এই জন্যই কুকুরদের এত দাম। আমাদের দেখে তাদের খুশি সত্যই বাঁধ মানে না। আর স্বাভাবিকভাবেই আমরাও তাই হই।
কিন্তু কৃত্রিম কোন হাসি? না, তাতে কোন লোককে ঠকানো যায় না। আমরা বুঝতে পারি সেটা যান্ত্রিক আর তাই আমরা পছন্দ করি না। আমি যে হাসির কথা বলছি সেটা হলো সত্যিকার হৃদয় থেকে আনা হাসি। যে হাসি আসে অন্তর থেকে, এরকম কোন হাসিই ভুবন জয় করতে পারে।
নিউইয়র্কের বিরাট এক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের নিয়োজন অধিকর্তা আমাকে বলেছিলেন যে বিক্রয়কারিণী মেয়ে হিসেবে স্কুলের বেড়া পেরোয়নি এমন কোন মেয়েকেও তিনি চাকরি দিতে প্রস্তুত যদি
তার চমৎকার হাসি থাকে, এর বদলে তিনি দর্শনশাস্ত্রের কোন গম্ভীর পণ্ডিতকে চাইবেন না।
আমেরিকার সবচেয়ে বড় রবার প্রতিষ্ঠানের ডাইরেক্টর বোর্ডের চেয়ারম্যান একবার আমায় বলেছিলেন যে, তাঁর মতে কোন লোক তার কাজে আনন্দ না পেলে কখনও সাফল্য লাভ করেন না। এই শিল্পপতি ভদ্রলোক বলেছিলেন প্রাচীন সেই তত্ত্ব কথায় তাঁর বিশ্বাস নেই যে কঠিন পরিশ্রম করলেই সব কাজে অনায়াসে সফল হওয়া যায়। তিনি বলেন : আমি এমন সব মানুষকে জানি যারা সাফল্য লাভ করেন। যেহেতু তাদের কাজে তাঁরা প্রভুত আনন্দ পেতেন। আবার অন্যদের দেখেছি তারা কাজ করতে আরম্ভ করার পর সেটা একঘেঁয়ে হয়ে ওঠায় তারা ব্যর্থ হলেন।
আপনি যদি চান অন্যেরা আপনাকে দেখে আনন্দিত হোক তাহলে অন্যদের দেখে আপনিও আনন্দ প্রকাশ করুন।
আমি হাজার হাজার ব্যবসায়ীকে বলেছি প্রতিদিন এক সপ্তাহ ধরে যার সঙ্গেই দেখা হবে তাঁদের দেখে হাসতে। তারপর আমার ক্লাসে এসে জানাতে ফল কেমন হলো। এতে কি কাজ হয়েছিল? দেখা যাক … নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের মিঃ উইলিয়াম বি. স্টাইনহার্টের লেখা একখানা চিঠি। তাঁর চিঠি কোন ব্যতিক্রম নয় বরং এরকম আরও শ’য়ে শ’য়েই আছে।
মিঃ স্টাইনহার্ট লিখেছিলেন আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় আঠারো বছর, আর ওই সময়ে আমি কদাচিৎ স্ত্রীকে দেখে হেসেছি বা কাজে বেরিয়ে যাওয়ার আগে খুব কথা বার্তা বলেছি। ব্রডওয়েতে আমি ছিলাম সবচেয়ে অসুখী মানুষ।
আপনি যখন বললেন আমার হাসি সম্বন্ধে অভিজ্ঞতার কথা জানাতে তখন ঠিক করলাম এক সপ্তাহ ধরে সে চেষ্টা করব। তাই পরের দিন সকালে আয়নায় চুল আঁচড়ানোর সময় যখন আমার পেঁচার মত মুখখানা দেখলাম তখনই নিজেকে বলে উঠলাম, ‘বিল, তোমার মুখ থেকে ওই অন্ধকারটা দূর করতে হবে। তোমায় এবার হাসতে হবে। আর সেটা এখন থেকেই শুরু করা চাই।’ প্রাতরাশের সময় আমি আমার স্ত্রীকে হেসে বললাম : সুপ্রভাত, প্রিয়া।’ ঠিকই যেমন ভেবেছিলাম।
