‘লোকটা এপথকেরির চিকিৎসায় বিশ্বাস করতে অস্বীকার জানিয়েছিল।’ দানবটা বললো, ‘সুসময়ে লোকটা এপথকেরিকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছিল, কিন্তু যখন দুঃসময় এলো তখন সে তার মেয়েদেরকে বাঁচানোর জন্য নিজের সকল বিশ্বাসকে বিসর্জন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল।’
‘তো?’ কনর বললো, ‘সেটা যে-কেউ করবে! সবাই করবে! তুমি কী চাচ্ছিলে, সে কী করুক?’
‘আমি চাচ্ছিলাম এপথকেরি যখন প্রথম ইয়ো গাছটা চেয়েছিল, তখনই লোকটা তাকে সেটা দিয়ে দিত।’
এটা শুনে কনর থেমে গেল। লোকটার বাসার দেয়াল ধ্বসে পড়ার আরও শব্দ আসছিল, ‘তুমি নিজেকে মেরে ফেলতে চাচ্ছিলে?’
‘আমি কেবল একটা গাছ নই।’ দানবটা বললো, ‘কিন্তু হ্যাঁ, আমি চাইছিলাম ইয়ো গাছটা কাটা পড়ুক, তাতে করে সেই লোকের মেয়েগুলোকে বাঁচানো যেত এবং একইসাথে আরও অনেককে বাঁচানো যেত।’
‘কিন্তু তাতে করে গাছটা মারা যেত, আর সে ধনী হয়ে যেত।’ কনর চিৎকার করলো, ‘সে একটা খারাপ লোক।’
‘সে লোভী ও ইতর ছিল, কিন্তু তাও সে একজন চিকিৎসক। আর ওই লোকটা, সে কী ছিল? সে তো কিছুই ছিল না। বিশ্বাস চিকিৎসার একটি অংশ। ঔষধে বিশ্বাস রাখলে তা কাজে দেয়। কিন্তু সে এমন একটা মানুষ যার বিশ্বাস আছে, কিন্তু দুঃসময়ে সে নিজের বিশ্বাসকে বিসর্জন দিতে প্রস্তুত থাকে। তার বিশ্বাস কেবল স্বার্থপরতার, আতঙ্ক থেকে বাঁচার। এই কারণেই তার মেয়েরা মারা পড়েছিল।’
কনর আরও রেগে উঠলো, ‘তুমি বলেছিলে এটা কোনো ধোঁকাবাজির গল্প নয়।’
‘আমি বলেছিলাম এই গল্পে একটা লোক তার স্বার্থপরতার জন্য শাস্তি পাবে, এবং সেটাই হয়েছে।
কনর দ্বিতীয় দানবটাকে লোকটার ঘর ভাঙতে দেখছে, বিশাল এক দানব তার পা দিয়ে সিঁড়িগুলোকে ভেঙে ফেলছে। তার বিশাল একটা বাহু শোবার ঘর টুকরো টুকরো করে ফেলছে।
‘বলো তো, কনর ও’ম্যালী’ দানবটা পেছন থেকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি কি
আমার সাথে যোগ দেবে?’
‘যোগ দেবো?’ কনর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
‘এটা খুবই সন্তোষজনক, এটুকু বলতে পারি তোমাকে।’
দানবটা এগিয়ে গিয়ে দৃশ্যের দানবের সাথে যোগ দিলো, বিশাল পা দিয়ে নানুর সোফার ওপর সজোরে লাথি মেরে ভেঙে ফেললো, এরপর কনরের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করলো।
‘এরপর আমি কী ধ্বংস করবো?’ দানবটা দ্বিতীয় দানবের সাথে যুক্ত হয়ে গেল, একত্রে যুক্ত হয়ে তারা আরও বিশাল একটা দানবে পরিণত হলো।
‘আমি তোমার আদেশের অপেক্ষা করছি।’ সেটা বললো।
কনর বুঝতে পারলো তার শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুতগামী হয়ে উঠছে। তার বুক ধকধক করছে। এক মুহূর্ত অপেক্ষা করলো এবং এরপর সে বললো, ‘ফায়ারপ্লেসটা গুঁড়িয়ে দাও।’
দানবের ঘুসিটা তৎক্ষণাৎ ফায়ারপ্লেসের ওপর গিয়ে পড়লো, আর সাথে সাথেই চিমনি থেকে ইট ভেঙে সশব্দে নিচে পড়ে গেল।
শ্বাস-প্রশ্বাস আরও দ্রুতগামী হচ্ছে কনরের, যেন এই ধ্বংসটা সে নিজে করছে।
‘বিছানাগুলো ছুঁড়ে ফেলে দাও।’ সে বললো।
দানব বিছানাগুলো তুলে ছুঁড়ে ফেললো।
‘ফার্নিচারগুলো ভেঙে ফেল!’ কনর এখন রীতিমতো চিৎকার করছে, ‘সবকিছু ভেঙে ফেলো!’
