আনন্দের বিষয় এই যে, আজ পর্যন্ত ৮০টি দেশের এক লক্ষ বা তার চাইতে বেশি মানুষ আমাকে রুলটি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা জানিয়ে লিখেছেন। আরো অধিক মানুষ যখন আমাকে আরো বেশি তথ্যের জন্য অনুরোধ এবং প্রশ্ন করে লিখতে শুরু করলো, আমি তখন আরো গভীর গবেষণা শুরু করলাম যাতে করে বিভিন্ন উপায়ে রুলটি ব্যাখ্যা করতে পারি এবং প্রমাণ করতে পারি কেন রুলটি এতটা কার্যকর। পেশায় আমি ছিলাম একজন আইনজীবী। আর তাই গবেষণার ব্যাপারে আমি ছিলাম কঠোর। আমি উদাহরণ, প্রমাণ এবং নির্দেশনা খুঁজে বের করেছিলাম যাতে করে জুরিদের সামনে দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল সংক্রান্ত আমার মামলাটি প্রমাণ করতে পারি।
এতে আমার প্রায় ৩ বৎসর লেগেছিল। আমি সবকিছু পড়ে দেখেছিলাম। পরিবর্তন, সুখ, অভ্যাস, অনুপ্রেরণা এবং মানুষের আচরণ সম্পর্কে আমি জানার চেষ্টা করেছি। সমাজবিজ্ঞান গবেষণা, সুখ গবেষণা, মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষণার উপর আমি পড়াশোনা করেছি। আমি আমার গবেষণা বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখিনি। আমি প্রত্যেকের কাছেই প্রশ্নপত্র পাঠিয়েছিলাম যারা রুলটি ব্যবহার করেছিল। অতঃপর ফোন, স্কাইপে এবং গুগল চ্যাটের মাধ্যমে তাদের উত্তরগুলো জানার চেষ্টা করি এবং পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে যারা বিভিন্ন মুহূর্তের মুখোমুখি হয়েছিল তাদের অভিজ্ঞতা সমূহ ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ করে দেখি।
আমি যখন পরিবর্তনের মুহূর্তগুলো বিশ্লেষণ করছিলাম তখন সবার ভেতর উদ্ভট কিছুর উপস্থিতি উন্মোচন করেছিলাম। ঠিক যেমন আমরা কোনো কাজ করার পূর্বে কঠিন, ভীতি অথবা অনিশ্চিত বোধ করি এবং দ্বিধাগ্রস্ত হই। দ্বিধা হলো অনেকটা মৃত্যুকে চুম্বন করার মতো। আপনি হয়তো এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশ পরিমাণ সময় দ্বিধা করতে পারেন কিন্তু এটা ওইটুকু সময়ই নেবে। ঐ এক মুহূর্তের দ্বিধা আপনার মানসিক প্রক্রিয়াকে অচল করে দেবার জন্য যথেষ্ট।
কখনো কি খেয়াল করেছেন আপনি কতটা দ্রুত ভয় এবং সন্দেহের কাছে। আপনার মাথা নত করছেন এবং কোনো কাজ করার ব্যাপারে নিজেকে চুপ করিয়ে রাখতে অজুহাত তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছেন। প্রতিদিন আমরা ক্ষুদ্র জাগতিক মুহূর্তগুলোতে নিজেদেরকে পেছনে টেনে ধরে রাখি এবং এর প্রভাব পড়ে সর্বত্র। আপনি যদি এই অভ্যাস ও দ্বিধাগুলো ভাঙতে পারেন তাহলে আপনি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার মতো মনোবল খুঁজে পাবেন, যা আশ্চর্যজনকভাবে অতি দ্রুত আপনার জীবনকে বদলে দেবে। কৃথ, যা রি ম্যাক্স কনভেনশন-এ রুলটি সম্পর্কে আবিষ্কার করেছিলেন।
