এটা করবে, এটা কাজ করবে, এই কারণেই দানবটা জীবন্ত হয়েছে। দানবটা যদি
সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে এটাই আসল কারণ।
কনর হাসপাতালের ঘড়ির দিকে তাকালো।
বারোটা সাত বাজতে আরও আট ঘণ্ট বাকি।
কোনো গল্প নেই
‘তুমি তাকে সারিয়ে তুলতে পারবে?’ কনর জিজ্ঞেস করলো।
‘ইয়ো একটা ঔষধি গাছ।’ দানবটা বললো, ‘আমি এই রূপেই চলাফেরা করতে পছন্দ করি।’
কনর ভ্রু কুঁচকালো, ‘এটা কোনো উত্তর না।‘
দানবের মুখে শয়তানি হাসি ।
মা ডিনার না করে ঘুমিয়ে পড়ার পর নানু তাকে নিজের বাসায় নিয়ে এসেছে। বসার ঘরের ধ্বংসযজ্ঞ করার পর থেকে এখন পর্যন্ত নানু তার সাথে কথা বলেনি। একেবারেই না।
‘আমি ফেরত যাচ্ছি।’ কনর গাড়ি থেকে বের হতেই নানু বললো, ‘কিছু খেয়ে নিয়ো, এতটুকু নিশ্চয় নিজে নিজে করতে পারবে।’
‘বাবা কি এতক্ষণে এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেছে?’ কনর জিজ্ঞেস করলো।
নানু কোনো উত্তর দেয়নি। সে চলে যেতেই কনর দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। ভেতরে আসার পর থেকে মাঝরাত পর্যন্ত সে কোনো ফোন করেনি। কনর ভেবেছে নিজেই ফোন করবে, কিন্তু নানুর রিংটোনে মায়ের ঘুম ভেঙে যাওয়ায় ইতোমধ্যেই একবার বকা খেতে হয়েছে।
এসবে কিছু আসে যায় না। আসলে এতে ভালোই হয়েছে। অন্তত ঘুমাতে যাওয়ার অভিনয় করতে হচ্ছে না। এখন বসে বসেই বারোটা সাত বাজার অপেক্ষা করতে পারে সে। এরপর সে ঘর থেকে বের হয়ে বললো, ‘কোথায় তুমি?’
দানবটা উত্তর দিলো, ‘আমি এখানে।’ এ কথা বলেই সহজ ভঙ্গিতে নানুর অফিসের মধ্যে ঢুকে পড়লো ।
‘তুমি তাকে সারিয়ে তুলতে পারবে?’ কনর আবার জিজ্ঞেস করলো। দানবটা নিচে কনরের দিকে তাকালো, ‘সেটা আমার হাতে নয়।’
‘কেন নয়? তুমি বাসাবাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দাও, আর ডাইনিদের উদ্ধার করো। তুমি বলেছিলে যদি মানুষ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে, তবে তোমার ছালবাকল পাতা সবকিছুই রোগ সারানোর ক্ষমতা রাখে। ‘
‘তোমার মা যদি সুস্থ হতে পারে, তবে ইয়ো গাছ সেটা করবে।’
‘এর মানে কি ‘হ্যাঁ’ বলছো?’
দানবটা এমন কিছু করলো যেটা সে আগে কখনও করেনি।
সে বসে পড়লো।
দানবের শরীরের ভরে নানুর পুরো অফিসটা দুলে উঠলো। কাঠের মেঝে মচমচ করে উঠলো। খানিক ভয় পেয়ে গেল কনর। এটা যদি এখন অফিস ধ্বংস করে ফেলে, তাহলে না জানি নানু তাকে কী করবে। হয়তো জেলে পাঠিয়ে দেবে, অথবা বোর্ডিং স্কুলে।
‘তুমি এখনও জানো না যে তুমি আমাকে কেন ডেকেছো, তাই না?’ দানবটা জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি এখনও জানো না আমি কেন জীবন্ত হয়েছি। এসব আমি হরহামেশাই করে থাকি না, কনর ও’ম্যালি।’
‘আমি তোমাকে ডাকি নি।’ কনর বললো, ‘যদি না এটা স্বপ্ন হয়ে থাকে। আর যদি ডেকেও থাকি, সেটা আমার মায়ের জন্য।’
‘তাই না-কি?’