দানবটা পুরো বাড়ির সবগুলো ফার্নিচার তছনছ করে ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলে দিলো । ‘পুরো বাসাটাই ভেঙে ফেল!’ গর্জে উঠেছে কনর, আর তার সাথে সাথে দানবটাও গর্জন করে উঠলো। দেয়াল ঘুসি মেরে ভেঙে ফেললো, জানালাগুলো তছনছ করে দিলো।
কনর এত জোরে গর্জে উঠছে যেন সে ঠিকঠাকভাবে চিন্তা করতে পারছে না, ধ্বংসের মাঝে যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে, চারপাশে কেবল ধ্বংস ধ্বংস আর ধ্বংস।
দানবটা ঠিকই বলেছিল, তার মন সন্তুষ্ট হচ্ছে।
ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কনর চিৎকার করলো। যখন সে থামলো তখন দেখতে পেল, দানবটা এই ধ্বংসস্তূপের বাইরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। কনর হাঁপাতে হাঁপাতে হেলান দিয়ে কোনোমতে দাঁড়ালো।
‘এভাবেই’ দানবটা বললো, ‘ধ্বংস করতে হয়।’
এবং হুট করেই, যেন তারা কনরের নানুর বসার ঘরে দাঁড়িয়ে আছে। কনর দেখতে পেল সে এই ঘরটার প্রতিটা অংশ ধ্বংস করে ফেলেছে।
ধ্বংস
সোফাটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।
প্রতিটা কাঠের পা ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে, কাঠের মেঝেতে অসংখ্য দাগ। ভাঙা ঘড়ি আর তার সাথে দেয়ালের ভাঙা অংশ পড়ে আছে। ল্যাম্প আর ছোটো টেবিলটা ও সোফার মতো টুকরো টুকরো হয়ে আছে। বইয়ের তাক ভেঙে জানালার ওপাশে পড়ে আছে, প্রতিটা বই ছেঁড়া। এসবকিছুর মাঝে কেবল ডিসপ্লে ক্যাবিনেটটা বেঁচে গেছে।
কনর অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে। সে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো সেখানে রক্ত আর আঁচড়ের দাগ, নখগুলো ভেঙে গেছে।
‘হায় ঈশ্বর!’ সে ফিসফিস করে বললো।
সে ঘুরে দানবটার দিকে তাকাতে গিয়ে দেখলো সেটা আর নেই।
‘তুমি কী করেছো!’ নিস্তব্ধতার মাঝে সে চিৎকার করে উঠলো। এই ধ্বংসের মধ্য থেকে সরে দাঁড়ানোর শক্তিও পাচ্ছে না।
সে এসব নিজে করতে পারে না। অবশ্যই না ।
‘হায় ঈশ্বর, হায় ঈশ্বর!’ সে আবারও বললো।
‘ধ্বংস সন্তুষ্টি এনে দেয়।’ শুনতে পেল কনর। কেবল শান্ত বাতাসের মাঝে কণ্ঠটা মিলিয়ে গেল যেন।
তার পালিয়ে যাওয়ার জায়গা নেই। পালিয়ে যাওয়ার সময় নেই
তার নিজের বাবাও এখন এসব দেখলে তাকে নিজের সাথে নিতে চাইবে না। যে বাসায় একটা বাচ্চা আছে, সেই বাসায় এমন একটা ছেলেকে কেউই নিয়ে যেতে চাইবে না–