তিনি খালি অবাক হয়ে ভাবতে চাইতেন তিনি ওদের কেন কয়লা বিক্রি করতে পারলেন না।
আমি তাকে পরামর্শ দিলেন অন্য কৌশল কাজে লাগাতে। ছোট্ট করে বললে, যা ঘটেছিল সেটা এই রকম। আমরা এই বিতর্কসভার আয়োজন করলাম–বিতর্কের বিষয় ঠিক হলো : ‘চেইনস্টোর দেশের ভালো করার বদলে ক্ষতিই করে চলেছে।
.
ন্যাফলে আমার পরামর্শে অন্য দিকই নিলেন, তিনি চেইন স্টোরের হয়েই বক্তব্য রাখতে রাজি হলেন। তারপর সোজা হাজির হলেন যাদের মনে প্রাণে ঘৃণা করেন সেই চেনইস্টোরের একজন কর্মকর্তার কাছে। তাকে তিনি বললেন : আমি এখানে কয়লা বিক্রি করতে আসিনি আমি শুধু আপনার কাছে একটা সাহায্যের জন্য এসেছি। তিনি এরপর ওই বিতর্ক প্রতিযোগিতা কথাটা জানিয়ে বললেন; আমি আপনার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছি এই কারণেই যে, আমি জানি যে খবর চাই সেটা আপনারা ছাড়া কেউই দিতে পারবে না। প্রতিযোগিতাটা আমি যেমন ভাবেই হোক জিততে চাই, তাই যে সাহায্য দেবেন আপনি, তাতে কৃতজ্ঞ থাকবো।
এরপরের ঘটনা মি. ন্যাফলের নিজের কথাতে শুনুন :
‘আমি ভদ্রলোকের কাছে ঠিক এক মিনিট সময় দিতে অনুরোধ জানাই। এই শর্তেই তিনি আমার সঙ্গে সাক্ষাতে রাজি হন। আমার প্রয়োজনের ব্যাপারটা তাঁকে জানানোর পর আমাকে একটা চেয়ারে বসতে বলে তিনি আমার জন্য খরচ করেছিলেন ঠিক একঘন্টা সাতচল্লিশ মিনিট সময়। এরপর তিনি আর একজন কর্মকর্তাকে ডাকলেন, তিনি চেইনস্টোর নিয়ে একখানা বই লিখেছিলেন। তিনি যাবতীয় টেইনস্টোর সংস্থার কাছে চিঠি লিখে ওই বিষয়ে বিতর্ক সম্পর্কে একখানা বই আমাকে বানিয়ে দেন। তাঁর মত হল এই চেইন-স্টোর মানব সমাজের সেবা করে চলেছে। তিনি খুবই গর্বিত, সমাজের নানা স্তরের জন্য যা করে চলেছেন। কথা বলার ফাঁকে তাঁর মুখচোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল। আমি স্বীকার করছি তিনি নানা অজানা বিষয়ে আমার দৃষ্টি উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন–এসব আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। তিনি আমার মানসিক দৃষ্টিভঙ্গী সম্পূর্ণ পাল্টে দেন।
আমি যখন চলে আসছিলাম, তিনি আমার সঙ্গে দরজা পর্যন্ত এলেন,তারপর আমার কাঁধে হাত রেখে বিতর্কে আমার সৌভাগ্য কামনা করলেন। পরে একসময় আবার দেখা করে বিতর্কে কি রকম ফল হলো
আমায় জানাতে অনুরোধ করলেন। শেষ যে কথা তিনি আমায় বললেন তা হলো : বসন্ত কালের শেষে আর একবার আমার সঙ্গে দেখা করবেন। আপনার কাছ থেকে কিছু কয়লা কিনবো।’
আমার কাছে ব্যাপারটা একেবারে অলৌকিক। তিনি আমার কাছ থেকে কোন রকম প্রস্তাব ছাড়াই কয়লা কিনতে চাইছেন। আর তাঁর সমস্যা সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে মাত্র দু ঘন্টার মধ্যে আমি অনেকটা অগ্রসর হয়েছি যা আমি আমার কয়লার প্রতি আগ্রহী করতে দশ বছর চেষ্টা করেও করতে পারতাম কিনা সন্দেহ।
