এই নিয়োগ কর্তাটির ব্যবসাতে আজ প্রচুর লাভ, তার অবসরও প্রচুর, আর সবচেয়ে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো তিনি তাঁর ব্যবসাতে আর পারিবারিক জীবনে অঢেল সুখ লাভ করেছেন।
অসংখ্য সেলসম্যান এই নিয়ম কাজে লাগিয়ে তাদের বিক্রির মাত্রা দারুণ বাড়াতে পেরেছেন। অনেকেই আবার খুঁজে পেয়েছেন জীবিকার নতুন দিগন্ত, নতুন পথ, যে পথ তারা আগে বৃথাই হাতড়ে ঘুরেছেন। কোন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারেরাও তাদের ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। বাড়াতে পেরেছেন তাদের আয়। একজন কর্ণধার গতবছর জানিয়েছিলেন তার মাহিনা বছরে পাঁচ হাজারের মত বেড়ে গেছে বিশেষ করে এই বইয়ে লিখিত সত্যগুলো তিনি কাজে লাগান বলেই। আর একজন, ফিলাডেলফিয়া গ্যাস ওয়ার্কস কোম্পানীর এক কর্ণধার, তার কিছুটা ঔদ্ধত্যপূর্ণ কর্মীদের সঠিকভাবে পরিচালনার অযোগ্যতার জন্য প্রায় পদাবনতির মুখোমুখি হন। এই শিক্ষা গ্রহণের ফলে তাঁকে যে পঁয়ষট্টি বছর বয়সে পদাবনতি থেকেই রক্ষা করেছিল তাই নয়, বরং পদোন্নতির সঙ্গে বাড়তি মাইনের সুযোগও এনে দিয়েছিল।
বেশ কয়েকবার পাঠক্রম শেষে কোন কোন সম্বর্ধনায় শিক্ষাগ্রহণকারী স্বামীদের স্ত্রীরা উপস্থিত হয়ে বলেছেন যে তাঁদের স্বামীরা এই শিক্ষা গ্রহণ করার ফলে তাদের সংসারে সুখ শান্তি বেড়েছে।
বহুলোক এই শিক্ষা নিয়ে যে নতুন ফল লাভ করেন তাতে তারা প্রায়ই খুব আশ্চর্য হয়ে যান। সবটাই যেন যাদুবিদ্যার মত। মাঝে মাঝে উৎসাহের আতিশয্যে তাঁরা আবার রবিবারেও আমাকে বাড়িতে টেলিফোন করেছেন, কারণ আটচল্লিশ ঘন্টা অপেক্ষা করে আবার বক্তৃতা শুরুর সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে তাদের সাফল্যের কথা জানানোর ধৈর্য রাখতে পারেন নি।
একজন আবার গত বছর এই নিয়মের উপর কোন আলোচনা শুনে এতই বিচলিত হয়ে পড়েন যে ক্লাসে বসেই অন্যান্য সকলের সঙ্গে গভীর রাত পর্যন্ত আলোচনা করে চলেন। রাত প্রায় তিনটের সময় বাকিরা সবাই বাড়ি ফিরে গেলেন, কিন্তু তিনি তার নিজের কৃত ভুল বুঝতে পেরে আর সামনে এক নতুন ঝলমলে ভবিষ্যতের রঙীন হাতছানি দেখে তিনি এতোই উৎসাহিত হয়ে পড়েন যে তিনি ঘুমোতে পারলেন না। ওই রাতে তিনি ঘুমোতে তো পারলেনই না পরের দিন বা রাতেও পারলেন না। তার উপলব্ধি ছিল এমনই।
.