‘আপনি আমাকে সাবধান করেছিলেন ও অবাক হতে পারে। আসলে, আপনি ওর প্রতিক্রিয়াটা কম করেই বলেছিলেন। সে বেশ ধাঁধায় পড়ে যায় এবং বেশ ধাক্কাও খায়। আমি স্ত্রীকে বললাম ভবিষ্যতে এমন কিছুই সে রোজ আশা করতে পারে। আর তাই দু’মাস ধরে প্রত্যেক সকালে এই রকমই করে। যাই।
‘আমার এই পরিবর্তিত মানসিক ভঙ্গী গত এক বছরে যা হয়নি সেই সুখ দুমাসে এনে দিয়েছে।’
‘কোন অফিসে যাওয়ার সময় আমি বাড়ির লিফট বয়কে অভিনন্দন জানাই সুপ্রভাত’ বলে, সঙ্গে থাকে হাসি। দারোয়ানকে দেখেও তাকে হাসি দিয়ে অভিনন্দন জানাই। সাবওয়ের ক্যাশিয়ারকেও খুচরো নেবার সময় অভিনন্দন জানাই। অফিসের দরজায় দাঁড়ানোর সময়েও যাদের কখনও দেখিনি তাদেরও হাসিতে অভ্যর্থনা জানাই।’
‘আচমকা আবিষ্কার করলাম সকলেই আমাকেও হাসি দিয়ে অভ্যর্থনা করছে। যারা আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে আসে আমি হাসিমুখেই তাদের কথা শুনি। হাসিমুখেই তাদের বক্তব্য শুনে ব্যাপারটাও সহজে মিটিয়ে ফেলি। আমি দেখেছি এই হাসিই আমায় প্রত্যেকদিন অনেক বেশি টাকা এনে দিচ্ছে।
আর একজন ব্রোকারের সঙ্গে আমার অফিস চালাই আমি। তার একজন কেরানী ভারি চমৎকার একটি তরুণ, আমার ওই হাসির ফলাফলে এমনই আনন্দ হয়েছিল যে তাকে একদিন আমার নতুন মানবিক জীবন দর্শনের কথা বলে ফেললাম। সে তখন স্বীকার করলো সে যখন এই অফিসে প্রথম আসে তখন আমায় সাঙ্ঘাতিক রকম অসুখী বলে ভাবতো–ইদানিং কালে তার ধারণাটা বদলে গেছে। সে জানিয়েছে আমি হাসলে সত্যিই ভালো লাগে।
‘আমার কাজের পদ্ধতিতে সমালোচনা করাও বন্ধ করেছি। দোষারোপের বদলে আমি এখন শুধু প্রশংসাই করতে থাকি। আমি কি চাই সে কথা বলা একদম ত্যাগ করেছি। এখন শুধু আমি চেষ্টা করি অন্য লোকদের দৃষ্টিতে সব কিছু যাচাই করতে। আর এগুলোই বলতে গেলে আমার জীবনে বিপ্লব ঘটিয়েছে। আমি এখন সম্পূর্ণ এক আলাদা মানুষ-একজন অর্থবান, বন্ধুত্বেও সমৃদ্ধ, সুখী মানুষ-এর চেয়ে জীবনে আর কি সুখকর হতে পারে?
ব্যাপারটা মনে রাখবেন–এ চিঠি এমন একজন লেখেন যার কাজ শেয়ার কেনাবেচনা–যে ব্যবসাটা অতি কঠিন, শতকরা ৯৯ জনই যে কাজে ব্যর্থ হন।
আপনার হাসবার মত মনের অবস্থা নেই? তাহলে আপনাকে দুটো কাজ করতে হবে। প্রথমে জোর করে হাসার চেষ্টা করুন। যদি একলা থাকেন তাহলে জোর করে এক কলি গান গাইবার চেষ্টা করুন বা শিস দিন। ভাবতে চেষ্টা করুন আপনি সুখী, আর তাতেই আপনি সুখী হবেন। হার্ভার্ডের অধ্যাপক উইলিয়াম জেমস কথাটা এইভাবে বলেছিলেন :