এভাবেই রুলটি আপনার মস্তিষ্কে কাজ করে থাকে। যত বেশি সময় ধরে আপনি কোন বিষয়ের উপর চিন্তা-ভাবনা করবেন, কাজটি করার ইচ্ছা আপনার ততটাই কমতে থাকবে। আমরা যেখানে রয়েছি ঠিক সেখানেই নিজেদেরকে স্থির রাখতে কি আশ্চর্যজনকভাবেই না নিজেদের আমরা বোকা বানাই। যত দ্রুত আপনার অনুভূতিটি সচল হতে থাকে, আপনি এটিকে যুক্তিযুক্ত করা থেকে ততটাই সরে যেতে থাকেন। আর তাই আপনাকে খুব দ্রুত মুভ করতে হবে– যাতে করে আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে ফাঁদে ফেলার আগেই আপনি অজুহাতমুক্ত হতে পারেন।
কিসের জন্য আমি রুটি ব্যবহার করব?
বছরব্যাপী আমি হাজার হাজার উদাহরণ শুনেছি– কেমন করে মানুষজন তাদের জীবন, সম্পর্ক, সুখ ও কাজের উন্নতির জন্য রুলটির ব্যবহার করছেন। কিন্তু প্রতিটি উদাহরণ তিনটি স্বতন্ত্র ধারার কোনো একটির মধ্যে পড়ে যায়।
• আপনার আচরণ পরিবর্তন করার জন্য এটি ব্যবহার করতে পারেন
নতুন অভ্যাস সৃষ্টির লক্ষ্যে নিজেকে একটু ধাক্কা দিতে আপনি রুলটি ব্যবহার করতে পারেন। ধ্বংসাত্মক অভ্যাস থেকে নিজেকে টেনে সরিয়ে আনতে, এবং আত্মতদারকি ও আত্মনিয়ন্ত্রণ দক্ষতার প্রভুত্ব করতে রুলটি ব্যবহার করতে পারেন যাতে করে আপনি আপনার নিজের ও অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অধিক আগ্রহী এবং কার্যকর হতে পারেন।
• প্রাত্যহিক মনোবলের সহিত কাজ করার জন্য এটি ব্যবহার করতে পারেন।
নতুন, ভীতিকর অথবা অনিশ্চিত কিছু করতে প্রয়োজনীয় মনোবল খুঁজে পেতে আপনি রুলটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার সন্দেহগুলোকে চুপ করিয়ে দিতে এবং আপনার ভালোলাগার পেছনে তাড়া করার জন্য নিজেকে সামনে ঠেলে দিতে, কার্যক্ষেত্রে নিজের ধারণাগুলো শেয়ার করতে, বিভিন্ন প্রকল্পে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে, আপনাকে প্রসারিত করতে, নিজের শিল্প সৃষ্টি করতে এবং একজন ভালো নেতা হতে আত্মবিশ্বাস তৈরি করবে।
• আপনার মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এটি ব্যবহার করতে পারেন
নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা এবং আপনাকে নিচে নামিয়ে দেয়া সীমাহীন দুঃশ্চিন্তার বাঁধ ভেঙে দিতে রুলটির ব্যবহার করতে পারেন। আপনি উদ্বিগ্ন হওয়ার অভ্যাস এবং যে কোনো ভীতি দূর করতে পারেন– যখন আপনি আপনার মনের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করবেন এবং নেতিবাচক বিষয়ের উপর মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে সেইসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করবেন যা আপনার জন্য আনন্দ বয়ে আনে। আর এটাই আমার মতে, রুলটি ব্যবহার করার শক্তিশালী উপায়।
কিছু জিনিস কেন এত সহজে কাজ করে?
