(৪) প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণার তলায় দাগ দিন।
(৫) প্রতি মাসে বইটি পর্যলোচনা করুন।
(৬) সুযোগ পেলেই নীতিগুলো কাজে লাগান। আপনার দৈনিক সমস্যা মেটানোর কাজে এই বইকে কাজে লাগান।
(৭) নিজের ভুল ধরিয়ে দেবার জন্য প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করুন।
(৮) প্রতি সপ্তাহে কতটা এগোলেন তার হিসাব নিন। কি কি ভুল করলেন আর কি উন্নতি করেছেন তার হিসাব রাখুন।
(৯) নিয়মগুলি কি রকম কাজে লাগালেন তার জন্য ডায়েরি রাখুন। মনে রাখবেন : প্রথমেই অন্য লোকটির মধ্যে বেশ কিছুটা আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে হবে। যে এটা পারে সারা দুনিয়াকেই সে সঙ্গে পেতে পারে। যে পারে না তাকে একা একাই পথ চলতে হবে।
০৪. একাজ করুন সবাই আপনাকে চাইবে
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
একাজ করুন সবাই আপনাকে চাইবে
কী করে বন্ধু পেতে হয় জানার জন্য এ বই পড়ার দরকার আছে কি? পৃথিবীর সব সেরা বন্ধুত্ব অর্জন করা মানুষটির কৌশলটাই একবার পড়ে ফেলুন না কেন? সে কে জানেন না? হয়তো আগামীকালই তাকে দেখবেন রাস্তা দিয়ে আসছেন আর তার সঙ্গে আপনার দেখা হয়ে যাবে। আপনি তার দশ ফিটের মধ্যে আসতেই সে তার ল্যাজ নাড়তে চাইবে। আপনি তাকে থামিয়ে তার পিঠ চাপড়ে আদর করলেই সে প্রায়। লাফিয়ে উঠে জানিয়ে দেবে আপনাকে সে কতখানি পছন্দ করে। আপনিও বুঝতে পারবেন তার এই আনন্দ প্রকাশের মধ্যে কোন রকম উদ্দেশ্য একেবারেই নেই। সে আপনাকে কোন কিছু বিক্রি করতে চায় না বা আপনাকে বিয়ে করতেও চায় না।
কোনদিন কি একবার ভাবতে চেয়েছেন একমাত্র কুকুরকেই জীবন ধারণের জন্য কোন রকম কাজ করতে হয় না? মুরগীকে ডিম পাড়তে হয়, গরুকে দুধ দিতে হয়, কানারি পাখিকে গান গাইতে হয়। কিন্তু কুকুর বেঁচে থাকার জন্যে আপনাকে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই দেয় না।
আমার যখন পাঁচ বছর বয়স আমার বাবা পনের সেন্ট দিয়ে হলদে লোমওয়ালা একটা কুকুর ছানা এনে দিয়েছিরেন। এই কুকুরছানাটা আমার ছোট বেলার সারাক্ষণের আনন্দের সঙ্গী ছিল। প্রত্যেক দিন বিকেলে প্রায় সাড়ে চারটের সময় সে বাগানের সামনে তার সুন্দর চোখ মেলে আমার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকত। আর আমার গলার আওয়াজ শুনতে পেলেই প্রায় বন্দুকের গুলির মত ছিটকে বেরিয়ে এসে দারুণ আনন্দে আমাকে তার খুশীর ভাব জানিয়ে চিৎকার করে চলত।
কুকুরটির নাম ছিল টিপি। প্রায় পাঁচ বছর ধরে সে আমার সারাক্ষণের সঙ্গী ছিল। তারপর এক দুঃখময় রাত্তিরে–কোনদিন সে রাতের কথা ভুলবো না–সে আমার মাত্র দশ ফিটের মধ্যে বাজ পড়ে মারা যায়। টিপির মৃত্যু আমার ছোটবেলার জীবনে একটা চরম শোকাবহ ঘটনা।
