‘তুমি কি ভাবছো আমি ভয় পেয়ে গেছি, ও’ম্যালি?’ হ্যারি তার কপালের রক্তে হাত দিয়ে বললো।
‘তুমি কি ভাবছো আমি তোমাকে ভয় পেয়ে যাবো?’
কিছু না বলে আরও এগিয়ে এলো কনর।
হ্যারি পিছিয়ে গেল।
‘কনর ও’ম্যালি।’ হ্যারি বললো, তার কণ্ঠে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে, ‘সবাই তোমাকে সহমর্মিতা দেখায় কেবল তোমার মায়ের জন্য। তুমি এমন ভাব করে থাকো যেন তুমি অন্যদের চাইতে আলাদা, যেন কেউ তোমার সম্পর্কে জানে না।
কনর হাঁটতে থাকলো। সে হ্যারির কাছাকাছি পৌঁছে গেল।
‘কনর ও’ম্যালি, যে শাস্তি পেতে চায়’ হ্যারি সরাসরি কনরের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘কনর ও’ম্যলি, যার শাস্তি পাওয়া উচিত, কেন তাকে তুমি লুকাচ্ছো?’
‘তুমি চুপ করো।’ কনর চেঁচিয়ে উঠলো।
দানবটাও যেন তার সাথে সাথেই একই কথা বলছে।
হ্যারি আরও এক পা পিছিয়ে গেল, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তার। পুরো স্কুল যেন অপেক্ষা করছে কনর হ্যারিকে কী করে তা দেখার জন্য। বাইরে থেকে শিক্ষকদের কথা শোনা যাচ্ছে, অবশেষে তারা বুঝতে পেরেছে যে ভেতরে কিছু একটা হচ্ছে।
‘কিন্তু তুমি কি জানো আমি তোমার দিকে তাকিয়ে কী দেখতে পাই, ও’ম্যালি?’ হ্যারি বললো।
কনর মুঠি শক্ত করে ফেললো।
‘আমি শূন্যতা দেখতে পাই।’ হ্যারি বললো।
কনর না ঘুরেই দানবটাকে প্রশ্ন করলো, ‘তুমি অদৃশ্য মানুষটাকে কীভাবে সাহায্য করেছিলে?’
দানবটার কণ্ঠ যেন তার মাথার ভেতরে বাজছে, ‘আমি তাদেরকে দেখিয়েছি।’ এরপর দানবটা হ্যারিকে দেখানোর জন্য সামনে এগিয়ে গেল।
শাস্তি
‘আমি বুঝতে পারছি না তোমাকে কী বলা উচিত।’ হেডমিস্ট্রেস কনরকে বললেন, ‘তোমাকে কীই-বা বলা যেতে পারে, কনর?’
কনর কার্পেটের দিকেই সোজাসুজি তাকিয়ে। কার্পেটে কেউ ওয়াইন ফেলে দিয়েছিল, রং লেগে আছে সেটার। মিস ওয়ানও আছে সেখানে। কনরের পেছনে বসে আছে যেন সে পালাতে না পারে। হেডমিস্ট্রেস মিস ওয়ানের চেয়েও বয়সে বড়ো এবং বেশি ভয়ানক।
‘তুমি ওকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছো, কনর।’ তিনি বললেন, ‘তুমি তার হাত আর নাক ভেঙে দিয়েছো, আমি হলফ করে বলতে পারি তার দাঁতগুলো আর আগের মতো সুন্দর দেখাবে না। তার বাবা-মা পুরো স্কুলকে হুমকি দিচ্ছে আর বলছে, তোমার বিরুদ্ধে ফাইল চার্জ করবে।’
‘তারা এখন খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে আছে, কনর।’ মিস ওয়ান পেছন থেকে বললো, ‘আর এটা তাদের দোষ না। আমি তাদেরকে সবকিছু বুঝিয়ে বলেছি। হ্যারি কীভাবে তোমাকে প্রতিদিনই জ্বালাতন করতো আর তোমার অবস্থাটাও কেমন–নাজুক।’
শব্দটা পছন্দ হলো না কনরের
‘এই জ্বালাতনের কথাটা শুনেই তারা দমে গেছে। আজকাল এসব রেকর্ড থাকলে ভালো ইউনিভার্সিটিতে ঢোকা যায় না।’
‘কিন্তু মোদ্দা কথা সেটা নয়!’ হেডমিস্ট্রেস এত জোরে বললেন যে কনর আর মিস দুজনেই লাফিয়ে উঠলো, ‘কী হয়েছে তা আমি বুঝতেই পারছি না। একটা ছোটো ছেলে কীভাবে একা একা এতটা ক্ষতি করতে পারে!’