রুলটি কাজ করার কারণ, এটি খুবই সহজ। আপনার মস্তিষ্কের কাছে আপনার কাজের স্পৃহাকে মেরে ফেলার সব ধরনের কৌশলগত উপায় রয়েছে। আমার কিছু প্রিয় গবেষক, অধ্যাপক ও চিন্তাবিদ বেশকিছু বেস্টসেলার বই লিখে এবং টেড টক আলোচনায় বিশদ ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন যে, কেমন করে আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের নিজের সাথে পক্ষপাত, পছন্দের বৈপরীত্য, মনস্তাত্ত্বিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও স্পটলাইট প্রভাব দ্বারা বিশ্বাসঘাতকতা করে থাকে। এইসব মহান গবেষকরা আমাকে শিখিয়েছেন– যেই মুহূর্তে আপনি পরিবর্তিত হতে, অভ্যাসচক্র ভাঙতে অথবা কঠিন ও ভীতিকর কিছু করতে চাইবেন, আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে থামিয়ে দিতে কাজ শুরু করবে।
মূলতঃ মস্তিষ্ক আপনার চিন্তাপ্রবাহের মাঝেই আপনার সঙ্গে চালাকি করে থাকে। যে মুহূর্তে আপনি নিজের সঙ্গে এরকম চালাকি করতে দেখবেন, নিজেকে আপনি আপনার চিন্তা দ্বারা নিজেই আটকে ফেলুন। আপনার মস্তিষ্কের আছে আপনার সঙ্গে কাজের বাইরে কথা বলার অসংখ্য উপায়। আর এটাই এর পরিবর্তিত না হওয়ার স্নায়ুতাত্ত্বিক কারণ। অধ্যায় ১-এ আমি যেমন উল্লেখ করেছি, পরিবর্তনের জন্য আপনাকে তাই করতে হবে যা– অনিশ্চিত, ভীতিকর অথবা নতুন। আপনার বুদ্ধিমত্তা নকশা অনুযায়ী আপনাকে তা করতে দেবে না। আপনার মস্তিষ্ক যা করতে অনিশ্চিত, ভীতি অথবা নতুনত্ব অনুভব করে, তা করতে ভয় পায়। সুতরাং এটা আপনাকে ঐ সকল কাজ থেকে বিরত রাখতে আপনার সঙ্গে কথা বলার জন্য যা করা দরকার তাই করবে। এটা আপনার হার্ডওয়্যারের অংশ। এই দ্বিধাগুলো সত্যিই খুব দ্রুত ঘটে থাকে, আর তাই একে পরাস্ত করতে হলে আপনাকে আরো দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে হবে।
রুলটির উদ্দেশ্য সাধনের শক্তি এবং শক্তিশালী ও পরীক্ষিত কিছু মূলনীতির আধুনিক মনোবৈজ্ঞানিক উদাহরণ হলো– কাজের প্রতি পক্ষপাত, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণস্থল, আচরণগত নমনীয়তা, অগ্রগতি নীতি, শুরু করার প্রথা, অভ্যাসের স্বর্ণালী রীতি, বিশুদ্ধ গর্ব, ইচ্ছাকৃত পদক্ষেপ, যদি-তারপর পরিকল্পনা এবং শক্তি সক্রিয়করণ। এই বইটি জুড়ে আপনি এই মূলনীতিগুলোর বিষয়ে যতবেশি বিস্তারিত পড়বেন ততবেশি জানতে পারবেন, বিশেষ করে আপনার জীবনের সুনির্দিষ্ট এলাকায় কি করে রুটি ব্যবহার করতে হবে সেই সংক্রান্ত আলোচনা।
কি করে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে একটি রুল কাজ করে?
ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি আসলে একটি ক্ষেত্রেই কাজ করে, আর তা হলো আপনি। প্রত্যেকবার ঠিক একই রকমভাবে দ্বিধান্বিত হওয়ার মাধ্যমে আপনি নিজেকে পরিবর্তিত হওয়া থেকে বিরত রাখেন। তারপর আপনি শুরু করেন অতিরিক্ত চিন্তা-ভাবনা এবং একটা সময় নিজেকে দেখতে পান মানসিক কারাগারে।