‘তা না হলে আর কী?’ কনর আরেকটু উঁচু গলায় বলে উঠলো, ‘অবশ্যই কোন ফালতু গল্প শোনার জন্য ডাকিনি।’
‘তোমার নানুর বসার ঘরের কথা কী ভুলে গেছ?’
ঠোঁটের কোণে একটা হাসি চলে এলো কনরের!
‘তেমনটাই ভেবেছিলাম।’ দানব বললো।
‘আমি সিরিয়াস।’
‘আমিও, কিন্তু আমরা এখনও তৃতীয় গল্পের জন্য প্রস্তুত নই। খুব শীঘ্রই হয়ে যাবো। এরপর তুমি আমাকে তোমার গল্প বলবে, কনর ও’ম্যালি। তুমি আমাকে সত্যিটা বলবে।’ দানবটা এগিয়ে এলো, ‘আর তুমি জানো আমি কোন সত্যির কথা বলছি।’
তাদেরকে চারপাশ থেকে কুয়াশা ঘিরে ধরলো, নানুর বাগান হারিয়ে গেল। পৃথিবীটা যেন ধূসর আর একাকিত্বে ছেয়ে গেল। কনর জানে সে এখন কোথায়, আর পৃথিবীটা কীসে পরিণত হয়েছে।
সে তার দুঃস্বপ্নের মাঝে আছে।
-০-
সেটা এমনই ছিল, যেন জগৎ গুলিয়ে যাচ্ছে আর কনর কারো হাত ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু তবু যেন হাত ছুটে যাচ্ছে, পড়ে যাচ্ছে সে
‘না!’ কনর চিৎকার করে উঠলো, ‘না এটা না!’
কুয়াশা সরে যেতেই নানুর বাগান আবার দেখা গেল, দানবটা এখনও অফিসে বসে আছে।
‘এটা কোনো সত্যি না।’ কনর কাটা কাটা গলায় বলে, ‘এটা একটা দুঃস্বপ্ন।’
‘যাই হোক’ দানবটা বললো, ‘তৃতীয় গল্প বলার পর এটাই হবে।’
‘দারুণ।’ কনর বললো, ‘জরুরি কাজের মাঝে আরও একটা বিরক্তিকর গল্প।’
‘গল্পও জরুরি, কখনো কখনো অন্য যে-কোনো জিনিসের চেয়ে জরুরি, যদি তারা সত্যিটা বহন করে থাকে।’
‘জীবনগাথা।’ তেতো কণ্ঠে বললো কনর।
দানবটা একটু চমকে উঠলো, ‘ঠিক বলেছো।’ চলে যেতে গিয়ে একবার দাঁড়ালো সেটা, ‘শীঘ্রই আমার দেখা পাবে।’
‘আমি জানতে চাই, আমার মায়ের কী হবে?’ কনর বললো।
‘তুমি কি সেটা ইতোমধ্যেই জানো না?’
‘তুমি বলেছিলে তুমি একটা ঔষধি গাছ, রোগ সারিয়ে তোলো। আমি চাই তুমি
এখন রোগ সারাও। ‘
‘এবং আমি সেটাই করবো।’ এ কথা বলেই দানবটা বাতাসের ঝাঁপটায় মিলিয়ে গেল।
তোমাকে আর দেখতে পাই না
‘আমিও আজ হাসপাতালে যাবো।’ কনর সকালে গাড়িতে বসে নানুকে বললো, ‘আজ স্কুলে যাবো না।’
নানু কেবল গাড়ি চালালো, কোন কথা বললো না। হয়তো আর বলবেও না।
‘কাল রাতে তার কেমন অবস্থা ছিল?’ জিজ্ঞেস করলো কনর। দানবটা চলে যাওয়ার পরও সে অনেকক্ষণ জেগে ছিল, কিন্তু নানু আসার একটু আগেই তার চোখ লেগে এসেছিল।
‘আগের মতোই।’ নানুর চোখ রাস্তার ওপর
‘নতুন ওষুধটা কি কাজে দিচ্ছে?’
অনেকক্ষণ চুপ থেকে তারপর নানু বললো, ‘এত শীঘ্রই কিছু বলা যাচ্ছে না।’