‘এর বদলে যদি কলেজে শিক্ষা পায়নি এমন টাইপিস্টকে মধ্যাহ্নভোজ ডাকলে সে আমন্ত্রণকারীর দিকে উজ্জ্বল চোখে তাকিয়ে আগ্রহ নিয়েই বলতে চায়, আপনার কথা বলুন। ফলটা কেমন হয়?
ভদ্রলোক তখন অন্যদের কাছে বলেন, মেয়েটা সুন্দরী না হলেও এরকম ভালো শ্রোতা আর দেখিনি।
পুরুষের উচিত, স্ত্রীলোকের পোশাক পরা আর রমণীয়া দেখানোর চেষ্টার তারিফ করা। সব পুরুষরাই ভুলে যায়, তাদের তাই বোঝা উচিত মেয়েরা পোশাক সম্বন্ধে কতটা আগ্রহী হয়। যেমন ধরুন, কোন পুরুষ আর কোন রমণীর সঙ্গে আচমকা পথে দেখা হয়ে গেলে প্রথম স্ত্রীলোকটি ক্কচিৎ কখনও অন্য পুরুষটির দিকে তাকায়। তার দৃষ্টি স্বভাবতই যাচাই করতে চায় অন্য স্ত্রীলোকটি কি রকম পোশাক পরেছেন।
আমার ঠাকুমা কবছর আগে আটানব্বই বছর বয়সে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর কিছু আগে তাঁকে পঁচাত্তর বছর আগের তোলা একটা ফটো দেখাই। ঠাকুমার চোখে দেখার শক্তিই ছিলো না। তিনি শুধু একটা প্রশ্নই করেন : ‘কি পোশাক পরে ছিলাম রে?’ একবার ভাবুন ব্যাপারটা! এক বৃদ্ধা তাঁর জীবনের শেষ লগ্নে এসে, প্রায় শতবর্ষে পৌঁছে, স্মরণশক্তি হারিয়ে জিজ্ঞাসা করছেন পঁচাত্তর বছর আগে কি পোশাক পরেছিলেন। এই প্রশ্নটা তিনি যখন করেন আমি তার পাশেই ছিলাম। ব্যাপারটা আমার মনে
এমন একটা দাগ রেখে যায়, কোনদিনই যেটা হারাবে না।
যে সব পুরুষ এই বইটা পড়ছেন তাঁরা পাঁচ বছর আগে কোন্ পোশাক পরেছিলেন মনে করতে পারবেন না। হয়তো মনে রাখার ইচ্ছাও তাঁদের নেই। কিন্তু মেয়েরা একেবারে আলাদা। ফরাসী ছেলেদের শেখানো হয় কোন সন্ধ্যায় মেয়েদের সঙ্গে দেখা হলে বারবার তাদের পোশাকের প্রশংসা করা। মনে রাখবেন পাঁচকোটি ফরাসী কখনও ভুল করতে পারে না!
একটা মজার গল্প শোনাতে চাই আপনাদের। গল্পটা অবশ্য গল্পই।
এক চাষীর বউ সারাদিনের কাজের পর বাড়ির পুরুষদের সামনে একবোঝা খড় এনে জমা করে। তারা বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করে যে পাগল হয়ে গেছে কিনা। চাষী বৌ তার উত্তরে বলে : ‘তোমরা লক্ষ্য করবে ভাবতে পারিনি। গত বিশ বছর ধরে তোমাদের জন্য খড় রান্না করে আসছি অথচ কোনদিনই তোমরা বলোনি খড় খাচ্ছো না কি খাচ্ছো।
মস্কো আর সেন্ট পিটার্সবার্গের অভিজাতবৃন্দদের মার্জিত ব্যবহার মজ্জাগত ছিল। রাশিয়ার জারদের আমলে প্রথা ছিল খাদ্য পরিবেশনের সময় অভিজাতরা চাইতেন রাঁধুনি সামনে থাকুক যাতে তাকে অভিনন্দন জানানো যায়।
ঠিক এমনটাই আপনার স্ত্রীকেও জানান না? রান্না খারাপ হলেও তাকে প্রশংসা করুন। আর এরকম করতে গিয়ে তাকে জানাতে ভুলবেন না আপনার জীবনে সে কতখানি জুড়ে আছে। ডিসরেলী ছিলেন বিশ্বের একজন বিখ্যাত রাজনীতিক, অথচ তিনি লোকের কাছে বলতে কখনই লজ্জা পেতেন না স্ত্রী তার কাছে কতখানি প্রিয়।
