এটা বড়ই খারাপ। এটা কেমন করে এড়ানো যায়? এটা সম্ভব আপনাদের মাল বিকেলের আগেই জেটিতে পৌঁছে দেওয়া। এতে সব কাজ দ্রুত হতে পারবে, আপনাদের মাল আমাদের নজরে থাকবে আর আমাদের কর্মচারিরাও তাড়াতাড়ি রাতের আগে বাড়ি ফিরে নিজেদের তৈরি সুস্বাদু ম্যাকারোনি আর নুডলস্ সহযাগে নৈশভোজ সারবে।
আমার অনুরোধ এচিঠিকে কোন অভিযোগ বলে ভাববেন না, আর এটাও ভাববেন না আপনাদের ব্যবসা চালানোর ক্ষেত্রে মাথা গলাচ্ছি।
যখনই আপনারা মাল পাঠান না কেন আমরা আনন্দের সঙ্গেই যথাসাধ্য আপনাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবো।
আপনারা অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ। দয়া করে এ চিঠির উত্তর দিতে চাইবেন না।
আপনার বিশ্বস্ত
জে–বি–সুপারিন্টেন্ডেন্ট।
আজকের দিনে হাজার হাজার বিক্রেতা রাস্তার ধারে ক্লান্ত, ভগ্ন মনোবল অল্প মাইনেতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কেন? তার কারণ তারা সর্বদাই নিজেরা কি চায় সে কথাই ভেবে চলে। তারা উপলব্ধিই করতে পারে না আপনি বা আমি কিছু কিনতে আগ্রহী নই। আমরা যদি চাইতাম তাহলে দোকানে গিয়ে কিনে আনতাম। কিন্তু আমি বা আপনি চিরায়ত পথেই নিজেদের সমস্যা সমাধান করতে ব্যস্ত। অবশ্য কোন বিক্রেতা যদি আমাদের দেখিয়ে দিতে পারে তার সাহায্য বা জিনিস আমাদের সমস্যা সমাধানে কতটা সাহায্য করতে পারবে তাহলে তাকে আমাদের কাছে বিক্রি করতে হবে না। আমারাই কিনব। একজন খরিদ্দার এটাই ভাবে সে নিজের থেকে ক্রয় করছে–তাকে বিক্রি করা হচ্ছে সে ভাবতে চায় না।
এ সত্ত্বেও কিন্তু বহু লোকই সারা জীবন বিক্রীর চেষ্টায় কাটাতে চায়–তারা সব কিছু ক্রেতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চায় না। যেমন উদাহরণ দিচ্ছি–আমি গ্রেটার নিউ ইয়র্কের ফরেস্ট হিল এলাকাতে থাকি। একদিন যখন স্টেশনে ছুটছিলাম তখন একজনের সঙ্গে আমার দেখা হয়–লোকটি বহুদিন যাবত লং আইল্যাণ্ডে জমির কেনা বেচা করে কাটিয়েছেন। ফরেস্ট হিল এলাকা তার ভালই জানা ছিল তাই আমি তাড়াতাড়ি প্রশ্ন করলাম আমার বাড়িটি কি দিয়ে বানান-ধাতব পাত না ফাঁপা টালি। সে জানাল ওটা তার জানা নেই, বরং তিনি যা বললেন সেটা আমার আগে তেকেই জানা। অর্থাৎ আমি নিজেই যেন ফরেস্ট হিলস গার্ডেন অ্যাসোসিয়েশনকে ফোন করে জানতে পারি। পরের দিন সকালে লোকটির কাছ থেকে একটা চিঠি পেলাম। চিঠিতে আমি যা জানতে চেয়েছিলাম সেটাই তিনি দিয়েছিলেন কি? সেটা তিনি ষাট সেকেণ্ডের মধ্যে একটা টেলিফোন করেই জানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি। তিনি বরং লিখেছিলেন আমি নিজেই টেলিফোন করে অ্যাসোসিয়েশন থেকে জেনে নিই এবং চিঠির শেষে তিনি অনুরোধ করেছিলেন আমি যেন আমার বীমা সংক্রান্ত ব্যাপারটা তাকেই দেখতে দিই।