আপনি নতুন কিছু আবিষ্কার করেন নি, মিঃ ন্যাফলে, কারণ বহু বছর আগে যীশুর জন্মেরও একশ বছর আগে বিখ্যাত এক রোমান কবি পাবলিয়ান সাইরাস মন্তব্য করেছিলেন : আমরা অন্যের প্রতি তখনই আগ্রহী হই, অন্যেরা যখন আমাদের প্রতি আগ্রহী হয়।
অতএব আপনি যদি চান লোকে আপনাকে পছন্দ করুক, তাহলে তার সব সেরা নীতি হলো এই রকম :
‘অন্যের প্রতি সত্যিকার আগ্রহী হয়ে উঠুন।‘
আপনি যদি সত্যিকার ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে চান আর মানব সংসর্গ নিয়ে দক্ষতা অর্জন করতেও আগ্রহী হন তাহলে ড. হেনরি লিঙ্কের ‘দি রিটার্ন টু রিলিজিয়ান’ বইখানা পড়ে দেখতে পারেন। বইয়ের নাম দেখে চমকে যাবেন না।
০৫. ভালো লাগানোর সহজ পথ
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
ভালো লাগানোর সহজ পথ
আমি সম্প্রতি নিউইয়র্কে এক নৈশভোজের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আমন্ত্রিতদের মধ্যে একজন মহিলা ছিলেন যিনি ইদানীং প্রচুর অর্থ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। তিনি প্রত্যেকের মধ্যেই বেশ একটু সুখকর ছাপ ফেলার চেষ্টা করছিলেন। তিনি হীরে জহরত মানিক্যের মালা পরেছিলেন অথচ মুখের কোন পরিচর্যা করেন নি। সে মুখ থেকে বেরিয়ে আসছিল শুধু তিক্ততা আর স্বার্থপরতা! তিনি এটা বোঝেন নি যে প্রতিটি পুরুষ জানেন, কোন মহিলার মুখে যে ভাব থাকে সেটা তার জাঁকজমকপূর্ণ দেহের পোষাকের চেয়ে ঢের বেশি গুরুত্বপূর্ণ। (একটা কথা বলি, আপনার স্ত্রী যখন কোন ফার কোট কিনতে চাইবেন তখন
এ কথাটা মনে রাখবেন।) . চার্লস্ শোয়াব একবার আমায় বলেন তার হাসির দাম দশ লক্ষ ডলারেরও বেশি। কথাটা তিনি একটুও বাড়িয়ে বলেন নি। কারণ শোয়বের ব্যক্তিত্ব, তাঁর আকর্ষণ,মানুষকে চট করে ভালো লাগানোর ক্ষমতাগুলোই তার অস্বাভাবিক উন্নতির মূল ছিল। তাঁর ব্যক্তিত্বের মাধূর্যের মধ্যে ছিল তাঁর বিজয়ী হাসি।
একবার আমি মরিস শেভালিয়েরের সঙ্গে সারা বিকেলটা কাটাই–আর সত্যি বলতে কি আমি সম্পূর্ণ হতাশ হই। গম্ভীর, অন্ধকার মুখ ভদ্রলোককে যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে আলাদাই লেগেছিল–যতক্ষণ না তিনি হাসলেন। তখনই মনে হলো যেন মেঘের মধ্য দিয়ে একফালি সোনাঝরা রোদের হাসি। তাঁর ঐ হাসি না থাকলে মরিস শেখভালিয়ের বোধ হয় প্যারীতে তাঁর বাবা বা ভাইদের মতই কাঠের আসবাবপত্র বানানোর কাজেই থেকে যেতেন।
কোন কথার চেয়ে কাজের মধ্য দিয়েই মনের ভাব বেশি প্রকাশ পায় আর কোন হাসির মধ্যে জেগে ওঠে এই কথাটাই আমি আপনাকে পছন্দ করি। আপনাকে দেখে খুব খুশি আর আনন্দিত হলাম।