(নথীভুক্ত করবো! আপনাদের স্নায়ুর জোর আছে বটে! আপনার বড় বড় কথায় আমার নিজেকে একেবারে অপদার্থ মনে হচ্ছে তার উপর আপনি আবার আমাদের তালিকায় আপনাকে নথীভুক্ত করতে বলছেন। লেখার সময় একবার দয়া করে কথাটা বলারও প্রয়োজন বোধ করছেন না।)।
এই চিঠির দ্রুত প্রাপ্তি স্বীকার করে আপনাদের বর্তমান কাজের ধারা জানালে উভয়ের পক্ষেই সেটা কাজের হবে।
(মূর্খ! একখানা সস্তাদরের, বাজে কাগজে লেখা চিঠি পাঠিয়াছেন-চৈত্রের ঝরাপাতার মত একখানা চিঠি-তার উপর আমি যখন বন্ধক, ব্লাড প্রেসার, পোকার উৎপাত নিয়ে ব্যতিব্যস্ত তখন আবার বলার স্পর্ধা দেখিয়েছেন আপনার ওই বাজে চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করতে–তাও আবার দ্রুত’! আপনার কি জানা আছে আপনার মত আমিও ব্যস্ত–অন্ততঃ আমি সেটাই ভাবতে চাই? আর কথাটা যখন উঠেছে তখন বলি এমন লাট সাহেবের মত হুকুম করার সাহস কোথায় পেলেন? আপনি বলেছেন ‘এটা উভয়ের পক্ষেই কাজের হবে। শেষ পর্যন্ত তাহলে আমার মনটা বুঝতে পেরেছেন দেখছি। তবে আমার কি সুবিধা হবে সে ব্যাপারটা ধোঁয়ার মতই রয়ে গেছে।)
আপনার বিশ্বস্ত,
জন ব্ল্যাঙ্ক
ম্যানেজার, বেতার দপ্তর।
‘পুনশ্চ : ভিতরে পাঠানো ব্ল্যাঙ্কভিল পুস্তিকাটি আপনার আগ্রহ জাগাতে পারে, আর এটা আপনি বেতারে ঘোষণার ব্যবস্থাও করতে পারবেন।
(শেষ পর্যন্ত পুনশ্চতে যা লিখেছেন তাতে আমার কোন সমস্যার সমাধান হতেও পারে। আপনি এটা দিয়েই তো চিঠিটা শুরু করতে পারতেন–কিন্তু কি লাভ? যে কোন বিজ্ঞাপন দপ্তরের লোক এমন চিঠি লিখলে তার মস্তিষ্কের সুস্থতা নিয়ে সন্দেহ জাগে। আমাদের ইদানিং কালের কাজের বিবরণ লেখা চিঠি পেয়ে আপনার কোন কাজই হবে না–আপনার দরকার হলো আপনার থাইরয়েড গ্ল্যাণ্ডের জন্য খানিকটা আয়োডিন।)
.
এখন ধরুন বিজ্ঞাপন ব্যবসাতেই জীবন কাটাচ্ছেন আর মানুষকে প্রভাবান্বিত করতে পারেন বলে আত্মশ্লাঘা আছে এমন একজনের কাছ থেকেই যদি এরকম চিঠি আসে তাহলে আমাদের মাংসওয়ালা, রুটিওয়ালা বা কার্পেট সারাইওয়ালা কাছ থেকে কেমন আশা করবো?
