ছেলেমানুষী ভাবছেন এটাকে? হয়তো ভাই। কিন্তু সবাই নেপোলিয়নকেও একথা বলেছিল তিনি যখন লিজিয়ন অব অনার সৃষ্টি করে সেটা তার সৈন্যদলের মধ্যে ১৫০০ জনকে পদক বানিয়ে বিতরণ করেন আর ১৮ জন সেনাপতিকে ‘ফ্রান্সের বীর’ আখ্যা দেন এবং সৈন্যবাহিনীকে ঘোষণা করেন গ্র্যাণ্ড আর্মি বলে। এই যুদ্ধে ওস্তাদ সেনাদের তিনি খেলনা দিচ্ছেন বলে নেপোলিয়ানের সমালোচনা করা হতে থাকে। জবাবে নেপোলিয়ন বলেন, মানুষ খেলনার দাস।
নেপোলিয়ন যে কৌশল নিয়েছিলেন সেটা আপনার ব্যাপারেও কাজে লাগাতে পারে। আমার একজন বান্ধবী মিসেস জেন্ট, যার নাম আগেও উল্লেখ করেছি, নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। ছেলেরা দৌড়োড়ৌড়ি করে তাঁর বাড়ির বাগান নষ্ট করছিল। তিনি সমালোচনা, বকাবকি, অনেক কিছু করলেও তাতে কাজ হলো না। এরপর তিনি ছেলের দলের সবচেয়ে দুষ্টু নেতাকে একটা পদবী দিয়ে তাকে তার ‘গোয়েন্দা’ হিসেবে কাজে লাগালেন এইসব বন্ধ করতে। এতেই সমস্যার সমাধান হলো। সেই ‘গোয়েন্দা বাগানে আগুন জ্বালিয়ে একটা লোহার শিক গরম করে ভয় দেখাতে লাগল, যে বাগানে পা দেবে তাকে ছ্যাঁকা লাগানো হবে।
এই হলো মানুষের চরিত্র। অতএব অপরকে অসন্তুষ্ট না করে যদি স্বমতে আনতে চান ৯ নম্বর নিয়ম হল :
‘অপরকে দিয়ে যা করাতে চান তা তাকে খুশি মনে করতে দিন।‘
.
অল্প কথায়
অপরের অসন্তোষ না জাগিয়ে তাকে পরিবর্তনের নটি উপায়।
১: প্রশংসা আর আন্তরিক তারিফ দিয়ে শুরু করুন।
২: অপরের ভুল ঘুরিয়ে দেখান।
৩ : অন্যকে সমালোচনার আগে নিজের ভুলের কথা বলুন।
৪ : সরাসরি আদেশ না দিয়ে প্রশ্ন করুন।
৫: অপরকে মুখ রক্ষা করতে দিন।
৬ : সামান্য উন্নতিতেই প্রশংসা করুন আর প্রত্যেকটা উন্নতিতেও প্রশংসা করুন এবং সেটা আন্তরিক ভাবেই করুন।
৭ : অন্যকে প্রশংসা করুন তাতে সে ভালো হবার চেষ্টা করবে।
৮ : প্রশংসা করুন, ত্রুটি সংশোধন যে কঠিন নয় সেটা বুঝিয়ে দিন।
৯ : অপরকে খুশি মনে আপনার কাজ করতে দিন।
৩১. যে চিঠিতে জাদু জাগে
একত্রিংশ পরিচ্ছেদ
যে চিঠিতে জাদু জাগে
বাজি ধরতে পারি আপনি এখন কি ভাবছেন। আপনি সম্ভবত এখন ভাবছেন এই রকম কিছু : যে চিঠিতে যাদু জাগে! অসম্ভব ব্যাপার! এ রকম শুধু বিজ্ঞাপনই দেখা যায়।
অবশ্য এমন ভাবনার জন্য আপনাকে দোষ দিচ্ছি না। পনেরো বছর আগে এরকম একটা বই আমার হাতে পড়লে আমিও তাই ভাবতাম।
আসুন খোলাখুলি কথা বলা যাক। ‘যে চিঠিতে যাদু জাগে’ কথাটা কি সঠিক? না, সত্যি কথা বলতে গেলে তা হয় না।
আসল সত্য হলো কথাটা বড় বেশি কম করেই বলা হয়েছে। এই পরিচ্ছদে যে সব চিঠি ছাপা হয়েছে সেগুলো দ্বিগুণ ভোজবাজি দেখিয়েছে। এটা কার আবিষ্কার জানেন? আমেরিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন সেল্স ম্যানেজার কেন. আর. ডাইকের। তিনি বর্তমানে কলগেট পামলিভ কোম্পানীর বিজ্ঞাপন ম্যানেজার আর অ্যাসোসিয়েশনের ন্যাশনাল অ্যাডভার্টাইজারের ডাইরেক্টর বোর্ডের সভাপতি। মিঃ ডাইক বলেন ডিলারদের কাছ থেকে খবরাখবর চেয়ে তিনি যে সব চিঠি লিখতেন তাতে শতকরা ৫ থেকে ৮ এর বেশি জবাব কিন্তু পেতেন না। তিনি আমায় বলেছেন শতকরা ১৫ ভাগ পেলেই সেটা তিনি যথেষ্ট ভাবতেন আর ২০ হলে তো সেটা অলৌকিক ভাবতে পারতেন। মিঃ ডাইকের একটা চিঠির জবাব এলো শতকরা ৪২.