্বিধা করার মুহূর্তটি একটি ঘাতক। দ্বিধা আপনার মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টিকারী সংকেত পাঠায়। এটা একটা লাল পতাকা যা সংকেত দেয় কিছু একটা ভুল হচ্ছে এবং আপনার মস্তিষ্ক তখন স্ব-সুরক্ষা প্রক্রিয়ায় চলে যায়। আর এভাবেই আমরা ব্যর্থতার সাথে সংযুক্ত হয়ে যাই। এক মুহূর্ত এটা নিয়ে একটু ভাবুন।
আপনি সবসময় হয়তো দ্বিধা করেন না। উদাহরণস্বরূপ– সকালবেলা একটি কাপে কফি ঢালার সময় আপনি দ্বিধা করবেন না। আপনি আপনার প্যান্টটি পরার সময় দ্বিধা করবেন না। টেলিভিশন চালু করার সময়ও আপনি দ্বিধা করবেন না। আপনি আপনার প্রিয় বন্ধুকে ফোন করার সময় দ্বিধা করবেন না। আপনি চিন্তাই করবেন না। আপনার প্রবৃত্তি যখনই বলবে, আপনি ফোনটি হাতে নেবেন এবং কল করবেন। কিন্তু আপনি যখন একটি পণ্য বিক্রয়ের জন্য কল করতে বা ক্ষুদে বার্তা পাঠাতে যাবেন, আপনার মস্তিষ্ক চিন্তা করা শুরু করবে যে কিছু একটা অবশ্যই ভুল আছে। আপনি যত দীর্ঘ সময় ধরে এই বিক্রয় কলটি নিয়ে চিন্তা করবেন ততবেশি সম্ভাবনা থাকবে শেষ পর্যন্ত কলটি না করার। আমাদের মধ্যে অনেকেই বুঝতে পারেন না কতটা ঘনঘন আমরা দ্বিধাবোধ করি কারণ এটি আমরা প্রায়শঃই করি এবং একপর্যায়ে এটি আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। রুলটি ব্যবহার করার পর টিম যেভাবে এটা বর্ণনা করেছেন :
সত্যিই আমি মনে করি যে রুলটি শক্তিশালী, কারণ এটি আপনার চিন্তা-ভাবনাগুলোর উপর নজর রাখে যা প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমোদন দেয় এবং আপনাকে উপেক্ষার ওপরে ঔজ্জ্বল্য প্রদান করে থাকে। আমি যেমন বলতে থাকি যে– কি মুশকিল, আমি এটার মধ্যেই পড়ে আছি! সুতরাং, এটিকে শক্তিশালী বলাই যায় কারণ আপনি বলার পূর্বেই বুনন করা চিন্তাপদ্ধতি ভাঙতে এটি আপনাকে সাহায্য করবে যা আপনাকে কাজ করতে অনুমোদন দেবে (আমাকে সবসময় দিয়েছে) এবং নিরাপদে এগিয়ে যেতে বলবে। চিন্তার বিষয়, এখন আমি যা করছি তা করতে কি আমি ভয় পেয়েছিলাম? তবে এটা কখনোই এমন ছিলনা যে, কোনো কিছু আমি করেছি বা করিনি– তা পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিচ্ছিল।
কিন্তু শীঘ্রই আপনি শিখতে পারবেন যে, দ্বিধা করার মুহূর্তটি আপনি আপনার সুবিধার জন্যও ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিবার আপনি যখন নিজেকে দ্বিধান্বিত অবস্থায় দেখতে পাবেন তা আসলে একটি ধাক্কা দেবার মুহূর্ত। ৫ সেকেন্ডের জানালাটি খোলা আছে এবং নিজেকে সামনে ঠেলে দেওয়ার জন্য ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করার এটাই সময় যা আপনাকে আপনার অজুহাতগুলোর চাইতে অনেক বড় করে তুলবে। ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনাটি পরিবেশিত হতে পারে রুলটি এবং এর গুরুত্ববহনকারী একটি প্রাণবন্ত স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে।
রুটি কি আচরণের স্থায়ী পরিবর্তনও করতে পারে?
