‘কাজকে মনে হয় অনুভূতি অনুসরণ করে থাকে। তবে আসলে কাজ আর অনুভূতি একসঙ্গেই চলে। তাই কাজের ধারাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, কারণ এটা মনের এক্তিয়ারে থাকে, আর তাতেই পরোক্ষে অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রিত করা যায় যা ইচ্ছার বশবর্তী নয়।’
‘তাই সুখী হওয়ার একমাত্র পথ হলো, যদি সুখ না থাকে, আনন্দিত হয়ে সেইভাবেই কথাবার্তা বলা, যেন আপনি সত্যই সুখী …।
পৃথিবীতে প্রত্যেকেরই সুখ অনুসন্ধান করে চলেছে–আর সেটা লাভ করার একটাই মাত্র পথ আছে। সেটা হলো আপনার চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করা। সুখ কখনই বাইরের অবস্থার উপর নির্ভর করে না। এটা নির্ভরশীল ভিতরের অবস্থার উপর। আপনার কি আছে, আপনি কে, কোথায়ই বা আছেন বা কি করছেন এসবের উপর সুখ নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে এ সম্বন্ধে আপনি কি ভাবেন তার উপর। একটা উদাহরণ দিচ্ছি–দুজন লোক একসঙ্গে, একই জায়গায় একই কাজ করতে পারে, দুজনেই একই টাকা আর সম্মানও পেতে পারে–তা সত্বেও একজন দুঃখী আর অন্যজন সুখী হতে পারে। কেন? এর কারণ বিভিন্ন রকম মানসিক অবস্থা। চীন দেশে কুলিদের ঘর্মাক্ত কলেবরে প্রচণ্ড রোদে দৈনিক সাত সেন্ট আয় করতে যেমন হাসিমুখে কাজ করতে দেখেছি তেমনই দেখেছি এখানকার পার্ক অ্যাভিনিউতে।
‘কোন কিছুই ভালো বা খারাপ নয়, শেকস্পীয়ার বলেছেন, চিন্তাই এটা তৈরি করে।‘
লিঙ্কন একবার বলেছিলেন : কোন লোক যতখানি সুখী হতে চায় ততটাই সুখী হতে পারে।’ তিনি ঠিকই বলেছিলেন। এর একটা জ্বলন্ত উদাহরণ আমি সম্প্রতি দেখেছি। আমি একদিন নিউইয়র্কের লঙ আইল্যাণ্ড ষ্টেশনের সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলাম। ঠিক আমার সামনেই ত্রিশ বা চল্লিশ জন প্রতিবন্ধী খঞ্জ লাঠি আর ক্রাচে ভর রেখে সিঁড়ি বেয়ে উঠছিল। একটি ছেলেকে প্রায় কোলে করেই তুলতে হয়। ওদের হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গী লক্ষ্য করে আমি অবাক হয়ে যাই। ছেলেদের সঙ্গে অভিভাবক হিসেবে যে লোকটি ছিল তাকে কথাটা জিজ্ঞাসা করতেই সে বললো, হ্যাঁ, ব্যাপারটা হলো কোন ছেলে যখন জানতে পারে সে জন্মের মতই খোঁড়া হয়ে গেছে, তখন প্রথমে সে একটু আঘাত পেলেও সেটা পরে কাটিয়ে ওঠে, তারপর ভবিতব্যকে মেনে নিয়ে অন্যান্য সাধারণ ছেলের মতই স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। আমার ইচ্ছে হচ্ছিল ঐ ছেলেদের অভিনন্দন জানাই। ওদের কাছে যে শিক্ষা পেয়েছিলাম তা কোনদিনই ভুলবো না।
মেরী পিকফোর্ড যখন ডগলাস ফেয়ারব্যাঙ্কের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে চলেছিলেন তখন তার সঙ্গে আমি একটা সন্ধ্যা কাটিয়েছিলাম। দুনিয়ার সবাই তখন বোধ হয় ভেবে নেয় মেরী পিকফোর্ড অত্যন্ত বিরক্ত আর অসুখী। কিন্তু আমি দেখলাম তিনি বেশ শান্ত স্বভাবের বেশ বিজয়িনী কোন মহিলা, এমন কাউকে আমি দেখিনি। তার মুখ থেকে সুখ ফেটে পড়ছিল। তার গোপন রহস্যটা কি? ব্যাপারটা তিনি প্রকাশ করেছেন পঁয়ত্রিশ পাতার একটা ছোট্ট বইতে–পড়ে দেখলে আনন্দ পাবেন। বইটার নাম ‘হোয়াই নট ট্রাই গড?
