‘এবার আসুন অসুবিধের ব্যাপারটা দেখা যাক। প্রথমে, আমার কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় না করে আপনাকে তা কমাতে হবে। আসলে এটা আপনাকে মন থেকে একদম মুছে ফেলতে হবে। কারণ যে ভাড়া চাইছেন আমি তা দিতে পারবো না। আমাকে বাধ্য হয়ে অন্য কোথাও বক্তৃতার ব্যবস্থা করতে হবে।
‘এছাড়াও আপনার আর একটা অসুবিধে আছে। এই বক্তৃতা আপনার হোটেলে বহু শিক্ষিত আর সংস্কৃতিবান মানুষ টেনে আনবে। আর সেটা আপনার পক্ষে চমকার বিজ্ঞাপন হবে, তাই না? আসলে, খবরের কাগজে আপনারা যদি ৫০০০ ডলারের বিজ্ঞাপন দেন তাহলেও এতো মানুষকে হোটেল দেখাতে হাজির করতে পারতেন না, আমি এই বক্তৃতার মধ্যে দিয়ে যা পারবো। এটা হোটেলের পক্ষে অনেকখানি, তাই না?
কথা বলতে বলতে আমি অসুবিধা দুটো ঠিক জায়গায় লিখে ফেললাম, তারপর কাগজটা ম্যানেজারের হাতে দিয়ে বললাম, আশা করি সুবিধে আর অসুবিধে দুটোই ভালো করে দেখে তারপর আপনার মতামত আমায় জানাবেন।‘
পরের দিনই একটা চিঠি পেলাম, তাতে আমায় জানানো হয়েছিলো যে আমার জন্য ভাড়াটা তিনশগুণের বদলে মাত্র শতকরা ৫০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। মনে রাখবেন এই ভাগ কামানো হয়েছিল এ ব্যাপারে আমার মনের ইচ্ছে একটুও না জানিয়ে। আমি সারাক্ষণই অন্য জন কি চায় আর পেতে পারে সেটাই ভেবেছি।
মনে করুন স্বাভাবিক মানুষের মতই আমি যদি কাজ করতাম, ধরুন সটান সবেগে ঘরে ঢুকে আমি বলতাম, এভাবে তিনশগুণ ভাড়া বাড়ানোর মানে কি একবার বলবেন? আপনি জানেন যে টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে আর ঘোষণাও করা হয়ে গেছে? তিনশগুণ! হাস্যকর? অসম্ভব! এ টাকা কিছুতেই দেব না!
এতে কি হতো! এটা তর্কের অবকাশ শুরু হতো, বেশ গরম কথাবার্তা চলতো–আর আপনাদের অবশ্যই জানা আছে তর্কের পরিণতি কেমন হয়। তাকে যদি স্বীকার করাতেও পারতাম তার ভুল হচ্ছে, তাহলেও তার অহমিকাবোধই তাকে সব মেনে নিয়েও হার মানাতে দিতো না।
মানবিক সম্পর্ক নিয়ে চমৎকার একটা পরামর্শের বিষয়ে বলছি। কথাটা হেনরি ফোর্ডের। তিনি বলেছিলেন, কারও যদি সাফল্যের গোপন চাবিকাঠি থাকে, তাহলে সেটা থাকে তার অন্যের কথার দৃষ্টিকোণ আর নিজের দৃষ্টিকোণ বুঝে নেওয়ার ক্ষমতার মধ্যে। কথাটা বারবার বলার আর মনে রাখার মতই।
ব্যাপারটা খুবই সরল আর এতোই স্বাভাবিক যে,যে কেউ একবার দৃষ্টি মেলেই এর অন্তরের সত্য দেখতে পারবে, তবুও দুনিয়ার শতকরা ৯০ ভাগ মানুষই শতকরা ৯০ বার এটা আগ্রাহ্য করে।
কোন উদাহরণ চান? তাহলে আগামীকাল সকালে যেসব চিঠি আসবে সেগুলো দেখে নিন–তাহলেই দেখবেন বেশির ভাগই এই সাধারণ বুদ্ধির ব্যাপারটা মানতে চায় না। একটা উদাহরণ নিন : কোন বিজ্ঞাপন এজেন্সীর বেতার দপ্তরের প্রধানের লেখা সারা দেশের নানান অফিসের কাছে। সারা দেশের স্থানীয় বেতার স্টেশনের ম্যানেজারদের কাছে লেখা হয় চিঠিটা (প্রতিটি প্যারাগ্রাফেই আমার নিজস্ব মতামত আমি লিখে দিয়েছি)
.