ভদ্রলোক কে হতে পারেন? কোন সাদাসিধে অশিক্ষিত মানুষ হঠাৎ নতুন কিছু তত্ত্ব পেলেই যিনি আঁকড়ে ধরতে পারেন এমন কেউ? না, তা নন–এ রকম কিছু মোটেই নয়? তিনি বেশ মার্জিত রুচির রাশভারি প্রকৃতির এক শিল্পের ব্যবসায়ী, শহরের নামজাদা মানুষ তিনি, দুটো বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক আর তিনটে ভাষায় অনর্গল কথা বলতেও পারেন।
এই পরিচ্ছেদ লেখার সময় এক প্রাচীনপন্থী অভিজাত জার্মান ভদ্রলোকের কাছ থেকে একখানা চিঠি পাই। ভদ্রলোকের পূর্বপুরুষরা প্রায় সকলেই বংশানুক্রমে হোহেনজোলার্নদের হয়ে সামরিক বাহিনীতে কাজ করেছেন। এক আন্ত-আটলান্টিক যাত্রীবাহী স্টীমার থেকে লেখা তাঁর চিঠিতে তিনি এই নিয়ম সম্বন্ধে যা লিখেছিলেন তাতে যেন ধর্মীয় শ্রদ্ধার স্পর্শ লেগে ছিল।
আর একজন, নিউইয়র্কের এক বিশ্বদ্যিালয়ের স্নাতক। সামাজিক স্তরে যার নাম বেশ উঁচুতেই। ভদ্রলোক বেশ ধনী আর মস্ত এক কার্পেট তৈরির কারখানার মালিক। তিনি জানিয়েছিলেন এই ধরণের পদ্ধতির মধ্য দিয়ে চৌদ্দ সপ্তাহে জনগণের উপর প্রভাব বিস্তারের কৌশল তাঁর চার বছরের কলেজ জীবনের শিক্ষার চেয়ে এটা অনেক বেশি শিখতে পেরেছেন। এটা কি অসম্ভব? হাস্যকর? না অকল্পনীয়? আপনি অবশ্যই যে কোন রকম বিশেষণ যোগ করেই এ বক্তব্য উড়িয়ে দিতে পারেন। আমি শুধু কোন রকম মন্তব্য ছাড়াই একজন রক্ষণশীল আর অত্যন্ত সফল হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের বক্তব্যই উল্লেখ করছি মাত্র। ভদ্রলোক তাঁর এই বক্তব্য রেখেছিলেন ১৯৩৩ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারী কোন সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের ইয়েল ক্লাবে প্রায় ছ’শ শ্রোতার সামনে।
আমাদের যা হওয়া উচিত তার সঙ্গে তুলনা করলে হাভার্ডের বিখ্যাত অধ্যাপক উইলিয়াম জেমস একবার বলেন, আমরা আসলে অর্ধ জাগরিত। আমরা শুধু আমাদের শারীরিক আর মানসিক ক্ষমতার একটা ক্ষুদ্র অংশই কাজে লাগাচ্ছি। আরও ব্যাখ্যা করে বললে বলতে হয় যে কোন একজন মানুষ তার ক্ষমতার তুলনায় ঢের অক্ষমতা নিয়েই জীবন কাটায়। সে তার মধ্যে জমে থাকা বহু বিচিত্র নানা ধরণের শক্তি স্বভাবতই কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়।
যে শক্তি আপনি স্বভাবতই কাজে লাগাতে ব্যর্থ সেই ঘুমন্ত আর অব্যবহৃত মূলধন আবিষ্কার করে তাকে উন্নত করে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যেই এই বইয়ের প্রস্তাবনা।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডঃ জন জি, হিবেন একবার বলেছিলেন, শিক্ষা হলো জীবনের নানা অবস্থার মোকাবিলা করার যোগ্যতা অর্জন।
এই বইয়ের প্রথম তিনটি পরিচ্ছেদ পাঠ করার পরেও যদি আপনি জীবনের নানা অবস্থার মোকাবিলা করার কাজে কিছুটা অভিজ্ঞতা না সঞ্চয় করে থাকেন তাহলে অন্ততঃ আপনার ক্ষেত্রে ধরে নেবো এ বই লেখা ব্যর্থ। যেহেতু হাবার্ট স্পেন্সার বলেছিলেন, ‘শিক্ষার যথার্থ উদ্দেশ্য হলো তাকে কাজে লাগানো, শুধু জ্ঞান আহরণ নয়।’
আর এ বই হল কাজে লাগানোরই বই।