কনর বুঝতে পারছিল যে তার নিজের হাত ব্যবহার করেই দানবটা হ্যারিকে মারছিল। দানবটা হ্যারির শার্ট ধরে তাকে ঘুসি মেরেছে, কনর নিজের হাতেই সেটা অনুভব করেছে। হ্যারি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু একটা ছোটো ছেলে কীভাবে একটা দানবের মোকাবেলা করবে?
কনর সেই ছোটাছুটি আর চিৎকারগুলো মনে করতে পারছে। মনে করতে পারছে যে অন্য ছেলেমেয়েগুলো ছুটে গিয়ে শিক্ষকদের নিয়ে এসেছে। তার মনে আছে কীভাবে সবাই গোল হয়ে তাকে দেখছিল। তার মনে আছে কীভাবে দানবটা তাকে অদৃশ্য মানুষের গল্প বলেছে।
একটা সময়ে হ্যারি মোকাবেলা করা বন্ধ করে দিয়েছিল। দানবটা তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী আর দ্রুতগামী, একের পর এক ঘুসি মেরে চলেছিল।
‘আর কখনও অদৃশ্য নয়।’ শেষমেশ বলেছিল দানবটা।
কনরের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল।
‘কিন্তু অদৃশ্য হওয়ার চেয়েও কঠিন জিনিস আছে।’
আর এরপর কনরকে রক্তাক্ত হ্যারির সামনে রেখে সেটা মিলিয়ে যায়।
ডাইনিং হলের সবাই তখন কনরকেই দেখছিল। সবাই দেখতে পাচ্ছিল। রুমে পিনপিতন নিস্তব্ধতা। তারপর মুহূর্তেই শিক্ষকেরা সেখানে এসে পড়ে কোথায় ছিল তারা এতক্ষণ? দানবটা কি তাদেরকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল? এত দ্রুতই কি সবকিছু হয়ে গেছে?
এর পর তারা কনরকে নিয়ে চলে যায়।
‘তুমি কি নিজের জন্য কিছু বলবে?’ হেডমিস্ট্রেস জিজ্ঞেস করলেন।
কনর কিছু বললো না।
‘আমার উত্তর চাই, তুমি তাকে গুরুতরভাবে আঘাত করেছো।’
‘আমি করিনি।’
‘কী বললে?’
‘আমি করিনি, দানবটা করেছে।’
‘দানব!’ হেডমিস্ট্রেস বললেন।
‘আমি হ্যারিকে হাতও লাগাইনি।’
হেডমিস্ট্রেস মিস ওয়ানের দিকে তাকালেন।
‘পুরো ডাইনিং হলে সবাই দেখেছে তোমাকে, কীভাবে তুমি হ্যারিকে মারছিলে।’ মিস ওয়ান বললো, ‘তারা তোমাকে দেখেছে হ্যারিকে ধাক্কা দিতে, তুমি তাকে টেবিলে ফেলে দিয়ে তার মাথাটা চেপে চেপে ধরছিলে, তুমি চিৎকার করছিলে অদৃশ্য হওয়ার ব্যাপারে।’
কনরের হাত ব্যথা করছে, নানুর বসার ঘর ধ্বংসের পরেও এমন মনে হচ্ছিল তার।
‘আমি তোমার রাগের কারণ বুঝতে পারছি।’ মিস ওয়ান নরম স্বরে বললেন, ‘মানে, আমরা তোমার কোনো অভিভাবককেও খুঁজে পাচ্ছি না।’
‘বাবা আমেরিকায় চলে গেছে, আর নানু সব সময় ফোন সাইলেন্ট করে রাখে যেন মা ঘুম থেকে না উঠে যায়। নানু আপনাকে আবার ফোন করবে।’