মিঃ জন ব্ল্যাঙ্ক,
ব্ল্যাঙ্ক ভিল,
ইণ্ডিয়ানা।
প্রিয় মিঃ ব্ল্যাঙ্ক,
বেতার দুনিয়ায় আমাদের কোম্পানী বিজ্ঞাপন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে ইচ্ছুক।
(আপনার কোম্পানী কি চায় তাতে কার মাথা ব্যথা? আমি আমার সমস্যা নিয়েই বিব্রত। ব্যাঙ্ক আমার বাড়ির বন্ধক আগেই বন্ধ করে দিয়েছে। পোকায় সব ফসল নষ্ট করছে, শেয়ার বাজার গতকাল উল্টেছে, আজ সকালে ৮-১৫র গাড়ি ধরতে পারিনি, জোন্সের নাচের অনুষ্ঠানে গতরাতে আমি নিমন্ত্রিত হইনি, ডাক্তার বলছেন আমার ব্লাড প্রেসার খুব বেড়ে গেছে, স্নায়ুর রোগ আর খুশকিও হয়েছে। এরপর কি হবে? আমি দুশ্চিন্তা নিয়ে সকাল বেলা অফিসে আসবো, চিঠিপত্র খুলবো, আর খুলেই দেখবো নিউ ইয়র্কের কোন এক কেউকেটা তার কোম্পানী কি চায় তাই নিয়ে সাতকাহন লিখেছে। ফুঃ। লোকটার যদি ধারণা থাকতো এরকম চিঠি কি রকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তাহলে বিজ্ঞাপন ব্যবসা ছেড়ে সে ঘোড়ার ঘাস কাটা শুরু করতো)।
‘এই এজেন্সী জাতীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে যে টাকা আয় হয় সেটা সবার চেয়ে বেশি। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচী বছরের পর বছর ধরে শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে চলেছে।‘
(আপনারা অনেক বড় আর ধনী, একেবারে চুড়াতেই আপনাদের আসন। তাতে কি আসে যায়? আপনারা জেনারেল মোটর, জেনারেল ইলেকট্রিক আর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে নিয়ে গড়া বিরাট কিছু হলেও আমি তার কানাকড়ি দামও দিই না। আপনার যদি ক্ষুদে চড়ুই পাখির মতও বুদ্ধি থাকতো তাহলে বুঝতে পারতেন আমি কত বড় আর তাতেই আমার আগ্রহ আছে–আপনি কতো বড় তাতে নয়। আপনাদের বিরাট সাফল্যের কথা শুনে আমার নিজেকে দারুণ ছোট আর হীন মনে হয়)।
‘আমরা চাই আমাদের প্রতিষ্ঠান বেতার সম্পর্কে শেষ কথাই হয়ে উঠুক …।
(আপনারা চান। আপনারা আস্ত গর্দভ। আপনারা বা মুসোলিনী বা কিং ক্রসবী কি চান আমার জানতে কণামাত্রও আগ্রহ নেই। আপনাকে শেষবারের মত জানাতে চাই যে আমি নিজে কি চাই তাতেই শুধু আমার আগ্রহ আছে–আর আপনার এই অদ্ভুত চিঠিতে সে কথা আপনি একবারও বলেন নি।)
‘অতএব আপনারা আমাদের প্রতিষ্ঠানকে আপনাদের তালিকায় সাপ্তাহিক বেতার ষ্টেশনের খবরের জন্য নথীভুক্ত করবেন আশা রাখি …।‘