দোকানের কথা বলতে গেলে ফ্রাঙ্ক আর্ভিন ফ্লেচারের বিজ্ঞাপনটার কথা মনে রাখা দরকার। তিনি দিয়েছেন এই ঘরোয়া দার্শনিক তত্ত্ব :
বড়দিনে হাসির মূল্য—
এতে খরচ নেই, তবে সৃষ্টি করে অনেক কিছু।
এতে যারা গ্রহীতা তাদের প্রচুর লাভ হয়, অথচ যারা দেয় তাদের কোন ক্ষতি হয় না।
এটা ঘটে যায় চোখের নিমেষে কিন্তু তার স্মৃতি থেকে যায় বহুদিন।
কেউ এমন বড় মানুষ নন যার এটি ছাড়াই চলে যায়, আর এমন কেউ দরিদ্রও নেই যার এতে লাভ হয় না।
এতে গৃহে সুখ আসে, ব্যবসায়ে আসে সুনাম, আর হাসি হলো বন্ধুত্বের চিহ্ন।
ক্লান্ত মানুষের কাছে হাসি হল বিশ্রাম, হতাশের কাছে আশার আলো, দুঃখিতের কাছে সূর্যের আলো, আর কষ্ট দূর করার ওষুধ।
তা সত্তেও এটা কেনা যায় না, ভিক্ষা করে আনা যায় না, ধার করতে বা চুরি করতেও পারা যায় –কারণ হাসি যতক্ষণ না কাউকে দেওয়া যায় ততক্ষণ তার কোন জাগতিক মূল্য নেই। : বড়দিনের শেষে মুহূর্তের কেনাকাটার ভিড়ে দোকানের কর্মীরা যদি শ্রান্তিতে আমাদের তা না দিতে পারে আপনারা কি তাদের এই হাসির এক কণা দিয়ে আসতে পারেন না।
কারণ হাসি তাদের বেশি চাই যাদের দেবার মত আর নেই।
অতএব যদি চান লোকে আপনাকে পছন্দ করুক তাহলে দু নম্বর নীতি হল; হাসুন!
০৬. এ রকম না করলে ঝামেলায় পড়বেন
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
এ রকম না করলে ঝামেলায় পড়বেন
১৮৯৮ সালে নিউইয়র্কের রকল্যান্ড কাউন্টিতে একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল। একটি শিশু মারা যাওয়ায় ওই দিন পড়শীরা তার শোকযাত্রার ব্যবস্থা করেছিল। জিম ফারলি নামে একজন তার ঘোড়াকে জলপান করাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বরফ পড়ায় রাস্তাটা পিছল হয়ে ছিল আবহাওয়াও বেশ ঠাণ্ডা, ঘোড়াটাকে বেশ। কদিন বাইরে আনা হয়নি। তাই বাইরে আনতেই সে আনন্দে পা ছুঁড়তে আরম্ভ করতেই তার আঘাতে জিম ফারলি মারা গেলেন। অতএব ছোট্ট স্টোনি পয়েন্ট গ্রামে দুটো শবযাত্রার ব্যবস্থা করতে হয়।
জিম ফারলি মৃত্যুর সময় তার বিধবা স্ত্রী আর তিনটে ছেলে এবং কয়েক শ ডলারের বীমা পত্র রেখে যান।
তাঁর বড় ছেলে জিমের বয়স তখন দশ, তাকে কাজ করতে যেতে হলো একটা ইট তৈরির কারখানায়। ওর কাজ ছিল বালি মাখা থেকে আরম্ভ করে, ইট সাজানো এমন কি রোদ্দুরে শুকিয়ে নেওয়াও। জিম ছেলেটি লেখাপড়ার কোন সুযোগই পায়নি তা সত্তেও ওর আইরিশ সুলভ ভদ্র ব্যবহার তাকে মানুষের কাছে প্রিয় পাত্র তুলতো, সবাই ওকে পছন্দ করত। ও তাই রাজনীতিতে যোগ দেয়। বেশ ক’বছর কাটার পর ওর একটা অপার্থিব ক্ষমতা জন্মালো, মানুষের নাম মনে রাখা।
