এপথকেরির গ্রামে আরও একটা লোক থাকতো
‘এটা তো আমার বাসার পেছনের পাহাড়।’ দানবের কথার মাঝেই কনর বললো চারপাশে তাকিয়ে দেখলো কোনো রেললাইন নেই এখনও, কোনো বাসা নেই, কেবল কিছু ফুটপাত আর নদী।
‘এই লোকটার দুটো মেয়ে ছিল।’ দানবটা বলে যেতে লাগলো, ‘মেয়ে দুটোই ছিল তার জীবনের আলো।’ দুটো মেয়ে দৌড়ে লোকটার কাছে চলে এলো, তারা হাসছিল আর খেলছিল। ইয়ো গাছের আশেপাশে তারা লুকোচুরি খেলছিল।
‘এটা তো তুমি।’ কনর গাছের দিকে আঙুল তুলে বললো।
হ্যাঁ, লোকটার বাসার উঠানে বিশাল একটা ইয়ো গাছ ছিল।
‘আর খুবই সুন্দর একটা গাছ ছিল সেটা।’ দানব বললো।
‘নিজের ঢোল নিজেই পেটাচ্ছ।’ কনর বললো।
যাই হোক, এপথকেরি গাছটা চাচ্ছিল।
‘কেন?’
দানবটা অবাক হয়ে তাকালো, ‘ইয়ো খুব ভালো একটা ঔষধি গাছ, এরা হাজার হাজার বছর বাঁচে। এদের বেরি, ছাল-বাকল, পাতা সবকিছুই ঔষধের কাজ করে থাকে । প্রায় সব রকম রোগের চিকিৎসা করা যায় এই গাছ দিয়ে। একজন সঠিক এপথকেরি জানে তা কীভাবে করতে হয়।’
‘বানিয়ে বলছো না তো?’
দানবের চেহারায় অন্ধকার নেমে এলো, ‘তুমি আমাকে সন্দেহ করার সাহস দেখাচ্ছ, মুর্খ ছেলে?’
‘না।’ কনর দানবের রাগ দেখে পিছিয়ে গেল, ‘আমি এমন কিছু কখনো শুনিনি তো, তাই বললাম।’
এসব করার জন্য এপথকেরিকে গাছটা কেটে ফেলতে হবে। কিন্তু সেই লোকটা অনুমতি দিচ্ছিল না। চার্চ হবার অনেক আগে থেকেই গাছটা এখানে আছে। পাশের কবরস্থানটা এখন লোকজন ব্যবহার করা শুরু করেছে, আর নতুন চার্চ ভবনও বানানো হচ্ছে। ইয়ো গাছটা সেগুলোকে বৃষ্টি আর কঠিন আবহাওয়া থেকে বাঁচাবে এবং ওই লোকটা-এপথকেরি যতই বলুক না কেন–গাছ কাটার অনুমতি সে দিতে নারাজ। সে তাকে গাছের আশপাশেও আসতে দিত না।
লোকটা দয়ালু ছিল, সে গ্রামবাসীদের ভালো চাইতো, চাইতো যেন তারা কুসংস্কার আর যাদুবিদ্যার কবল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। সে এপথকেরির পুরোনো পদ্ধতিগুলোর বিরোধিতা করতে লাগলো। তাছাড়া এপথকেরির লোভ আর খারাপ ব্যবহারের কথা ছড়িয়ে পড়ার কারণে এপথকেরির ব্যাবসায় আরও ভাটা পড়তে শুরু হয়।
কিন্তু একদিন এই লোকের মেয়েগুলো অসুস্থ হয়ে পড়লো। পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়া এক রোগের কারণে প্রথমে তার এক মেয়ে এবং পরে অন্য মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
আকাশ কালো হয়ে এলো এবং কনর সেই লোকের মেয়েদের কাশির শব্দ শুনতে পেল, তার সাথে লোকটার স্ত্রীর জোরে জোরে কান্নার এবং প্রার্থনার শব্দও শুনতে পাওয়া গেল।