এডি ক্যান্টর বলেছিলেন : জীবনের সব কিছুর জন্যেই আমি আমার স্ত্রীর কাছে স্বামী। সেই আমাকে সোজা রাস্তায় চলতে সাহায্য করেছে। আমাদের পাঁচটি সন্তান আর আমার স্ত্রী আমাদের গৃহ আনন্দে ভরিয়ে রেখেছে। সব প্রশংসা তারই প্রাপ্য।
এরকম ঘটনার উদাহরণ আরও কিছু আছে। হলিউডে যেখানে বিয়ে ব্যাপারটা ঝুঁকির কাজ হয়ে উঠেছে সেখানেও এর উদাহরণ পাওয়া যায়।
এই হলো ব্যাপার। অতএব জীবনে সুখী হতে হলে ৪নং নিয়ম হল :
আন্তরিক প্রশংসা করুন।
৩৬. মেয়েরা যা ভালোবাসে
ষট্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ
মেয়েরা যা ভালোবাসে
স্মরণাতীত কাল থেকেই ফুলকে প্রেমের ভাষা বলে ভাবা হয়ে আসছে। এতে খরচ বেশি হয় না, বিশেষ করে যে ঋতুতে যে ফুল মেলে। অর্থাৎ মরসুমী ফুল। কজন মানুষই বা বাড়িতে ফুল কিনে নিয়ে যান। এতে ভাবা যেতে পারে ফুলের বুঝি ঢের দাম।
তাহলে আজই আপনার স্ত্রীর জন্য এক গুচ্ছ গোলাপ কিনে নিয়ে যান না। পরীক্ষাটা একবার করেই দেখুন না কি হয়।
ব্রডওয়েতে ব্যস্ত থাকার সময় জর্জ এম. কোবান সারাদিনে তাঁর মা’কে দুবার ফোন করতে ভুলতেন না। এটা তিনি মা’র মৃত্যু পর্যন্ত করে যান। আপনারা কি ভাবেন প্রতিবারেই আশ্চর্য সব খবর দিতেন তিনি? মোটেই না। এ রকম করা একটাই মাত্র উদ্দেশ্য–যাকে ফোন করা হয় তাকে জানানো তিনি কতটা ভালবাসেন। তাকে কত খুশী করায় আপনি আগ্রহী। তার সুখ বা আনন্দে আপনার ব্যস্ততা কতখানিই।
মেয়েরা তাদের জন্মদিন বা অন্য সব উৎসবের ব্যাপারে দারুণ গুরুত্ব দেয়, কেন যে তারা তা করে সেটা একটা রমণীসুলভ রহস্যই। গড়পড়তা পুরুষরা কিন্তু কোন তারিখ মনে রাখার ব্যাপারে উদাসীন হয়। এটা কিন্তু মনে রাখা নেহাতই জরুরি কাজ, মনে রাখা উচিত।
শিকাগোর একজন জজ, যোশেফ মাবাথ যিনি ৪০,০০০ বিবাহ বিচ্ছেদের মামলার নিষ্পত্তি করে ২,০০০ স্বামী স্ত্রীকে আবার মিলিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন : ‘বিবাহিত জীবন মূল গণ্ডগোল অনেক ক্ষেত্রেই সামান্য ব্যাপার থেকে উৎপত্তি হয়। স্বামী যখন অফিসে কাজে রওয়ানা হন তখন তাকে বিদায় জানানোর মত কাজ স্ত্রীরা করলে অনেক বিবাহ বিচ্ছেদই আর হয় না।’
এলিজাবেথ ব্যারেট ব্রাউনিংয়ের সঙ্গে রাবর্ট ব্রাউনিংয়ের বিবাহিত জীবন বোধ হয় সবচেয়ে স্বর্গীয় মহিমায় ভাস্বর ছিল। রবার্ট ব্রাউনিং প্রায় সব সময়েই স্ত্রীর প্রতি সামান্য ব্যাপারেই মনোযোগী হতে কখনও ভুল করতেন না। তিনি তাঁর পঙ্গু স্ত্রীকে এমনই সহৃদয়ভাবে যত্ন করতেন যে, এলিজাবেথ তাঁর বোনকে লেখেন : আমার মনে হচ্ছে আমি কেন সত্যিকার পরী হতে পারবো না।’