একটু পর কনর জিজ্ঞেস করলো, ‘তাকে কবে বাসায় আনা যাবে?’
নানু এই প্রশ্নের উত্তর দিলো না। আধা ঘণ্টার মধ্যে তারা স্কুলে পৌঁছে গেল।
ক্লাসে মনোযোগ দিয়ে কোনো লাভ নেই। আর তাছাড়া এতে কিছু যায় আসে না, কারণ শিক্ষকেরা কখনোই তাকে কোনো প্রশ্ন করবে না। ক্লাসমেটরাও না। লাঞ্চব্রেকের সময় হয়ে গেল, এখন পর্যন্ত সে কারো সাথে একটা কথাও বলেনি।
ডাইনিং হলের এক কোনায় সামনে খাবার নিয়ে বসে রইলো সে। ঘরটা তার ক্লাসমেটদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে ভরপুর। কনর সে-সব উপেক্ষা করার চেষ্টা করলো।
দানবটা তাকে সারিয়ে তুলবে, অবশ্যই সারিয়ে তুলবে। তা না হলে সেটা এসেছেই-বা কেন? এটাই একমাত্র কারণ। ঔষধি গাছের রূপে এসেছে, যে গাছ থেকে তার মায়ের ওষুধ বানানো সম্ভব।
‘প্লিজ’, খাবার প্লেট সামনে নিয়ে প্রার্থনা করলো সে, ‘প্লিজ।’
খাবার প্লেটের ওপর দুটো হাত জোরে আঘাত করলো, যার কারণে কনরের ওপর অরেঞ্জ জুস এসে পড়লো।
কনর সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো। তার ট্রাউজার ভিজে গেছে।
‘ও’ম্যালি তো নিজেকে ভিজিয়ে ফেলেছে।’ সালি ইতোমধ্যেই চিৎকার করে বলছে, তার পাশে অ্যান্টন হাসছে।
‘এই নাও!’ অ্যান্টন থালা থেকে কিছু জেলি তার দিকে ছুঁড়ে মারলো, ‘কিছু রয়ে গেছে।’
সব সময়ের মতো সালি আর অ্যান্টনের মাঝে হ্যারি আমুদে একটা দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কনরও তাকালো।
বেশ খানিকটা সময় তারা কেউই নড়লো না। সালি আর অ্যান্টন থেমে গেছে। তারা সম্ভবত এখন অপ্রস্তুত বোধ করছে। কী করবে বুঝতে পারছে না ।
কনর নিজেও সেটা ভাবছে।
‘তোমাকে এখন আমি বুঝি, ও’ম্যালি।’ হ্যারি অবশেষে বললো, ‘আমি জানি তুমি কী চাচ্ছ।’
‘আর তুমি সেটা এখন পাবে।’ বলেই সালি ঘুসি দেখালো।
কনর আড়চোখে দেখলো কোনো শিক্ষক আছে কি না। নেই। হ্যারি এমন একটা সময় বেছে নিয়েছে যখন কোনো শিক্ষক তাদেরকে দেখতে পাবে না।
কনর এখন একা।
হ্যারি শান্তভাবে এগিয়ে এলো।
‘সবচেয়ে খারাপ মার হবে এটা, ও’ম্যালি।’ হ্যারি বললো, ‘এর চেয়ে খারাপ কিছু আমি তোমাকে করতে পারবো না।’
হ্যারি তার হাত হ্যান্ডশেকের জন্য এগিয়ে দিলো।
কনর যেন স্বভাবতই হাতটা এগিয়ে দিলো, আর হ্যারির সাথে হ্যান্ডশেক করলো। যেন দুজন ব্যবসায়ীর মতো হাত মেলালো তারা।
‘বিদায় ও’ম্যালি।’ হ্যারি কনারের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আমি
তোমাকে আর দেখবো না।’
এরপর সে কনরের হাত ছেড়ে দিয়ে হেঁটে চলে গেল। সালি আর অ্যান্টন খুব অবাক হলো। এক সেকেন্ড পরে তারাও হ্যারির পেছন পেছন চলে গেল।