মনস্তত্ত্ব সম্বন্ধে তুমি কোন বই পাঠ করো নি টিপি। এর দরকারও ছিল না। কোন ঐশ্বরীক ক্ষমতার মধ্য দিয়েই তুমি জানতে মানুষদের সম্পর্কে আগ্রহ দেখিয়ে দুমাসেই তুমি ঢের বেশি বন্ধু পেতে পারো অথচ দুবছরেও তোমার প্রতি মানুষের আগ্রহ জাগাতে চেষ্টা করে লাভ হবে না।
এ সত্ত্বেও কিন্তু আমি জানি কত লোকেই না অন্য সকলকে তাদের প্রতি আগ্রহান্বিত করার চেষ্টায় প্রাণপাত চেষ্টা করে চলে।
এটা অবশ্যই জানা কথা এতে কোন কাজ হয় না। মানুষ আপনার কিংবা আমার সম্বন্ধে মোটেই আগ্রহান্বিত নয়। তারা কেবল নিজেদের সম্পর্কেই শুধু আগ্রহান্বিত -সকাল, দুপুর, সন্ধ্যে সব সময়েই।
নিউইয়র্ক টেলিফোন কোম্পানী একবার বেশ ধারাবাহিক টেলিফোন কথাবার্তা শুনে হিসেব করার চেষ্টা চালায় সবচেয়ে কোন্ কথাটা বেশি ব্যবহার হয় জানার জন্য। ঠিকই আন্দাজ করেছেন আপনারা-কথাটা হলো ‘আমি’ ‘আমি’ ‘আমি’ …. হ্যাঁ, ‘আমি’ এই সর্বনামটাই ৫০০ টেলিফোনের কথাবার্তায় প্রায় ৩৯৯০ বার ব্যবহার হয়। ভাবুন শুধু ‘আমি’, ‘আমি’, ‘আমি’ ….
যে গ্রুপ’ ছবিতে আপনিও আছেন সেটা হাতে নিয়ে সবার আগে কাকে দেখার চেষ্টা করেন বলুন তো?
আপনি যদি ভেবে থাকেন লোকে আপনার প্রতি আগ্রহান্বিত তা হলে এই প্রশ্নটার জবাব দিন : ‘আপনার আজ রাতে যদি মৃত্যু হয় তাহলে কতজন লোক আপনার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আসবে?’
.
লোকে কেন আপনার সম্পর্কে আগ্রহী হবে, প্রথমে তার সম্পর্কে আপনি যদি আগ্রহী না হন? এবার একটা পেন্সিল হাতে নিয়ে আপনার উত্তরটা চটপট লিখে ফেলুন :
আমরা যদি কেবল লোককে আমাদের নিজেদের কথা বলে আগ্রহী করার চেষ্টা করি, তাহলে কখনই সত্যিকার কোন বন্ধু পাবো না। বন্ধু, সত্যিকার বন্ধু এভাবে পাওয়া যায় না।
নেপোলিয়ান এইভাবে চেষ্টা চালিয়েছিলেন। জোসেফাইনের সঙ্গে শেষ সাক্ষাঙ্কারে তিনি বলেছিলেন : ‘জোসেফাইন, মানুষ ভাগ্যবান হতে পারে আমি তাই হয়েছি, তবুও ঠিক এই মুহূর্তে, সারা দুনিয়া একমাত্র তুমিই একজন, যার উপর নির্ভর করতে পারি।’ ঐতিহাসিকদের সন্দেহ আছে নেপোলিয়ান জোসেফাইনের উপরেও আস্থা রাখতে পেরেছিলেন কি না।
ভিয়েনার বিখ্যাত মনস্তত্ত্ববিদ অ্যালফ্রেড অ্যাডলার ‘হোয়াট লাইফ সুড মীন টু ইউ’ নামে একটা বই লিখেছিলেন। বইটাতে তিনি লিখেছেন : যে বিশেষ লোক অন্যদের সম্পর্কে আগ্রহী হতে চায় না সে দুনিয়ায় জীবন কাটাতে সবচেয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হয় আর অন্যকেও আঘাত দেয়। এই ধরণের মানুষ থেকেই সব রকম মানবিক ব্যর্থতা জন্ম নেয়।