আমাকে সাহায্য করতে তার কোন আগ্রহ ছিলো না। তিনি শুধু নিজেকেই সাহায্য করতে চাইছিলেন। আমার উচিত ছিল ওকে ভ্যাস ইয়ং-এর চমৎকার বই, ‘এ গো গিভার’ আর ‘এ ফরচুন টু শেয়ার’ পড়তে দেওয়া। তিনি বই দুটো পড়ে বইয়ের বক্তব্য অনুসরণ করলে আমার বীমার কাজ করার চেয়ে হাজার গুণ বেশি লাভ করতেন।
পেশাদার মানুষরাও একই ভুল করে থাকেন। বেশ কয়েক বছর আগে আমি ফিলাডেলফিয়ার একজন নামী নাক আর গলা বিশেষজ্ঞর কাছে যাই। লোকটি আমার টনসিলটা না দেখেই প্রশ্ন করেছিলেন আমার কাজকর্ম কি। আমার টনসিলের আকার নিয়ে তার কোন মাথা ব্যথা ছিল না। তার আগ্রহ ছিল আমার টাকা দেবার ক্ষমতা সম্বন্ধে। আমাকে কতটা সাহায্য করতে পারেন না ভেবে তিনি ভাবছিলেন আমার কাছ থেকে কত আদায় করতে পারবেন। ফল দাঁড়ালো তিনি কিছুই পেলেন না। আমি তার ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলাম তার ব্যক্তিত্ব অভাবের নিন্দা করে।
দুনিয়াটাই এইরকম মানুষে ভর্তি, শুধু লোভী আর স্বার্থপর। তাই নিঃস্বার্থভাবে অন্যের সাহায্যে তৎপর এমন লোক বড় কম, অথচ অন্যের চেয়ে তাদের প্রচুর সুবিধা আছে। তার প্রতিযোগিতা থাকে সামান্য। ওয়েন ডি. ইয়ং বলেছিলেন : ‘যে ব্যক্তি অন্যের জায়গায় নিজেকে ভাবতে পারেন, অন্যের ভাবনা নিজের করতে পারেন ভবিষ্যতে তার ভাবনা থাকে না।
এই বইটি পাঠ করার পর আপনি যদি শুধু একটা জিনিসই পান, শুধু বেশি করে অন্যের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে চিন্তা করা, এবং তার দৃষ্টিভঙ্গিকে দেখা–এই একটামাত্র জিনিস বইটা থেকে পেলে সেটাই হবে আপনার জীবনের একটা সোপান।
.
বেশিরভাগ লোকই কলেজে যান ভার্জিল পাঠ করতে আর ক্যালকুলাসের রহস্যের মত বিষয়ে ওস্তাদ হতে। তারা নিজেদের মন কিভাবে কাজ করে আদৌ ভাবেন না। যেমন ধরুন, আমি একবার ঠিক মত বক্তৃতা করার বিষয়ে একটা শিক্ষার ব্যবস্থা করি–এটা করা হয় নিউ জার্সির নেওয়ার্কের ক্যারিয়ার কর্পোরেশনে কাজে যোগদানের জন্য তৈরি কিছু কলেজে ছাত্রের জন্য। তাদের কাজ হল তাপ নিয়ন্ত্রণ জিনিসপত্র তৈরি। তাদের একজন অন্যান্যদের বাস্কেটবল খেলার জন্য আহ্বান জানাচ্ছিল। তার নিজের কথাটা ছিল এই রকম : আমার ইচ্ছে আপনারা বেরিয়ে এসে বাস্কেটবল খেলতে চলুন। আমার খেলাটা ভালো লাগে, কয়েকবার জিমনাসিয়ামে গেলেও খেলতে পারিনি তোক ছিল না বলে। কিছুদিন আগে দু’তিনজন মিলে বল ছুঁড়তে গিয়ে চোখটা প্রায় কানা হবার মত হয়েছিল। আমার ইচ্ছে আগামীকাল আপনারা সবাই চলুন বাস্কেটবল খেলা যাবে, আমার এটা খেলতে খুব ইচ্ছে।