কেউ আর কনরের দিকে তাকালো না।
দেয়ালে বিশাল বড়ো একটা ডিজিটাল ঘড়ি। লাঞ্চ ১১টা ৫৫ মিনিটে শুরু হয়, আর ১২টা ৪০ মিনিটে শেষ হয়।
ঘড়িতে এখন ১২টা বেজে ৬ মিনিট।
হ্যারির কথাগুলো কানে বাজছে কনরের, ‘আমি তোমাকে আর দেখবো না।’ হ্যারি চলে যাচ্ছে।
‘আমি তোমাকে আর দেখবো না।’
ঘড়িতে এখন বারোটা সাত বাজে।
‘তৃতীয় গল্পের সময় হয়ে গেছে।’ দানবটা পেছন থেকে কনরকে বললো ।
তৃতীয় গল্প
‘একদা এক অদৃশ্য মানুষ ছিল’–কনর হ্যারিকে চলে যেতে দেখছে—’যার মন অদৃশ্য থাকতে থাকতে বিষিয়ে উঠেছিল।’
কনর হাঁটতে শুরু করলো।
হ্যারির পেছন পেছন
‘এমনটা নয় যে আসলেই সে অদৃশ্য।’ দানবটা কনরের পেছনে আস্তে আস্তে বলছে, তাদের চলার সাথে সাথে ঘরের শব্দগুলোও যেন কমে আসছে, ‘মানুষ তাকে দেখতে পেত না।’
‘এই!’ কনর ডাকলো, হ্যারি পেছনে তাকালো না। কনর একটু দ্রুত হাঁটতে শুরু করলো।
‘আর, যদি কেউ তোমাকে না দেখতে পারে’ দানবও তার গতি বাড়ালো, ‘তাহলে কি তুমি আসলেই সেখানে আছো?
‘এই!’ কনর এবার চিৎকার করে উঠলো।
পুরো ডাইনিং হলটা চুপ হয়ে গেছে। কনর আর দানব হ্যারির দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
হ্যারি এখনও পেছনে ফিরে তাকাচ্ছে না।
কনর এগিয়ে গিয়ে তার কাঁধে হাত রেখে তাকে পেছনে ঘোরালো।
‘একদিন অদৃশ্য মানুষটা সিদ্ধান্ত নিলো’ দানবের কণ্ঠটা কনরের কানে বাজছে, ‘আমি ওদের আমাকে দেখতে বাধ্য করবো।’
দানবটা বিশাল অতিকায় এক হাত বাড়িয়ে হ্যারিকে ধাক্কা মারলো, উড়ে গিয়ে মেঝেতে পড়ে গেল হ্যারি ।
হলে সবাই চিৎকার করে উঠলো। অ্যান্টন আর সালির চেহারায় আতঙ্কের ছাপ সুস্পষ্ট। তারা প্রথমে হ্যারির দিকে তাকিয়ে পরে কনরের দিকে দৃষ্টি ফেরালো।
কনর তাদের দিকে আরও এক পা এগিয়ে গেল, তার পেছনে দানবটার উপস্থিতি বুঝতে পারছে সে।
সালি আর অ্যান্টন দৌড়ে পালিয়ে গেল।
‘তুমি কী করছো ও’ম্যালি?’ হ্যারি মেঝে থেকে উঠতে উঠতে বলল। তার মাথা ফেটে গেছে, সেখান থেকে রক্ত ঝরছে। রক্ত দেখে বাকি সবাই আরও চিৎকার করে উঠলো।
এখনও সামনে এগিয়ে আসছে কনর, তার সামনে থেকে মানুষজন চিৎকার করে সরে যাচ্ছে। পেছন পেছন আসছে তার দানব।
‘তুমি আমাকে দেখ না?’ কনর চিৎকার করে, ‘তুমি আমাকে দেখ না?’
‘না, ও’ম্যালি।’ হ্যারিও চিৎকার করে বলল, ‘দেখি না, কেউই তোমাকে দেখে না।‘
কনর থেমে গিয়ে আশেপাশে তাকালো। সবাই এখন তাদেরকে দেখছে, অপেক্ষা করছে সামনে কী হবে সেটা দেখার জন্য।
কনর তাদের দিকে তাকাতেই তারা চোখ নামিয়ে নিলো, যেন তার দিকে সোজাসুজি তাকাতে তাদের কষ্ট হচ্ছে। কেবল লিলি তার চোখের দিকে তাকালো, ওর চেহারায় উদ্বিগ্নতা।