১২ ভাগ। তিনি এটা কিভাবে করলেন? মিঃ ডাইকের নিজের কথাতেই সেটা শুনুন : চিঠি আসা অস্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায় মিঃ কার্নেগির সঠিক কথা বলা আর মানবিক সম্পর্ক নামের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমি যোগ দেবার পর। আমি দেখলাম আমি যেভাবে চিঠি লিখতাম সেটার সবই ভুল। পাঠক্রম অনুযায়ী চিঠি লেখার পরেই সব বদলে গেল।
চিঠিটা এখানে দিচ্ছি। এটা অন্য একজন লেখককে সামান্য উপকারের অনুরোধে খুশি হতে হয়। এই কারণে নিজের দাম সম্পর্কে তার ধারণা বাড়ে।
মিঃ জন ব্ল্যাঙ্ক,
ব্ল্যাঙ্কভিল, আরিজোনা।
প্রিয় মিঃ ব্ল্যাঙ্ক,
‘একটু অসুবিধা পড়ায় আপনি সাহায্য করতে পারেন কি না ভাবছি?..’ এই ধরনের শুরুতে ভোজবাজী ঘটে যায়। মানুষের চরিত্রই এই।
আর একটা উদাহরণ দেখুন।
আমি আর হোমার একবার ফ্রান্সের অভ্যন্তরে মোটরে চড়ে যাওয়ার সময় পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমাদের পুরনো মডেলের ফোর্ড গাড়িটা থামিয়ে আমরা একদল কৃষককে কাছাকাছি বড় শহরে কিভাবে পৌঁছতে পারি জানতে চাইলাম।
প্রশ্নের ফল হলো একেবারে বিদ্যুৎ স্পর্শের মত। এই সব গ্রাম্য কৃষক মোটর গাড়ি খুব কমই দেখেছে। আমেরিকানরা যখন ফ্রান্সে গাড়ি চড়ে যাচ্ছেন তখন তারা নিশ্চয়ই লক্ষপতি। হয়তো হেনরি ফোর্ডেরই আত্মীয় হবেন! এরকমই বোধ হয় ওরা ভাবছিল। তবু ওরা এমন কিছু জানতো যা আমরা জানতাম না। তাই আমরা যখন কাছের শহরে যাওয়ার রাস্তা জানতে চাইলাম তখন তাদের গুরুত্ববোধ বাড়িয়ে দিলাম। তারা একসঙ্গে কথা বলা শুরু করল। একজন নিজেকে জাহির করার দারুণ সুযোগ পেয়ে সে অন্যদের থামিয়ে বলা আরম্ভ করল।
সুতরাং আপনি নিজে এটা একবার চেষ্টা করে দেখুন। অচেনা জায়গায় গেলে এটা করে দেখতে পারেন। এইভাবে বলতে পারেন : দয়া করে অমুক রাস্তায় কিভাবে যেতে পারি একটু দেখিয়ে দেবেন? বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন একজন শত্রুকে এইভাবেই সারা জীবনের মত বন্ধু করে তোলেন। সে সময় ফ্রাঙ্কলিন মাঝবয়সী যুবক ছিলেন, তিনি তার জমানো সব টাকায় একটা ছোট ছাপাখানা খোলেন। তিনি ফিলাডেলফিয়ার জেনারেল অ্যাসেম্বলীতে কেরানি নির্বাচিত হন। এটা পাওয়ায় তিনি সরকারী ছাপার কাজ করতে পারতেন। তাতে ভালোই লাভ হতো, বেন তাই বজায় রাখতে চাইছিলেন। কিন্তু একটা বিপদের সম্ভাবনা দেখা দিল। অ্যাসেম্বলীর একজন বিরাট ধনী আর ক্ষমতাবান মানুষ ফ্রাঙ্কলিনকে খুবই অপছন্দ করতেন। তিনি শুধু যে তাঁকে অপছন্দই করতেন তাই নয়, খোলাখুলি সকলের সামনে নিন্দাও করতেন।