এটা খুবই মারাত্মক ব্যাপার। আতএব ফ্রাঙ্কলিন ঠিক করলেন তার শত্রুকে বশ করতেই হবে।
কিন্তু কেমন করে? এটা একটা সমস্যাই ছিলো। শত্রুকে কোন সহায়তা করে? না, তাতে তার সন্দেহ জাগতে পারে-ঘৃণা জাগাও অসম্ভব নয়। ফ্রাঙ্কলিন খুবই বুদ্ধিমান মানুষ, তাই এরকম ফাঁদে পা দিলেন না। তিনি তাই এর উল্টোই করলেন। তিনি শত্রুর কাছে কিছু সুবিধা প্রার্থনা করলেন।
ফ্রাঙ্কলিন দশ ডলার ধার চাননি। না, না, এরকম কিছুই না। ফ্রাঙ্কলিন এমন কিছু চাইলেন যাতে অন্য লোকটি খুশি হলেন-এমন কিছু ফ্রাঙ্কলিন চাইলেন যাতে তার সম্মানবোধ জেগে উঠল, এমন সুবিধা যাতে তার অহমিকা আর গুরুত্ব দুই-ই বাড়লো। এমন কিছু যাতে ফ্রাঙ্কলিনের যে শ্রদ্ধা আছে সেটা বোঝা গেল।
বাকিটা ফ্রাঙ্কলিন নিজের কথাতেই শুনুন :
যখন শুনতে পেলাম ভদ্রলোকের বিশেষ দুষ্প্রাপ্য আর ভালো বইয়ের পাঠাগার আছে, আমি তাঁকে অনুরোধ করে চিঠি লিখলাম যদি তাঁর একখানা বই আমাকে কয়েক দিনের জন্যে দেন তাহলে বাধিত হব।
তিনি সঙ্গে সঙ্গেই সেটা পাঠিয়ে দিলেন, আমিও কদিন পরে সেটা ফেরত দিই। সঙ্গে একটা চিরকুটে আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতাও জানালাম।
‘এরপরে আমাদের যখন দেখা হলো তিনি অত্যন্ত ভদ্রভাবে আমার সঙ্গে কথা বললেন (যা তিনি আগে কখনই করেন নি), আর ভবিষ্যতে আমাকে সব রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দিলেন। তাই এরপর আমরা দারুণ বন্ধু হয়ে উঠলাম আর সে বন্ধুত্ব তাঁর মৃত্যুকাল পর্যন্তই ছিল।’
বেন ফ্রাঙ্কলিন প্রায় দেড়’শ বছরেরও বেশি হলো মারা গেছেন কিন্তু তিনি যে মনস্তত্ত্ব কাজে লাগিয়েছিলেন তা আজও অম্লান। সেটা অপরকে কিছু সাহায্যের অনুরোধ।
আমার একজন ছাত্রও এইভাবে উপকার পান। আমার সেই ছাত্রের নাম অ্যালবার্ট বি অ্যামনেল। অ্যামনেল বেশ কবছর ধরে জলের পাইপ আর ঘর গরম রাখার যন্ত্রপাতি বিক্রি করতেন। তিনি ব্রুকলীনের একজন লোকের কাছে কিছুতেই তার যন্ত্রপাতি বিক্রি করতে পারেন নি। ভদ্রলোকের অফিসে গেলেই তিনি ডেস্কের পিছনে বসে চুরুট খেতে খেতেই গম্ভীর স্বরে অ্যামনেলকে বলতেন, আমার আজ কিছুই দরকার নেই। আমার সময় নষ্ট করবেন না। পথ দেখুন।
এরপর অ্যামনেল নতুন কৌশল ধরলেন। তারপরে সব বদলে গিয়ে তারা পরস্পর বন্ধু হয়ে উঠলেন আর বহু ভালো ভালো অর্ডারও পেলেন।
অ্যামনেলের প্রতিষ্ঠান লং আইল্যাণ্ডের ভিলেজে একটা নতুন শাখা খোলার কথাবার্তারও বলছিলেন। এ এলাকাটা সম্পর্কে ওই প্লাম্বার ভদ্রলোকের ভালো জ্ঞান ছিল। তাই মিঃ অ্যামনেল একদিন তাঁর অফিসে গিয়ে বললেন : মিঃ সি আমি আজ আপনাকে কোন কিছু বিক্রি করতে আসিনি। আপনার কাছে একটা অনুরোধ নিয়ে এসেছিলাম। কয়েক মিনিট সময় দিতে পারবেন?