ক্বীথ এর ভাষায়– আমি আপনাকে ২০১৫ সালে প্রথম জানতে পারি। আপনি আমাকে অবিশ্বাস্য কাজ করতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন। আমার শুধু নিজের পদ্ধতি ছেড়ে বেরিয়ে আসার দরকার ছিল। আপনার রুলটি অনুসরণ করার মাধ্যমে মাত্র দেড় বৎসর সময়ে আমি তিনটি অফিস খুলতে এবং আরাকানসাস অঞ্চলে ৫০ জনেরও অধিক প্রতিনিধি নিয়োগে সক্ষম হয়েছিলাম। কোনো দ্বিধা নয়, কোনো আলসেমি নয়। আমি শুধু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম যা আমাকে আমার লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করেছিল। অনেক বড় কাজ হঠাৎ করেই আমার কাছে নিয়ন্ত্রণযোগ্য বলে মনে হতে লাগলো। কঠিন অংশটি ছিল– শুরু করা। আপনাকে ধন্যবাদ রুলটি শেয়ার করার জন্য এবং আমাদের সবচেয়ে উন্নত সংস্করণ হতে অনুপ্রেরণা জোগানোর জন্য।
খেয়াল করুন, এটা আমাদের জীবনের বড় কোনো পদক্ষেপ নয়। বরং ক্ষুদ্রতম। ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে কাজটি শুরু না করে আপনি চিন্তা-ভাবনা করছেন এবং সেই ক্ষুদ্রতম বিষয়গুলোর উপর কাজ না করতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। সময়ের সাথে সাথে সেই ছোট সিদ্ধান্তগুলো পিকৃত হতে থাকে। দ্বিধা, উদ্বেগ আর নিজেকে সন্দেহ করার এই ধরনটি আমরা খুব বেশি মাত্রায় পুনরাবৃত্তি করি যা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয় এবং একই সাথে মস্তিষ্কে গেঁথে যায়।
প্রকৃতপক্ষে দ্বিধা, যা আপনাকে পেছনে টেনে ধরে রাখে এবং অতি-চিন্তা যা আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, এগুলো কোনো ব্যাপার নয়। খারাপ অভ্যাসগুলো ছেড়ে দেওয়া বা প্রতিস্থাপন করার খুব সহজ ও প্রমাণিত পন্থা রয়েছে, আর তা হলো দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল। একবার যখন আপনি আপনার অভ্যাসচক্রটি পড়ে ফেলবেন, আপনার কার্যপ্রক্রিয়া শুরু করবেন, শক্তিকে সচল করবেন এবং আপনার সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করতে ভূমিকা পালন করবেন– আপনি আসলে দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল-টির বিশালত্বের প্রশংসা করবেন। আপনি যখন রুটি ব্যবহার করবেন, দেখতে পাবেন যে পরিবর্তন কেমন করে ৫ সেকেন্ডের সিদ্ধান্তগুলোকে কজা করছে এবং আপনি কত সহজেই না আপনার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাচ্ছেন।
আপনি প্রতিবার যখনই রুলটি ব্যবহার করবেন, এটি কাজ করবে। কিন্তু আপনাকে এর ব্যবহার করতে হবে। এটি একটি হাতিয়ার। আপনি যদি এর ব্যবহার বন্ধ করে দেন, ভয় ও অনিশ্চয়তা ফিরে আসবে এবং আপনার সিদ্ধান্তগুলোর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করবে। এমনটি যদি ঘটেই যায়, তাহলে পুনরায় রুলটির ব্যবহার শুরু করে দিন।
আপনি যখন সময়ের সাথে সাথে রুলটি ব্যবহার করবেন, নিজের ভেতরে একটি স্থানান্তরের অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন যা খুবই গভীর। একটি রূপান্তর দেখতে পাবেন যা আপনার আত্মবিশ্বাস ও অন্তর্গত শক্তির উপর প্রভাব ফেলবে। আপনি আপনার অজুহাত, অভ্যাস, অনুভূতি, অনিরাপত্তাবোধ এবং ভয়ের মুখোমুখি দাঁড়াবেন, যেগুলো আপনাকে বছরের পর বছর ধরে তাড়া করে ফিরেছে। আপনি দেখতে পাবেন প্রতিদিন আপনি নিজেকে কি পরিমাণ আবর্জনার মধ্যে ফেলেছেন এবং কিছু জিনিস পরিবর্তিত হওয়ার অপেক্ষায় কি পরিমাণ মূল্যবান সময়ের অপচয় করেছেন।