এই রুটি মুহূর্তের প্রতিরোধে আপনাকে আপনার মস্তিষ্কের পরিচালনা পদ্ধতিকে হারাতে সাহায্য করবে। কিন্তু আপনি কি জানেন এটি আর কি কি করতে পারে? সময়ের সাথে সাথে রুলটি পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে আপনি একসাথে সেই পদ্ধতিটি ধ্বংস করে দিতে পারেন। আমাদের বেশিরভাগই একটি জিনিস উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হই যে দুঃশ্চিন্তা, সন্দেহ এবং ভয়ের মতো চিন্তাধারাগুলো আসলে শুধুই অভ্যাস এবং আপনি এমনকি না বুঝেই এগুলো পুনরাবৃত্তি করে থাকেন। আপনি যদি নিজের সুখ ধ্বংস করতেই সবকিছু করে থাকেন যা করা আপনার অভ্যাস, তাহলে নিমোল্লিখিত অভ্যাসগুলো ভাঙতে আপনি সর্বশেষ গবেষণা অনুসরণ করতে পারেন—
অপেক্ষা
সন্দেহ
পেছনে আটকে থাকা
নীরব থাকা
অনিরাপত্তাবোধ
এড়িয়ে যাওয়া
দুঃশ্চিন্তা
অতিচিন্তা
অভ্যাসের স্বর্ণালী রীতি বলে একটি বিষয় রয়েছে এবং এটি খুব সহজ বিষয়। যে কোনো খারাপ অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য আপনাকে অবশ্যই আচরণের ধারাটি যা আপনি পুনরাবৃত্তি করে থাকেন তা প্রতিস্থাপন করতে হবে। অধ্যায় ৪-এ আমি এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করব। আমি আপনাকে শেখাব কেমন করে দুঃশ্চিন্তা, আতঙ্ক এবং ভয়ের মতো মানসিক অভ্যাসগুলো সর্বশেষ গবেষণা ও ফাইভ সেকেন্ড রুলটির সমন্বয়ে দূর করা সম্ভব।
এই মুহূর্তে আপনার যা জানা প্রয়োজন তা হলো– ফাইভ সেকেন্ড রুটি এবং ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা যা আপনার নতুন আচরণ পদ্ধতি হয়ে যাবে। পেছনে টেনে ধরে রাখার পরিবর্তে নিজেকে সামনে ঠেলে দিতে আপনি ক্ষণ গণনা করবেন। এই গণনাকে গবেষকরা শুরুর আনুষ্ঠানিকতা নামেও ডেকে থাকেন। শুরুর আনুষ্ঠানিকতা আপনার খারাপ ধরনটির পরিবর্তে নতুন, ইতিবাচক ধারার সূত্রপাত ঘটাবে।
আপনি যদি রুলটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তাহলে আপনি আপনার মস্তিষ্ককে পুনর্বিন্যাস করতে সক্ষম হবেন। আপনি প্রথাগত দুঃশ্চিন্তা, দ্বিধা এবং ভয়ের পরিবর্তে নিজেকে নতুন আচরণধারা শেখাতে পারবেন। আপনি দেখতে পাবেন যে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে মনোবলের সহিত আপনি কাজ করে চলেছেন। সময়ের সাথে সাথে আপনি যতই সামনে এগিয়ে যাবেন, নিজের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করবেন– সত্যিকারের আত্মবিশ্বাস ও গর্ব। যখন আপনি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ও ছোট ছোট অর্জনগুলোকে সম্মান প্রদর্শন করবেন, তখনই আসবে আপনার বিশুদ্ধ ধরন।
আপনি যদি মনে করে থাকেন, আপনার অভ্যাস, মানসিকতা ও ব্যক্তিত্বের মতো সবকিছুই পাথরে খোদাই করা থাকবে, তাহলে জানা প্রয়োজন– এগুলো খুবই নমনীয় বিষয়। আপনার জীবনের জন্য রুটির প্রয়োগ সত্যিই রোমাঞ্চকর। আপনি যখন ৫ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করা শুরু করবেন, তখন একই সাথে আপনি আপনার সনাতন মানসিকতা ও অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করতে সক্ষম হবেন। ঐ ছোট ছোট সিদ্ধান্তগুলোই বড় পরিবর্তনের সঙ্গে যোগ হবে এবং আপনাকে দেখাতে সহায়তা করবে যে– আপনি কে, আপনি কি অনুভব করেন এবং আপনি কেমন জীবনযাপন করেন।