সেন্টলুইয়ের কার্ডিনালের ফ্রাঙ্কলিন বেটগার হলেন আমেরিকার অতি দক্ষ এক বীমাকারী পুরুষ। বেশ ক’বছর আগে তিনি আমাকে বলেছিলেন যে, যার মুখে সদাই হাসি লেগে থাকে তিনি সব সময়েই স্বাগতম। অতএব কোন লোকের অফিস কামরায় ঢোকার আগে তিনি একটু থেমে মনে মনে ভেবে নেন কি কি জিনিসের জন্য নিজেকে তিনি ধন্যবাদ জানাতে পারেন। তারপর মুখে একজন সৎ মানুষের হাসি ফুটিয়ে তিনি সেই ঘরে প্রবেশ করেন।
এই সামান্য কৌশলেই তিনি বীমা করানোর কাজে এমন সাফল্য অর্জন করেছেন বলেই ভাবেন।
এলবার্ট হাভার্ডের এই সুন্দর উপদেশটার কথা একটু পর্যালোচনা করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন শুধু পর্যালোচনায় কাজ হবে না যতক্ষণ না কাজে লাগাচ্ছেন এটা :
যখনই বাড়ির বাইরে যাবেন, মাথাটা উঁচু রেখে ফুসফুঁসে বেশ হাওয়া ভরে নিন, বেশ কিছুটা সূর্যকিরণ গায়ে মেখে নিন। তারপর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্রই হেসে অভ্যর্থনা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে আন্তরিকভাবে করমর্দন করুন। ভুল বোঝার কথা মোটেও ভাববেন না আর নিজের শত্রুদের কথা ভেবে এক মিনিট সময়ও নষ্ট করবেন না। কি করতে চলেছেন ভেবে মনটাকে দৃঢ় করে তুলুন, আর তারপর কোন কিছু না ভেবেই ঠিক লক্ষ্যে পৌঁছে যান। যে সব দারুণ কাজ করতে মনস্থ করেছেন সেই কথাটাই ভাবতে থাকুন-দেখবেন যে, দিন এগিয়ে চললেই আপনি অবচেতন ভাবেই আপনার ইচ্ছা পূরণ করার দিকে এগিয়ে চলেছেন আর সুযোগও পাচ্ছেন। ঠিক যেমনভাবে প্রবাল, সাগরের ঢেউ থেকে তার দরকারী জিনিসটুকু সংগ্রহ করে নেয়। আপনার মনে আপনার যে সামর্থ আন্তরিক আর দরকারী ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে চান তাই শুধু ভাবতে থাকুন। দেখবেন ঘন্টায় ঘন্টায় আপনি নিজেকে যেমন কল্পনা করেছেন সেই রকম ব্যক্তিত্ব সম্পন্নই আপনি হয়ে উঠেছেন …চিন্তাই হলো আসল। সর্বদাই যোগ্য একটা মন তৈরির চেষ্টা করুন–সাহস, সারল্য আর আনন্দময় একটা ভাব। ঠিক ভাবনার পরিণতিতে আসে সৃষ্টির দক্ষতা। সব জিনিসই আসে ইচ্ছা থেকে আর প্রতিটি আন্তরিক প্রার্থনাই সফল হয়। . প্রাচীন চীনারা খুবই জ্ঞানী মানুষ ছিল পৃথিবীর নানা ব্যাপারে তাদের জ্ঞান ছিল অসীম। তাদের একটা প্রবাদ নিয়ে আমাদের উচিত সেটা আমাদের টুপির নিচে সেঁটে রাখা। সেটা হল এইরকম : ‘যে মানুষের মুখে হাসি নেই, তার কোন দোকান খোলা উচিত নয়।‘