তিনি জীবনে কোনদিন উচ্চ বিদ্যালয়ে চৌকাঠ পার হতে পারেন নি তবু ওঁর ছেচল্লিশ বছর বয়স হওয়ার আগেই চারটে কলেজ তাঁকে ডিগ্রী প্রদান করে সম্মানিত করে, আর তিনি ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারম্যান আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পোস্ট মাষ্টার জেনারেল হন।
আমি একবার জিম ফারলির সাক্ষাৎকার নিয়ে তাঁকে তাঁর সাফল্যের গোপন রহস্যের কথা জিজ্ঞাসা করি। তিনি জবাব দেন ‘কঠিন পরিশ্রম’। আমি তাকে বলি, ‘ঠাট্টা করবেন না, সত্যি কথাটা বলুন না।’
তিনি তখন আমাকে প্রশ্ন করেন তার সাফল্যের কারণ সম্বন্ধে আমার ধারণা কি? আমি জবাব দিই, ‘আমার মনে হয় আপনি দু’শ মানুষকে তাদের প্রথম নামে চেনেন।‘
তিনি জবাব দেন : না, সব ভুল। আমি পঞ্চাশ হাজার মানুষকে তাদের প্রথম নাম ধরে ডাকতে পারি।’
এ ব্যাপারে সন্দেহ করবেন না; জিম ফারলির ওই ক্ষমতার জন্যেই ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট হোয়াইট হাউসে ঢুকতে পেরেছিলেন।
জিম ফারলি গোড়ায় যখন এক জিপসাম কোম্পানীর হয়ে কাজে ঘুরছিলেন আর স্টোনি পয়েন্টে যখন কেরানীর কাজ করতেন তার কাজই ছিল নাম মনে রাখার কাজ করা।
গোড়ায় ব্যাপারটা বেশ সহজই ছিল। যখনই তার সঙ্গে নতুন কারও দেখা হতো তিনি তাঁর পুরো নাম, বাড়িতে কে কে আছেন, কাজ কর্ম কি করেন, রাজনৈতিক মতবাদ কি সব জেনে নিতেন। এসব তিনি মনে একেবারে গেঁথে রাখতেন, তারপর লোকটির সঙ্গে যখনই দেখা হোক, তা সে এক বছর পরে হলেও তিনি তাঁর পিঠ চাপড়ে জিজ্ঞাসা করতেন স্ত্রী ছেলে মেয়েরা কেমন আছে। বাগানে ফুলগাছগুলো কেমন ফুল দিচ্ছে ইত্যাদি। এতে যে তাকে সবাই পছন্দ করতো সন্দেহ নেই।
রুজভেল্টের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের প্রচার আরম্ভ হওয়ার ঢের আগে থেকেই জিম ফারলি প্রত্যেক দিন প্রায় শ খানেক চিঠি লিখতে আরম্ভ করেন পশ্চিম আর উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্যের জনসাধারণের কাছে। তারপর একটা ট্রেনে চড়ে উনিশ দিনের মধ্যে কুড়িটা রাজ্য আর বারো হাজার মাইল পাড়ি দিয়েছিলেন। মাঝখানে চড়েছেন কখনও বা বগিগাড়ি, রেল, মোটর গাড়ি ইত্যাদি। কোন শহরে নেমে বন্ধুদের সঙ্গে প্রাতরাশ, চা, বা নৈশভোজ সারার ফাঁকে তাদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলে যেতেন। তারপর আবার রওয়ানা হতেন তার ভ্রমণে।
পূব দিকে হাজির হয়ে তিনি তাঁর একজন বন্ধুকে চিঠি লিখে যাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে এসেছেন তাদের নামের তালিকা চেয়ে পাঠালেন। শেষ তালিকায় দেখা গেল হাজার হাজার নাম। তা সত্ত্বেও ফারলি প্রত্যেকের কাছে ব্যক্তিগত চিঠি পাঠালেন। এইসব চিঠি তিনি আরম্ভ করতেন ‘প্রিয় বিল’ বা ‘প্রিয় জো’ বলে শেষে নাম লিখনেত ‘তোমার জিম’ বলে।