এটি যখন পরিবর্তন, লক্ষ্য ও স্বপ্নবিষয়ক কোনো কিছু হবে, আপনাকে তখন নিজের উপর বাজি ধরতে হবে। প্রবৃত্তিগুলোর কথা শোনা এবং তার উপর কাজ করার মাধ্যমে সম্মান প্রদর্শন করাই হবে নিজেকে নিয়ে বাজি ধরার শুরু। আমি কৃতজ্ঞতাবোধ করছি এই ভেবে যে নিজেকে বিছানা থেকে তুলে দাঁড় করাতে রকেট উৎক্ষেপণের ধারণাটিকে আমি গুরুত্ব দিয়েছিলাম যা আমার জীবনের সবকিছু বদলে দিয়েছিল। এবং তারপর যা ঘটেছিল–
পরদিন ভোর ৬টায় আমার ঘড়ির অ্যালার্ম বেজে ওঠার পর প্রথম যা আমি অনুভব করেছিলাম, তার নাম ভীতি। এটা হলো অন্ধকার, শীতল। বোস্টন-এর এক শীতের সকাল ছিল এটা এবং আমি উঠতে চাইছিলাম না। তৎক্ষণাৎ আমি রকেট উৎক্ষেপণের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করি এবং অনুভব করি– কী নির্বোধের মতোই না আমি ভাবছি। অতঃপর আমি যা করলাম, ইতিপূর্বে আমি তা কখনো করিনি। আমি আমার ভাবনাগুলোকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করলাম। আমি আর বেশি কিছু চিন্তা করিনি। তাই করেছিলাম ঠিক যা করা আমার প্রয়োজন ছিল।
ঘুমিয়ে পড় বোতামে চাপ দেওয়ার পরিবর্তে আমি উল্টো করে ক্ষণ গণনা শুরু করেছিলাম ৫-৪-৩-২-১
এবং তারপর আমি বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েছিলাম। এটাই ছিল সেই মুহূর্ত যখন আমি আবিষ্কার করি দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল।
যে মুহূর্তে আপনার কোনো প্রবৃত্তি একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে চাইবে, আপনাকে ক্ষণ গণনা শুরু করতে হবে ৫-৪-৩-২-১
এবং আপনাকে শারীরিকভাবে সচল হতে হবে, তা না হলে আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে থামিয়ে দিতে পারে।
*
(৩) এর ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি কি আশা করতে পারেন?
মানুষ হিসেবে জন্ম নেয়াটা কোনো বিষয় নয়, মানুষ কি হতে চায় সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
– জে. কে. রাওলিং
প্রথমদিন সকালে আমি যখন রুলটি ব্যবহার করেছিলাম, অন্যদের মতো আমিও দেখে অবাক হয়েছিলাম যে নির্বোধের মতো কিছু একটা কাজ করছে। উল্টো গণনা? ৫-৪-৩-২-১। সত্যি? আমি জানিনা কেন এটা কাজ করেছিল। শুধু জানি– করেছিল। সময় মতো বিছানা ছেড়ে উঠতে আমি মাসের পর মাস চেষ্টা চালিয়েছিলাম, কিন্তু হঠাৎ করে দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল খুব সহজেই আমার অভ্যাসটি বদলে দেয়।
পরবর্তী পর্যায়ে আমরা জানব যে, আপনি যখন উল্টো ক্ষণ গণনা করবেন তখন মানসিকভাবে আপনি আসলে আপনার গিয়ার পরিবর্তন করবেন। আপনি আপনার স্বাভাবিক চিন্তা-ভাবনা বন্ধ রেখে যা করে দেখাবেন তা হলো– মনোবিজ্ঞানের ভাষায় নিয়ন্ত্রিত দৃঢ়তা। এটা হলো নিজের মস্তিষ্ককে নতুন পথে চালিত করার কৌশল হিসেবে অজুহাতগুলোকে বিভ্রান্ত করা এবং মনোঃসংযোগ করা। যখনি আপনি চিন্তা করা বন্ধ রেখে শারীরিকভাবে সচল হবেন, আপনার মনস্তত্ত্ব পরিবর্তিত হয়ে একটি রেখায় এসে দাঁড়াবে।
