(৬) বার্নার্ড শ একবার বলেছিলেন : কোন মানুষকে কিছু শেখাতে চাইলে সে কিছুতেই শিখবে। শ ঠিকই বলেছিলেন। যেহেতু শেখা ব্যাপারটা ব্যবহারিক। আমরা কাজ করতে করতেই শিখি। অতএব, এই বই থেকে যে নিয়মগুলো আপনি শিখতে চান সেগুলো সম্বন্ধে কিছু করার চেষ্টা করুন। সুযোগ পেলেই নিয়মগুলো কাজে লাগান। তা না করলে খুব তাড়াতাড়ি সেগুলো ভুলে যাবেন। যে জ্ঞান কাজে লাগানো যায় তাই কেবল মনে থাকে।
এই উপদেশগুলো আপনি হয়তো সবসময় কাজে লাগাতে গিয়ে অসুবিধা বোধ করতে পারেন। আমি এটা জানি, কারণ বইটা আমরই লেখা আমি নিজে প্রায়ই যা বলেছি তার সব প্রয়োগ করতে অসুবিধা বোধ করি। উদাহরণ হিসেবে বলছি, আপনি যখন অসন্তুষ্ট হন তখন অপরের সমালোচনা করেন, কিন্তু তার মন বুঝতে কখনও চেষ্টা করেন না। অপরের দোষ খুঁজে বার করা প্রশংসা করার চেয়ে ঢের সহজ। আপনি যা চান সেটার সম্বন্ধে বলা খুব সহজ, কিন্তু অপরে কি চায় সেটা বুঝে ওঠা অনেকটা কঠিন। এরকম আরও আছে। অতএব এই বই পড়ে চলার ফাঁকে, মনে রাখবেন যে আপনি কেবল খবরাখবর সংগ্রহ করছেন, আপনি চাইছেন নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে। হ্যাঁ, আপনি নতুন জীবনবেদ গড়ে তুলতে চলেছেন। এজন্য চাই সময়, ধৈর্য আর প্রাত্যহিক প্রয়োগ।
অতএব এই পাতাগুলো অনবরত দেখুন। এটাকে জনসংযোগের ক্ষেত্রে একটা ব্যবহারিক বই হিসেবেই ভাবতে আরম্ভ করুন–আর যখনই আপনি কোন বিশিষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হবেন–যেমন কোন শিশুর সঙ্গে ব্যবহার, আপনার স্ত্রীকে স্বমতে আনা বা কোন অসন্তুষ্ট মক্কেলকে সন্তুষ্ট করা–তখনই স্বাভাবিকভাবে চট করে যে ভাবনা আসে সেটা করবেন না। তাতে সাধারণত ভুলই করা হবে। এর বদলে এ বইয়ের পাতাগুলো উল্টে যেখানে লাইনের তলায় দাগ দিয়ে রেখেছেন সেগুলো একটু দেখে নিন। তারপর ওই নতুন পদ্ধতি কাজে লাগান, দেখবেন তাতে যাদুর মত কাজ হচ্ছে।
(৭) আপনার স্ত্রী, ছেলে বা কাজের সহকর্মীকে প্রত্যেক দিন আপনি এবইয়ের নিয়ম ভঙ্গ করছেন দেখিয়ে দিলে, তাদের আপনি এক ডলার করে দেবার ব্যবস্থা করুন। এই নিয়মগুলো আয়ত্ত করার ব্যাপারটা একটা খেলার পর্যায়ে এনে ফেলুন।
(৮) ওয়াল স্ট্রীটের কোন এক বিখ্যাত ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট আমার ক্লাসে একবার বর্ণনা করেছিলেন আত্ম উন্নতির জন্য তিনি কী রকম চমৎকার এক পথ অবলম্বন করতেন। ভদ্রলোক ছেলেবেলায় তেমন লেখাপড়ার সুযোগ পাননি, তা সত্ত্বেও তিনি আমেরিকার একজন বিখ্যাত অর্থ বিনিয়োগকারী। তিনি স্বীকার করেন যে, তাঁর সাফল্যের জন্য দায়ী তার নিজেরই আবিষ্কার করা এই পদ্ধতি। তিনি যা করতেন তা হল এই রকম। যতটা আমার মনে আছে তার নিজের কথাতেই জানাচ্ছি :
বছরের পর বছর আমি রোজ আমার যে সব সাক্ষাৎকার ঘটত তার একটা বিবরণ লিখে রাখতাম। আমার পরিবারের লোকজন শনিবারের রাতে আমার জন্য কোনরকম পরিকল্পনা রাখত না, কারণ তারা জানত শনিবার আমি কাটাই আত্ম-সমীক্ষা আর সমালোচনার মধ্য দিয়ে নিজেকে জানার চেষ্টা করি। নৈশভোজের পর আমি সেই দেখা সাক্ষাতের বিবরণ লেখা বইটা খুলে সারাদিনের সাক্ষাৎ আলোচনা, সভা ইত্যাদি নিয়ে সমস্ত সপ্তাহের ব্যাপারটা পড়ে ফেলি। তারপর নিজেকে প্রশ্ন করি :
“ওই দিনে কি ভুল করেছি?”