লোকটা কোনোভাবেই মেয়েগুলোকে সাহায্য করতে পারছিল না। কোনো প্রার্থনা কাজে আসছিল না, কোনো আধুনিক চিকিৎসা কাজে আসছিল না, এমনকি লুকিয়ে লুকিয়ে ওষধি গাছ থেকে সংগ্রহ করা ঔষধও কাজে আসছিল না। আস্তে আস্তে মেয়েগুলো মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে আর কোনো উপায় না পেয়ে লোকটা নিজের আত্মসম্মানকে বিসর্জন দিয়ে এপথকেরির দ্বারস্থ হলো এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলো।
‘আপনি কি আমার মেয়েদেরকে সাহায্য করবেন না?’ লোকটা হাঁটু মুড়ে এপথকেরির দরজার সামনে বসে বললো, ‘আমার জন্য যদি নাও হয়, তবে আমার নিষ্পাপ মেয়েগুলোর কথা ভাবুন।’
‘কেন ভাববো?’ এপথকেরি বললো, ‘তোমার বিরোধিতার কারণে আমার ব্যাবসা নষ্ট হয়ে গেছে। তুমি আমাকে ও গাছটা দাওনি, যেটা আমার চিকিৎসার খুব মূল্যবান বস্তু ছিল। তুমি গ্রামবাসীদেরকে আমার নামে আজেবাজে কথা বলেছো।
‘আপনি ওই গাছটা নিয়ে যান।’ লোকটা বললো, ‘আমি আপনার সম্মান ফিরিয়ে আনবো, গ্রামবাসীকে বোঝাবো। আপনি যা চান তাই করবো, কিন্তু আমার মেয়েদেরকে সারিয়ে তুলুন।’
এপথকেরি অবাক হলো, ‘তুমি তোমার বিশ্বাসকেও বিসর্জন দিয়ে দেবে? ‘যদি তাতে আমার মেয়েরা সেরে ওঠে, আমি যে-কোনো কিছু করতে রাজি।’
‘তাহলে’ এপথকেরি বললো, ‘আমি তোমাকে সাহায্য করার মতো কিছুই করতে পারবো না।’
‘কী?’ কনর বললো।
সেই রাতে ওই লোকের মেয়ে দুটো মারা যায়
‘কী?’ আবারও বললো কনর।
এবং সেই রাতে আমি আবার জীবন্ত হয়ে উঠি।
‘বেশ!’ কনর চিৎকার করে উঠলো, ‘এখন ওই হাঁদারামটা তার যোগ্য শাস্তি
পাবে।’
‘আমিও তেমনটাই ভেবেছিলাম।’ দানব বললো।
মাঝরাতের কিছুক্ষণ পরেই আমি সেই লোকটার বাড়িঘর ভেঙে চুরমার করে দিই।
দ্বিতীয় গল্পের বাকি অংশ
‘লোকটার?’ কনর একেবারে অবাক হয়ে গেছে।
‘হ্যাঁ।’ দানবটা বললো, ‘আমি তার ঘরের চাল ছুঁড়ে ফেলে দিই এবং বাসার প্রতিটা দেয়াল নিজহাতে গুঁড়িয়ে দিই।’
লোকটার বাসা এখনও তাদের সামনে, আর কনর দেখতে পেল জীবন্ত ইয়ো গাছ দানবটা হিংস্রভাবে লোকটার বাসায় আঘাত করছে। প্রথম আঘাতে চাল আর সামনের দরজা উড়ে গেল, আর লোকটা ও তার স্ত্রী ভয় পেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো। দানবটা ঘরের চালা যখন ছুঁড়ে মারলো, তখন ওরা দৌড়ে পালাচ্ছে। অল্পের জন্যে দুজন রেহাই পেলো।
‘তুমি কী করছো?’ কনর বললো, ‘ওই এপথ–না কী যেন নাম, ওই তো আসল খারাপ লোক।’
‘তাই নাকি!’ দানবটা তার পেছন থেকে বললো।
দানবের হাতে লোকটির বাসার সামনের দেয়াল গুঁড়িয়ে পড়লো।
‘অবশ্যই!’ কনর চিৎকার করে বললো, ‘সে ওই লোকের মেয়েগুলোকে সাহায্য করতে মানা করে দিয়েছিল! আর ওরা এজন্যে মারা যায়!’