বাচ্চা মেয়েটি ওর মাকে নকল করতে ভালোবাসত। সে সব সময়েই নিজেকে মা-র মত মস্ত বড় হয়ে গেছে বলে ভাবতে চাইতো। অতএব ওর বাবা মা একদিন তাকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে প্রাতরাশ বানাতে দিলেন। আর ঠিক মনস্তাত্ত্বিক সময়টাতে মেয়েটির বাবা রান্নাঘরে ঢুকে পড়লেন, সে তখন খাবার নাড়াচাড়া করতে করতে বলে উঠল : ‘ওঃ দেখ বাবা, আমি আজ সকালের জন্য মল্টেক্স বানাচ্ছি।’
এরপর সেদিন সকালে তাকে খাওয়ানোর জন্য একটুও কষ্ট পেতে হল না। সে সবই খেয়ে নিল কারণ আজ তার আগ্রহ জেগেছিল। সে নিজের সম্বন্ধে বেশ গর্ববোধ করতে আরম্ভ করেছিল। নিজেকে জাহির করার একটা উপায় মেয়েটি পেয়ে যায় খাবার বানানোর মধ্যে দিয়ে।
উইলিয়াম উইন্টার একবার বলেছিলেন : নিজেকে প্রকাশ করা মানুষের চরিত্রের একটা প্রধানতম দিক। আমরা ব্যবসার ব্যাপারে এই মনস্ততু কেন কাজে লাগাতে পারি না? যখন কোন একটা চমৎকার ধারণা কিংবা ভাল কাজ কররবার ইচ্ছা আমাদের মাথায় খেলে যায়, তখন তা অন্য লোককে দিয়ে চিন্তা করিয়ে নিলেই হয় যে, এই কাজ করবার ইচ্ছা তাদের মাথা থেকে বেরিয়েছে। সে তখন সেটা তার নিজের বলেই ভাবতে চাইবে, আর এতেই সে কাজ করতে বিশেষভাবে আগ্রহান্বিত হবে।
মনে রাখবেন : প্রথমেই অন্য লোকটির মধ্যে বেশ কিছুটা আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে হবে। যে এটা পারে সারা দুনিয়াকেই সে সঙ্গে পেতে পারে। যে পারে না তাকে একা একাই পথ চলতে হবে।’
.
এই বই থেকে সবচেয়ে বেশি উপকার পেতে হলে এই ন’টি পরামর্শ মেনে চলবেন।
(১) আপনি যদি এই বইটি থেকে সবচেয়ে বেশি কিছু চান তাহলে একটি অপরিহার্য কাজ করতেই হবে। সেটা অন্য যে কোন রকম আইন, নীতি বা নিয়মের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা এমনই অপরিহার্য যে আপনার হাজার হাজার নিয়ম জানা থাকলেও কোন কাজ হবে না। অন্যদিকে আপনার এই রাজকীয় জিনিসটি যদি থাকে তাহলে এই বইয়ের পরামর্শ না দিয়েই আশ্চর্যজনক ফল পেতে পারবেন।
সেই যাদুকরী ব্যাপারটা কি রকম? সেটা হলো এই : গভীর আর আন্তরিকভাবে শেখার আগ্রহ এবং মানুষের সঙ্গে ব্যবহারের কাজে নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রবল আকাঙ্ক্ষা।
এরকম আকাক্ষা বাড়ানোর কাজটা কিভাবে গড়ে তোলা যাবে? এটা করা সম্ভব অনবরত নিজেকে বোঝান এই নীতিগুরো আপনার কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। নিজের মনেই এঁকে দেখতে থাকুন একাজে দক্ষতা অর্জন করলে কিভাবে আপনি সামাজিক আর অর্থকরী লাভের কাজে সাফল্য পেতে পারবেন। বার বার আপনার নিজেকেই বলুন : ।আমার জনপ্রিয়তা, আমার সুখ আর আমার আয় নির্ভর করে মানুষের সঙ্গে আমার ব্যবহার করার দক্ষতারই উপর।