“কোন্ কাজটা আমি ঠিক করেছি এবং আরও ভালোভাবে কাজটা কেমন করে করতে পারতাম?”
“ওই অভিজ্ঞতা থেকে কি শিক্ষা পেতে পারি?”
‘আমি প্রায়ই দেখতে পেয়েছি ওই সমালোচনায় আমি দুঃখই পেয়েছি। আমার নিজের ভুল দেখে আমি প্রায়ই অবাক হয়েছি। অবশ্য, বছর ঘুরে চললে দেখছি এরকম ভুলের সংখ্যা কমে এসেছে। মাঝে মাঝে এই রকম বিচার করার পর নিজেকেই আমার প্রশংসা করতে ইচ্ছে জেগেছে। এই রকম আত্মবিশ্লেষণ, আত্মসমালোচনা বছরের পর বছর করার ফলে অন্য সব কিছুর চেয়ে আমার ঢের বেশি উপকার হয়েছে।
‘এটা আমায় কোন সিদ্ধান্ত নিতে আমার ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে–আর এটা জনসংযোগের কাজে আমাকে দারুণভাবে সাহায্য করেছে। এর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কিছু আমি ভাবতে অপারগ।’
আপনিও এই রকম পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে, এই বইয়ের নীতির ব্যবহারিক প্রয়োগ করুন না কেন? এটা করলে দুটো ফল লাভ হবে।
প্রথমত, আপনি নিজেকে বেশ অদ্ভুত আর অমুল্য কোন শিক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে জড়িত দেখতে পাবেন।
দ্বিতীয়ত, আপনি দেখতে পাবেন মানুষের সঙ্গে মেলামেশার কাজে আপনার দক্ষতা বর্ষাকালের চারাগাছের মতই হুহু করে বেড়ে যাচ্ছে।
(৯) একটা ডায়েরি লেখার অভ্যাস করুন-যে ডায়েরিতে আপনি আপনার এই নিয়ম মেনে চলায় প্রাপ্ত সাফল্যের হিসাব রাখবেন। খুব স্পষ্ট ভাবেই লিখবেন। এতে দেবেন নাম, তারিখ, ফলাফল ইত্যাদি। এরকম তালিকা রাখার ফলে আরও কাজ করার প্রেরণা পাবেন। বেশ কয়েক বছর পরে ডায়েরীর পাতায় একবার যখন চোখ বুলিয়ে দেবেন তখন কি চমৎকার তৃপ্তিই না পাবেন।
এই থেকে সবচেয়ে বেশি ফল পেতে গেলে এই কথাগুলো মনে রাখবেন : (১) মানবিক সম্পর্কের নীতির সম্বন্ধে দক্ষতা অর্জনের জন্য এক গভীর আকাক্ষা গড়ে তুলুন।
(২) পরবর্তী পরিচ্ছেদ পাঠ করার আগে প্রতিটি পরিচ্ছেদ দুবার পড় ন।
(৩) পড়ে চলার ফাঁকে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন প্রতিটি উপদেশ কিভাবে কাজে লাগাতে পারেন।