এই বইটির গবেষণায় আমি আবিষ্কার করেছি যে রুলটি হলো (অভ্যাস সংক্রান্ত গবেষণার ভাষায়) একটি প্রারম্ভিক প্রক্রিয়া যা আপনার আচরণ পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে এবং প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স-কে সচল করবে।
প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স হলো আপনার মস্তিষ্কের সেই অংশ যা আপনি মনোঃসংযোগ, পরিবর্তন এবং ইচ্ছাকৃত কোনো কাজ সম্পন্ন করতে ব্যবহার করে থাকেন। আমি জানতাম প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স কি। কিন্তু খুব শীঘ্রই আমি মৌলিক নার্ভগ্ৰন্থি বিষয়ে গবেষণার মাধ্যমে– অভ্যাসচক্র, শক্তি সক্রিয়করণ, নমনীয় আচরণ, জ্ঞানীয় পক্ষপাত, অগ্রগতি নীতি এবং নিয়ন্ত্রণ অবস্থান সম্পর্কে জানতে পেরেছিলাম।
আমি পরদিন ভোরে রুলটি ব্যবহার করেছিলাম এবং এটা আবারো কাজ করেছিল। আমি ৫ সেকেন্ড সময়ের মুহূর্তগুলো দিনব্যাপী দেখতে শুরু করলাম, ঠিক যেমন ঘুম থেকে জেগে ওঠার ব্যাপারে আমার সংগ্রাম এবং দিনব্যাপী তার প্রতিক্রিয়াসমূহ দেখেছিলাম। নিজের মস্তিষ্ক আমাকে থামিয়ে দেয়ার পূর্বে আমার অজুহাতগুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে এই রুলটি ৫ সেকেন্ডের চাইতেও কম সময় নিয়েছিল।
আপনি যখন রুলটি ব্যবহার করবেন, তখন দেখতে পাবেন যে– আপনার প্রাথমিক প্রবৃত্তি কাজ করা এবং মস্তিষ্ক আপনাকে থামিয়ে দেওয়ার মাঝখানে একটি জানালা রয়েছে। আমি দেখেছি ঐ ৫ সেকেন্ড সময়ের জানালাটি আমার সবকিছু বদলে দিয়েছিল। সমস্যাটি ছিল খুব স্পষ্ট। আর তা হলো আমি নিজে। ৫ সেকেন্ড সময় ধরে আমি আমার নিজেকেই পেছনে টেনে ধরে রাখতাম।
সুতরাং নিজের কাছে আমি একটি সাধারণ প্রতিজ্ঞা করলাম। আমি যদি দেখি নিজের ভালোর জন্য আমার কিছু করা উচিত, তাহলে রুলটি ব্যবহার করার মাধ্যমে নিজেকে আমি তা করতে সামনে ঠেলে দেব। আমার যাই মনে হোক না কেন। নিজের ওপর জোর খাটাতে আমি রুলটির ব্যবহার শুরু করেছিলাম শুধুমাত্র ভোরবেলা বিছানা ছেড়ে ওঠার জন্যই নয় বরং যাতে করে আমি জিমনেসিয়াম যেতে পারি, নতুন কাজ খোঁজা শুরু করতে পারি, মদ্যপান কমিয়ে আনতে পারি এবং একজন ভালো স্ত্রী ও মা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।
প্রক্রিয়াগুলো ছিল :
• আমি যদি ব্যায়াম করতে খুব বেশি পরিশ্রান্ত অনুভব করি, তাহলে আমাকে যা করতে হবে–
৫-৪-৩-২-১ এবং দৌড়ের জন্য নিজেকে দরজার বাইরে ঠেলে দেওয়া।
• আমি যদি আমার গ্লাসে বেশি পরিমাণ পানীয় ঢেলে দিই যা পান করা উচিত নয়, তাহলে আমাকে যা করতে হবে–