(২) প্রতিটি পরিচ্ছেদে দ্রুত একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে মনে মনে একটা ধারণা করে ফেলুন। এরপরেই আপনার লোভ জাগবে পরেরটাতে দ্রুত এগুনোর জন্য। কিন্তু তা করবেন না। শুধু মানসিক আনন্দের জন্যই যদি পাট করেন তাহলে আলাদা কথা। কিন্তু জনসংযোগে দক্ষতা বাড়ানোর জন্যই যদি পাঠ করতে চান তাহলে প্রতিটি পরিচ্ছেদ বেশ ভাল করে বারবার পড় ন। শেষ পর্যন্ত দেখতে পাবেন তাতে সময় বাঁচান এবং ফললাভ উভয়ক্ষেত্রেই দারুণ কাজ হয়েছে।
(৩) পড়তে পড়তে মাঝেমাঝে এটু থেমে যা পড়লেন সেটা সম্পর্কে ভাবতে থাকুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন প্রতিটি উপদেশ কোথায় কখন কিভাবে কাজে লাগাতে পারেন। এরকম ভাবে পড়লেই সবচেয়ে বেশি কাজ পাবেন তাতে সন্দেহ নেই।
(৪) পড়ার সময় লাল রঙের কোন পেন্সিল বা পেন রাখবেন, যাতে পড়তে পড়তে কোন উপদেশ যদি দেখতে পান সেটা কাজে লাগাতে লাল কালির দাগ দিয়ে চিহ্নিত করুন। যদি সেই পরামর্শ বা উপদেশ খুবই ভালো মনে হয় তাহলে তার তলার লাইন টেনে পাশে চারটে তারা চিহ্ন X X X X দিন। লেখার তলায় লাইন আর এই রকম তারা চিহ্ন এইটিকে আরও আগ্রহের করে তোলে। তাছাড়া আবার পড়ার কাজেও সুবিধা হয়।
(৫) আমি একজন ভদ্রলোককে চিনি যিনি পনের বছর ধরে বিরাট এক বীমা প্রতিষ্ঠানের অফিসের ম্যানেজার ছিলেন। তিনি প্রতি মাসে তার প্রতিষ্ঠান সে সমস্ত বীমার চুক্তি করে তার সব পড়ে ফেলতেন। হ্যাঁ, তিনি একই চুক্তিপত্র মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পড়ে যেতেন। কিন্তু কেন? কারণ তিনি তার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে জেনেছিলেন চুক্তির শর্তাবলী এইভাবেই তিনি মনে রাখতে পারবেন।
আমি একসময় প্রায় দুবছর ব্যয় করি জনগণের সামনে বক্তৃতা দেবার উপর একখানা বই লিখতে তা সত্ত্বেও কিন্তু ওই বইটাতে কি লিখেছি মনে করার জন্য আমাকে প্রায়ই সে বইয়ের পাতা উল্টে দেখতে হত। কি রকম দ্রুততায় যে আমরা সব ভুলে যাই ভাবলে অবাক হতে হয়।
অতএব এ বইটি থেকে যদি সত্যিকার চিরকালীন কোন উপকারে পেতে চান, তাহলে মনেও ভাববেন না যে একবারের মত শুধু পড়ে ফেললেই যথেষ্ট হবে। বেশ ভাল করে পড়ে ফেলার পর প্রতি মাসে বেশ ভাল করে আপনাকে কয়েক ঘন্টা আবার এই বইয়ের সব কিছু আলোচনা করতে হবে। বইটা আপনার ডেস্কে চোখের সামনে রেখে দিন। প্রতিদিন সময় পেলেই একটু চোখ বুলিয়ে নেবেন। প্রতিদিন নিজেকে বোঝাতে চান আপনার নিজের উন্নতি করার আশাতিরিক্ত সম্ভাবনা রয়েছে। মনে রাখবেন, এই পরামর্শ আর নিয়মগুলো বারবার পড়া আর আলোচনার মধ্য দিয়েই সেগুলো সহজ হয়ে আসবে। এছাড়া আর কোন উপায় নেই।