আর একখানা চিঠির উদাহরণ দেখুন। এ চিঠিটা লিখেছিলেন এই বিষয়ের একজন ছাত্রকে জনৈক মালপরিবহণ কোম্পানীর সুপারিন্টেন্ডেন্ট। যাকে লেখা হয়েছিল তার মনে এটা কি রকম প্রভাব ফেলেছিল? আগে চিঠিটা পড়ুন তারপর বলছি।
‘এ জেরেগাস সন্স ইনকরপোরেটেড
২৮, ফ্রন্ট স্ট্রীট,
ব্রুকলীন. এন. ওয়াই।
মিঃ এডওয়ার্ড ভার্মিলেন সমীপেষু।
মহাশয়,
আমাদের বহির্গামী রেলপথের মাল গ্রহণ কেন্দ্রে অপরাহ্নে মাল পাঠানোর জন্য বিশেষ অসুবিধা হচ্ছে। এই সবের ফলে দেখা দিচ্ছে ভিড়, আমাদের কর্মীদের ওভারটাইম, ট্রাকের জন্য দেরি আর কোন কোন ক্ষেত্রে মাল পাঠানোয় দেরি হয়ে যাচ্ছে। ১০ই নভেম্বর আপনাদের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৫১০ পেটি মাল আসে প্রায় বিকেল ৪-২০ মিনিটে।
আমরা এই সব কাজের আর দেরীতে মাল পরিবহণের অবাঞ্ছনীয় প্রতিক্রিয়ার হাত থেকে রেহাই পেতে আপনার সহযোগিতা কামনা করি। আমরা কি এই অনুরোধ জানাতে পারি এরপর যখন এই রকম বেশি পরিমাণে মাল পাঠাবেন তখন সেগুলি ট্রাকে করে বিকেলের আগেই পাঠাবেন বা অন্ততঃ কিছু সময় আগেই পাঠাবেন?
এই রকম ব্যবস্থায় আপনাদের যে লাভ হবে তাহলো আপনাদের ট্রাক আরও দ্রুত খালি হতে পারবে, আর আমরা এ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে আপনাদের ট্রাক সঙ্গে সঙ্গেই খালি করে দিতে পারবো।
আপনার অতি বিশ্বস্ত,
জে-বি
সুপারিন্টেন্ডেন্ট।
চিঠিটা পড়ার পর এ জেরেগাস কোম্পানীর সেলস ম্যানেজার মিঃ ভার্মিলেন সেটা আমার কাছে নিচের মন্তব্যসহ পাঠিয়ে দেন :
‘যা চাওয়া হয়েছিল এ চিঠিটায় ঠিক তার উল্টো ফল হয়। চিঠিটা শুরু করা হয়েছে মাল খালাস ইত্যাদির অসুবিধা জানিয়ে, তবে বলতে গেলে এ নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমাদের কোন অসুবিধার কথা চিন্তা ভাবনা ছাড়াই অনুরোধ জানানো হয়েছে যে আমরা সহযোগিতা করলে ট্রাক দ্রুত খালাস করে ঐদিনেই মাল পাঠানো হবে।
‘অন্যভাবে বলতে গেলে আমাদের যে ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ আছে সেটা সবার শেষে লেখা হয়েছে আর চিঠিটা সহযোগিতার না হয়ে শত্রুতাপূর্ণই উঠেছে।
আসুন এবারে দেখা যাক এচিঠিটা আবার নতুন করে লিখে আরও ভালো করা যায় কিনা। আমাদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই। হেনরি ফোর্ড যেমন বলেছিলেন : সব সময় অপরজনের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করবেন, সঙ্গে নিজেদেরও।‘
নিচে চিঠিটা ঘুরিয়ে লেখার উদাহরণ রাখছি। এটাই হয়তো সবচেয়ে ভালো নয়, তবে অবশ্যই কিছুটা উন্নত, কী বলেন?
মি. এডওয়ার্ড ভার্মিলেন,
অ/এ. জেরেগাস সন্স ইনকং।
২৮ ফ্রন্ট স্ক্রীট,
ব্রুকলীন, এন. ওয়াই।
প্রিয় মি. ভার্মিলেন,
গত চৌদ্দ বছর যাবৎ আপনার প্রতিষ্ঠান আমাদের একজন ভালো মক্কেল হয়ে আছেন। স্বাভাবতই তাই আপনাদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তাই আপনাদের যা প্রয়োজন সেই দ্রুত পরিচ্ছন্ন। কাজ আমরা করতে প্রস্তুত। যাই হোক আমরা দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি এটা করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব যদি আপনাদের ট্রাক প্রচুর মালসহ বিকেলের অনেক পরে আসে, যেমন এসেছিলো ১০ই নভেম্বর। কেন? তার কারণ অন্যান্য কোম্পানীও বিকেলের দিকে মাল সরবরাহ করে থাকেন। স্বভাবতই এর ফলে ভিড় জমতে থাকে। এর অর্থ হলো অনিবার্য ভাবেই আপনাদের ট্রাক জেটিতে আটকে যায়, আর অনেক ক্ষেত্রে আপনাদের মাল পরিবহণে দেরিও হয়ে যায়।