‘হুম্’! ভদ্রলোক চুরুটে টান মেরে বললেন, কি বলার আছে বলে ফেলুন।
‘আমাদের প্রতিষ্ঠান লং আইল্যাণ্ডে একটা শাখা খোলার ব্যবস্থা করেছে’–মিঃ অ্যামনেল বললেন। স্থানীয় মানুষদের মধ্যে এলাকাটা সম্বন্ধে সবচেয়ে ভালো আপনি জানেন তাই আপনার কাছে জানতে এসেছি কাজটা কি বুদ্ধিমানের হবে?’
এবার নতুন ব্যাপার! কারণ ভদ্রলোক এতদিন সেলসম্যানদের বকাবকি করে নিজের গুরুত্ব দেখাতেন আর তাদের পথ দেখতে বলতেন।
কিন্তু এবার একজন সেলসম্যান তাঁর কাছে পরামর্শ চেয়ে অনুরোধ করেছে। হা বিরাট কোন প্রতিষ্ঠানের সেলসম্যান তার মতামত চাইছে।
.
‘বসুন’ চেয়ার টেনে তিনি বসলেন। এরপর লং আইল্যাণ্ডে দোকান কেনা উচিত কিনা সে সম্বন্ধে অনেক কথা বললেন। তিনি শুধু যে জায়গাটা অনুসন্ধান করলেন তাই নয় বরং ওটা কেনা আর মালপত্র সরবরাহ ইত্যাদির বিষয়েও ঢের উপদেশ দিলেন। একটা বিরাট কোম্পানীর ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন বলে তাঁর গুরুত্ববোধে বেড়ে উঠল। তিনি বন্ধুভাবাপন্ন হয়ে উঠলেন, তিনি এরপর তাঁর পারিবারিক অশান্তির বিষয়েও অনেক কথা বললেন।
এরপর সন্ধ্যেবেলায় যখন ফিরে এলাম’, মিঃ অ্যামনেল বললেন, আমি যে বেশ ভালো মত কিছু অর্ডারই নিয়ে এলাম তাই নয় বরং চিরকালের মতই তাঁর বন্ধুত্ব অর্জন করলাম। বর্তমানে আমি তার সঙ্গে গল্ব খেলি। এই পরিবর্তন আসে তাকে কিছু সুবিধার অনুরোধ করাতেই।
মনে রাখবেন আমরা সকলেই প্রশংসা আর সুনাম চাই, আর এটা পেতে সব কিছুই করতে পারি। তবে কেউই আন্তরিকার অভাব সহ্য করে না। কেউ তোষামোদও চায় না।
৩২. গৃহজীবনে সুখী হওয়ার সাতটি পথ
দ্বাত্রিংশ পরিচ্ছেদ
গৃহজীবনে সুখী হওয়ার সাতটি পথ
পঁচাত্তর বছর আগে ফ্রান্সের সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন, নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ভাইপো কাউন্টেস অব টেবা, মেরী ইউজিন ইগনেশ অর্গাস্টিন দ্য মন্টিনোর প্রেমে পড়েন–তিনি ছিলেন বিশ্বের একজন শ্রেষ্ঠা সুন্দরী, নেপোলিয়ন তাকে বিয়ে করেন। তার পরামর্শদাতারা তাঁকে জানান মহিলাটি শুধুমাত্র একজন অনামা স্পেনীয় কাউন্টের মেয়ে। কিন্তু নেপোলিয়ন তাতে জবাব দেন : তাতে কি হয়েছে? তার সৌন্দর্য যৌবন রূপ সবই তিনি স্বর্গীয় মনে করতেন। রাজকীয় আসন থেকে জাতির উদ্দেশ্যেই তিনি বলেন : ‘আমি এমন একজন রমণীকে বেছে নিয়েছি যাকে আমি ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি। কোন অচেনা মেয়ের চেয়ে এই রকম মেয়েই আমি পছন্দ করি।‘